Monday, March 22, 2021

সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্য পরিবারের আনন্দময় একদিন https://ift.tt/3r6CHVX

আসাদুজ্জামান সরদার: কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রকৃতিতে নির্মল বাতাস। বিদায়ী শীত আর মৃদু গরমের সন্ধিক্ষণে প্রকৃতির আবাহণ। উপরে নির্মল নীল আকাশ নি¤েœ উতালা ধরনী চারিদিকে বসন্তের ফুলের সৌরভ। আবহমান বাংলার প্রকৃতির এমন এক দোলাচলে শুরু হয়েছিল আমাদের যাত্রা। দিনটি ছিল ২০ মার্চ ২০২১, শনিবার। শিশু কিশোরদের ঘুমের ছেদ ঘটিয়ে তাদের মায়েরা নতুন পরিচ্ছন পোশাকে সাজিয়ে তুলেছিলেন তাদের সন্তানদের। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে প্রচীন দিঘির ধার জুড়ে মানুষের পদচারণা আর পাশেই দন্ডায়মান ছিলো তিনটি বাস। ৩১টি পরিবারের ১২৪ জন সদস্যের মধ্যে ৪ মাসের শিশু হুজায়ফা ও ৫ মাসের শিশু জারা’র দিকে নজর ছিলো সবার।

চলতি পথে নানা দৃশ্য কোথাও বা চমকে দেওয়ার মতো ছোট বড় ঘটনা তারই মধ্যে সেলফি তোলা, ফেইসবুক থেকে নিজের যাত্রার জানান দেওয়া এবং শিশু কিশোরদের কলকাকুলী ও কিচির মিচিরের মধ্যে আমরা যখন বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ সমজিদে নিজেদের আবিস্কার করলাম তখন মনে হল আমরা সেই প্রাগ ঐতিহাসিক যুগে পৌছে গেছি। হযরত খান জাহান আলী (রহ:) গড়ে তোলা খলিফাতাবাদ প্রাচীন নগরী স্থাপত্য শিল্পের নানা নির্দশন দেখে আসাতের স্মৃতিতে এনে দেয় আগ্রায় ঐতিহাসিক তাজমহলের দৃশ্য। ষাট গম্বুজ মসজিদের ৮১টি গম্বুজ কেন এটা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আব্দুল জলিল ভাইয়েল। কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর ছিলেন মসজিদের খাদেম ও সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান মুজিবুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি শ্যামনগরের নওয়াবেকিতে। তিনি জানালেন, হযরত খানজানা আলী (রহ:) ৩৬০ টি মসজিদ, ৩৬০টি দিঘি তৈরী করেছেন।

 

 


এই মসজিদটি নির্মাণের জন্য বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ভারতের রাজস্থান থেকে আনেন। এই মসজিদটির মূলত ছাদ গম্বুজ। সেই থেকে পরিবর্তন হতে হতে ষাট গম্বুজ নাম হয়েছে। তবে এর ৬০টি পিলার আছে। এই মসজিদের সাত লাইনে ১১টি করে ৭৭টি এবং চার কোনাড ৪টি মোট ৮১টি গম্বুজ আছে। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো কর্তৃ বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
মুক্ত বিশ্বকোষ ওইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮ক্স৫ ফুট পুরু। ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১ টি, সাত লাইনে ১১ টি করে ৭৭টি এবং চার কোনায় ৪টি মোট ৮১টি। কালের বিবর্তনে লোকমুখে ৬০ গম্বুজ বলতে বলতে ষাট গম্বুজ নামকরণ হয়ে যায়, সেই থেকে ষাট গম্বুজ নামে পরিচিত।

 


মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আজান দেবার ব্যবস্থা ছিল। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়, বরং গম্বুজ সংখ্যা ৭৭টি। ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার এবং পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মতো। মিনারে গম্বুজের সংখ্যা ৪ টি-এ হিসেবে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১ তে । তবুও এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এ মসজিদের সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাটগম্বুজ নাম হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, গম্বুজগুলো ৬০ টি প্রস্তনির্মিত স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলেই নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে।
মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা। কারো কারো মতে, খান জাহান এই মসজিদটিকে নামাজের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিল দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদরাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। ইমাম সাহেবের বসার জায়গা হিসেবে রয়েছে মিম্বার।
খানজাহান আলীর মাজার প্রাঙ্গনে না যাওয়ার কারণে সেই কালাপাহাড় ধলা পাহাড়ের দিঘীর দৃশ্য প্রত্যক্যভাবে অবলোকন করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে আমরা ঐতিহাসিক জাদুঘরে ঢুকে পড়লাম। তবে দেখানে দেখা মিলল কাচের ভিতর রাখা বিশাল আকারের ধলাপাহাড়ের মৃত শরীরের মমি অথবা শুধু চামড়া দিয়ে এই ডামি বানানো কুমির।

 

 

 

 

খানজাহান আলীর স্মৃতি সংরক্ষণকল্পে জাতিসংঘের অর্থানুকূল্যো ইউনেস্কোর অর্থ সাহায্যে জাদুঘর ভবন নির্মাণ করা হয়। একতলা ভবনের তিনটি গ্যালারি বিশিষ্ট দক্ষিণমুখী জাদুঘর ভবনে বৈশিষ্ট্য ইসলামী স্থাপত্যকলাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এই জেলা সম্পর্কিত অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক পাওয়া যাবে এখানে। রয়েছে বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া স্মৃতিচিহ্ন, মুদ্রা, বাসন, তৈজসপত্র, মানচিত্র, আরো আছে লিপিবদ্ধ ইতিহাস। আকর্ষণীয় হিসেবে রয়েছে সারাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মসজিদ ও পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনার সুন্দর সুন্দর সব ছবি, মনে হবে মিনি বাংলাদেশ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে খান জাহান আলির ঐতিহাসিক কুমিরের মমি।

১৯৯৫ সালে নির্মিত হয়েছে বাগেরহাট জাদুঘর। ঐতিহাসিক বাগেরহাট শহরের সুন্দরঘোনায় ষাট গমবুজ মসজিদ ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পূর্ব কোণে জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে।

 

 

 

এরপর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি স্থলে আমর পৌছে নিজেদের যেন আবিস্কার করলাম নতুন এক বাংলাদের ভুখন্ডে। জাতির পিতার প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা স্থির হয়ে গেলাম। আমাদের মনে জেগে উঠলো সেই ভাষা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সেই এগার দফা, ৬ দফার আন্দোলন আর ঐতিহাসিত গণঅভ্যুত্থান। আমাদের মনে পড়ে গেল তৎকালীন পুরো পাকিস্তান জুড়ে বঙ্গবন্ধুর বিচরণ, জনসভা আর গণসংযোগের টুকিটাকি। মনে পড়ল ৭ মার্সের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা, মনে পড়ল ২ মার্সের পতাকা উত্তোলন। স্মৃতিতে ভেসে উঠলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তর্জনী উচিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭০ সালের নির্বাচন আদায়ের কথা। স্মৃতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিল বাঙালি জাতির নিরঙ্কুস বিজয়ের পরও বাংলাদেশের হাতে ক্ষমতা হস্থান্তর না করার ইয়াহিয়া জান্তার ফন্দি ফিকির ৭মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাতিক ভাষণে পরোক্ষ ভাষায় বাংলাদেশের স্বাধনীতার ঘোষণা, ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম গুলি বর্ষণ এবং শত বাঙালিকে হত্যার করুণ স্মৃতিও ভেসে উঠে আমাদের মানষ পটে। আর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার এবং তাকে পশ্চিম পাকিস্তান কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণার কথা আমরা স্মরণে এনে বঙ্গবন্ধুকে জানালাম আরও একবার শ্রদ্ধা। এরপর বঙ্গবন্ধুর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে জাতীর স্থপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, কয়েক বছরের দেশ গড়ার সংগ্রাম আর ৭৫’ বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যার হৃদয় স্পর্শী কাহিনী আমাদের সবার চোখে অশ্রু এনে দিল। মাজারের ধারেই দাঁড়িয়ে জনগণ তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা অন্যান্য সকল মামলা থেকে জনগণের আন্দোলন সংগ্রামের মুখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কিভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন আর কিভাবে বা জাতির জনকের মর্যাদা পেলেন তা আমাদের মানসপটে বার বার উঠে আসতে থাকে।

