Sunday, August 29, 2021

করোনার ‘অপরাধে’ মৃত্যুর খাতা শূন্য থাকুক https://ift.tt/eA8V8J

সুভাষ চৌধুরী
এমন একটি দিনের প্রত্যাশা ছিল অনেক দিন ধরে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখেছি আজ সারা দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে কতজনের। উপসর্গে মৃত্যু কত জনের। সেই সাথে ভারতের অবস্থা এবং বাংলাদেশে টিকা গ্রহণ পরিস্থিতি কেমন তাও দেখেছি। আর সবচেয়ে বেশি করে দেখতে চেয়েছি সাতক্ষীরার করোনা পরিস্থিতি কেমন। এখানে করোনায় ক’জন মারা গেলেন। ক’জন উপসর্গে প্রাণ হারালেন।

 

আর নমুনা নেওয়া হয়েছে কতজনের। তাদের মধ্যে পজিটিভ ও নিগেটিভ কতো। আর টিকার ফার্স্ট ডোজ , সেকেন্ড ডোজ এবং গনটিকার খবর জানতে আমার আগ্রহ অনেক। এই আগ্রগের মধ্যে চোখের কোনায় জল নিয়ে কেবলই খুঁজেছি কোনো সুখবর, স্বস্তির খবর। কিন্তু তা কেবল হাতড়েই কাটাচ্ছিলাম। সুখবরের দেখাই মিলছিল না। মৃত্যু কখনও শত পার। কখনও দুই শত পার। মৃত্যুর এমন সংখ্যা দেখলেই শুধু কষ্ট হতো। ভাবতাম সেই পরিবারগুলির কি হবে। ভাবনা হতো মহামারি করোনাা আক্রান্ত হলে তো প্রচার হতো রোগী কোনো অপরাধ করেছেন। ছিটকে পড়তো পড়শিরা। সরে থাকতো পরিবারের নিকটজনেরাও। এমন ‘অপরাধী’ হয়ে মৃত্যুর পথ যে কতো ভয়ংকর তা দেশের অগনিত উদাহরন থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়।

 

যশোরের মনিরামপুরের বিধবা হিন্দুনারীর ক্রন্দন বিলাপ আমরা দেখেছি শ্মশানে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গৌরীপুরে দেখলাম স্বামী হারানো নারী নিজেই যেনো আরেক ‘অপরাধী’। পনের ঘন্টা তার মৃত স্বামীর মরদেহ পড়ে থাকলো নির্জন বাড়িতে বিলাপরত বিধবা স্ত্রীর সামনে। আর কুষ্টিয়ায় গভীর রাতে টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে এক বিভীষিকাময় ভীতিকর অন্ধকারে বিধবা স্ত্রী তার স্বামীকে স্পর্শ করে কেবলই বিলাপ করছেন। আর চারদিকে চার পাশে শিয়াল কুকুর লাশ খাবলে খাবার জন্য মারামারি ও পায়তারা করছে। শেরপুরে বাকপ্রতিবন্ধী নারী তার মৃত স্বামীকে নিয়ে ঘরে খিল লাগিয়ে তিনদিন ধরে মাতম করেছেন। তবু আসেনি কেউ সৎকার করতে। এ খবর বাদ পড়েনি সংবাদপত্রের পাতা থেকে। ভারতে সৎকার করার জায়গা না পেয়ে স্বজনের মরদেহ আঁধার রাতে নদীতে ফেলে দিয়েছে পরিবার। এসব দৃশ্য মানবিক হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। তবে তাদের সৎকারে প্রশাসনের তাগিদে কোনো হৃদয়বান মুসলিম অথবা হিন্দু ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ এই বিবেচনায় এসব ‘অপরাধী মরদেহের’ সম্মানজনকভাবে সৎকার করে আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। শিক্ষা দিয়েছে মানবতার।

