সৈয়দ ছাইন বুরহান
সবুজ দরিদ্র বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। দরিদ্র বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন তাকে নিয়ে, সবুজ পড়াশোনায় খুব ভালো। ক্লাসের প্রথম স্থান সবুজই দখল করে থাকে। খেলাধুলাতেও সবুজ খুব ভালো, ক্রিকেট খেলায় সে দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান।
পাড়ার যেকোনো সমস্যা হলে সবুজ সবার আগে ছুটে আসে। সবাই তার বন্ধু। সে সবার সাথে বিনয়ী, ভদ্র ও ন¤্র ব্যবহার করে। তার কোনো বন্ধুর অভাব নেই। কলেজের সব পরীক্ষাতেই সে প্রথম স্থান অধিকার করে রাখে। কলেজের বন্ধুরা সবুজকে বলে“তোর থেকে আমরা পড়ালেখায় আগে উঠতে পারি না।” সবুজ এ কথা শুনে মুচকি হেসে বলে সবই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা।
সবুজের বাবা-মা সবুজকে খুব কষ্ট করে মানুষ করছে। তার বাবা একজন কৃষক এবং মা অন্যজনের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের সব স্বপ্ন সবুজকে ঘিরে। সবুজ ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছে তার বাবা-মা তাকে তাই এনে দিয়েছে। সবুজ তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে ডাক্তার হতে চায়। সে তার পড়াশোনায় আরও বেশি মন লাগিয়েছে। দুই মাস পর তার এইচ.এস.সি. পরীক্ষা। তার বাবা-মা আশা করে আছে সবুজ পরীক্ষায় অনেক ভালো ফলাফল করবে। সবুজের বাবা তাকে আগের রাতে ভাত খাওয়ার সময় বলেছে। বাবা আমরা অনেক গরীব মানুষ আমাদের সব স্বপ্ন তোমাকে নিয়ে তুমি বড় হয়ে একজন ভালো ডাক্তার হতে পারলে আমাদের আর কোনো দুঃখ থাকবে না। সবুজ তার বাবা-মায়ের কথা শুনে বলে তোমরা চিন্তা করোনো ইনশাআল্লাহ আমি একজন বড় ডাক্তার হতে পারবো। সবুজ জানে তার বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা সে।
সবুজ আজ কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ আসিফ নামের একটা ছেলের সাথে তার ধাক্কা লাগে। সবুজ তাকে থামিয়ে বলে, চোখ থাকতে অন্ধ হয়তো একেই বলে ছেলেটা তার দিকে চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে বলে, তুই জানিস আমি কে? সবুজ বলল তুমি ডিআইজি স্যারের ছেলে। আসিফ বলল তাহলে আমাকে আটকানোর সাহস তোর কীভাবে হয়? সবুজ তাকে একটি থাপ্পড় দিয়ে বলল এটা তোর অহংকারের পুরস্কার। আসিফ বলল কাজটা ভাল করসি না। এর ফল তোকে পেতে হবে।
বিকালে সবুজের বাড়ি পুলিশ এলো। সবুজের নামে চুরি, ছিনতাই ও বেআইনি অস্ত্র কারবারির মামলা রয়েছে। নিরঅপরাধ সবুজকে তারা টানতে টানতে জিপে নিয়ে তুলল। সবুজের বাবা-মা যত বলে স্যার ওকে ছেড়ে দেন ও কিছু করে নাই ওকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। পুলিশরা বলে আপনি থানায় আসুন সেখানেই আপনাদের সঙ্গে আমরা কথা বলবো।
পরের দিন খবরের কাগজে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বেআইনি অস্ত্রের সাথে সবুজের ছবি ছাপা হয়। সবুজের বাবা-মায়ের আর কারোর কাছে মুখ দেখানোর মত থাকে না। সবুজকে যখন জেলে ঢোকানো হচ্ছিল তখন সবুজ বলল, আসল অপরাধীদের তো আপনার ধরতে পারেন না। আমাকে কেন ধরে জেলে ঢোকাচ্ছেন? একজন পুলিশ এসে সবুজের ঠোঁট কেটে রক্ত বের হতে লাগল।
জেলে যখন সবুজের সাথে তার বাবা-মা দেখা করতে আসল সবুজ তাদের সামনে আবারো কেঁদেই চলেছে বাবা-মাকে বলছে, আমি এসব কিচ্ছু করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। সবুজের বাবা বলল, জানি বাবা তুই এসব করিসনি তোকে ফাঁসানো হচ্ছে। সবুজ ছয় মাস ধরে জেলে রয়েছে। তার আর এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দেওয়া হলো না। যেদিন ওর এইচ.এস.সি. পরীক্ষার দিন ছিল সেদিনও জেলের লোহার শিক ধরে খুব কাঁদল। আজ ছয় মাস পর জেলের একজন দারোগা এসে বলল, ডিআইজি স্যার আপনাকে ডাকছে, চলুন আমার সাথে। ডিআইজি স্যারের সামনে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো। ডিআইজি স্যার বলল, তোমাকে একটু কম শাস্তি দেওয়া হলো। আমার ছেলের গায়ে হাত তোলার অপরাধ তোমাকে যাবৎজীবন কারাদন্ড দেওয়া উচিত ছিল। যাক তোমাকে ছেড়ে দিলাম পরের বার কারোর গায়ে হাত তোলার আগে হাজার বার ভেভে নিবে তোমাকে এখন যেতে দিলাম।
সবুজ জেল থেকে ছাড়া পেল। কিন্তু সে হীনমুনতায় ভোগে এখন তার আর কোনো বন্ধু নাই। কারোর সাথে তার আর ভাব নেই। সদাসর্বদা হাসিমুখ আর নেই। এখন কলেজের শিক্ষকেরা আর তাকে ভালো বলে না। সবার আগে কলেজে গিয়ে ফাস্ট বেঞ্চে বসা সবুজ আজ লাস্ট বেঞ্চে বসে। সবাই তাকে কোনঠাসা করে রেখেছে। সবুজ এবার এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে পারল না।
আজ অনেক বছর পর সবুজ ইজিবাইক চালায়। তার মনে রাজ্যের দুঃখ। যে লোকেই সবুজের ইজিবাইকে ওঠে সবুজ তাকে বলে, বুঝালেন ভাই কলঙ্ক এমন একটা জিনিস যা হাজার বার ধুলেও ওঠেনা।
The post কলঙ্ক appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3kLULll
No comments:
Post a Comment