 


এরপর আবারও ছুটতে থাকে আমাদের গাড়ি। ফরিদপুরের ভাঙায় যেয়ে এক্সপ্রেসওয়ে দেখে সবার চক্ষু ছানা বড়া। সড়ক নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১১,০০০ কোটি টাকা। রাজধানী ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি এক্সপ্রেসওয়ে বলে দেয় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা। এটি ইতোমধ্যে অনেকের কাছে বিনোদনের খোরাক হয়ে উঠেছে।
অনেকের মুখে বলতে শোনা গেছে, এতে বাংলাদেশ নয়, উন্নত বিশ্ব বা সিঙ্গাপুরের কোন সড়ক। ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের নবনির্মিত মসজিদটি সকলের নজর কেড়েছে। মসজিদটি দেখে অনেকে আগ্রার তাজমহলের সাথে তুলনাও করেছেন। কারণ চলতে চলতে দেখা হলে যা হয়। এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ম অনুযায়ী এই সড়কের খুবই কম জায়গায় দাঁড়ানোর সুযোগ আছে।
এই সড়ক দেখার পর অনেক সিনিয়ির সাংবাদিকের মুখে উচ্চারিত হয়েছে। দেশের সব জেলায় বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করছে কিন্তু আমাদের সাতক্ষীরা জেলার রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে ব্যাপক পিছিয়ে আছে।

 

 


বিকাল তখন সাড়ে ৪টা। আমরা ঠিক তখনই স্বপ্নের সেতু ‘পদ্মাসেতুর; নিচে পদ্মার নীল জলরাশির উথাল পাতাল ঢেউয়ের ঝঙ্কার আমাদের হৃদয়ে এতটুকু ভীতি আনেনি বরং পদ্মাসেতুর স্থপত্য দেশে আমরা হয়ে উঠলাম আনন্দের আত্মহারা।
জাজিরা থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে ভাসলাম ট্রলারে পদ্মা পাড়ি দিতে দিতে সেই স্বপ্নের সেতু নিয়ে আমাদের মনে জেগে উঠলো অনেক ইতিহাস। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় সেতুর জন্মদান একটি ঐতিহাসিক কথাই বটে। দিগন্ত জোড়া এই সেতু পদ্মার দুই ধারের মানুষকে এনে দিয়েছে নৈকট্য, দক্ষিণ বঙ্গের মানুষকে এনে দিয়েছে সহজ যোগাযোগ, আরও এনে দিচ্ছে। আত্মসামাজিক সমৃদ্ধি। ৪১টি স্পানের উপর দন্ডায়মান এই সেতু বিশ্ববাসীকে জানান দিয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধির কথা। এক চ্যালেঞ্জের কথা। এই সেতুর নির্মাণ শৈলী মুগ্ধ করেছে আমাদের।
মনে থাকার মতো ভ্রমণটি ছিল আমাদের রবিন্দ্রনাথের ভাষায় ‘দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু, দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হৈতে শুধু দুপা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু।’ বাংলাদেশ অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ সকল দেশের রানী সেজে আমার জন্মভূমি, মাত্র কুড়ি ঘন্টার আনন্দ যাত্রায় আমার জন্মভূমি খুলে আমার প্রাণের সকল দুয়ার।

The post সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্য পরিবারের আনন্দময় একদিন appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3sdo3gX

No comments:

Post a Comment