বাংলাদেশে মৃত্যুর এ মিছিলে আমি হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম। ২০২০ সালেরর ৮ মার্চের পর আমাদের দেশে করোনার দাপট দেখা দেয়। কোনো জেলায় কম কোনো জেলায় বেশি। কোনো জেলায় করোনায় মৃত্যু বেশি উপসর্গে মৃত্যু কম। আবার কোনো জেলায় উপসর্গে মৃত্যু বেশি করোনায় মৃত্যু কম। স্বাস্থ্য বিভাগের এই নৈমিত্তিক পরিসংখ্যান দেখে আমরা যেমন আতংকিত হয়েছি তেমনি টিকা কার্যক্রম শুরু হবার পর থেকে স্বস্তির নিঃশ^াসও ফেলেছি আমরা। কোথাও অক্সিজেন সংকট। কোথাও অক্সিজেন প্রেসার কমে মানব মৃত্যু। কোথাও ন্যাজাল ক্যানোলা নেই। আবার হাসপাতালে বেড নেই, আইসিইউ নেই। পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। করোনা চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট জনবল নেই। সংবাদপত্রের পাতা আর টিভি এমনসব বেদনা দায়ক খবর প্রচার করেছে শত শত বার। আমরা এমন শত ঘটনার মুখোমুখি হলেও চিকিৎসক নার্স এবং অন্যান্য কর্মচারিদের রোগী বাঁচানোর প্রাণান্ত চেষ্টা আমাদের কষ্টকে লাঘব করে দিয়েছে। সার্বক্ষণিকভাবে ডাক্তারের এই প্রচেষ্টাকে আমি বলব তারা মানবিক। তারা সেবা ও মানবতাকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসাবে গ্রহন করেছেন। আর তাই চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৬ জন। জাতি তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮৮ জন। আর করোনা উপসর্গে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় শত। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২৯ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছেন ৭৪০ জন। এই ৫০০ দিনের মৃত্যুর গড়সংখ্যা দৈনিক একজনের বেশি হিসাবে প্রতি চারদিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এই হিসাব দেখিয়ে কোনো পরিবারে স্বস্তি শান্তি দিতে পারেনা। কারণ তারা হারিয়েছেন পরিবারের এমন একজন মানুষকে যার অভাব কোনোদিনই পূরণ হবার নয়।

সাতক্ষীরার করোনা প্রেক্ষাপটের পর আমি বারবার যে দিনটি খুঁজছিলাম সেটি এই ২৯ আগস্ট। স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে এদিন করোনায় মৃত্যুর খাতায় ছিল শূন্য। আর করোনা উপসর্গে মৃতের সংখ্যাও ছিল শূন্য। এদিন ১০১ জনের নমুনা পরিক্ষা করে পজিটিভ পাওয়া গেছে ৪ জনের। আর নিগেটিভ ৯৭ জনের। নতুন করে সাতক্ষীরা মেডিকেলে ২৪ জন ভর্তি হলেও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০জন। মৃত্যুর খাতায় এই শূন্য লেখাটি যেনো অক্ষুণœ থাকে এই প্রত্যাশা আমার, দেশবাসীরও। এমন তিনটি যেনো আসে বারবার। এমন দিন আসুক যেনো কোনো স্বজনের মরদেহ রাত না পোহাতেই হাসপাতাল থেকে বের করে নিতে হয়। এমন দিন না আসুক যেদিন স্বজন হারানোর শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় অন্য স্বজনদের হৃদয়। চোখের জলে যেনো ভাসতে না হয়। আর কোনো মানব সন্তান যেনো করোনা রোগীর মতো ‘অপরাধী’ হয়ে না পড়েন। এমন মৃত্যুহীন সকালের প্রত্যাশায় থাকছি আমি প্রতিদিন। লেখক: সাবেক সভাপতি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব

The post করোনার ‘অপরাধে’ মৃত্যুর খাতা শূন্য থাকুক appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3zu2xYX

No comments:

Post a Comment