Tuesday, March 23, 2021

শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার নৈতিকতা মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক শম্ভুর গবেষণা https://ift.tt/eA8V8J

রনজিৎ বর্মন, সুন্দরবনাঞ্চল (শ্যামনগর): শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার, নৈতিকতা ও কাক্সিক্ষত মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং ছোট ছোট শিশুর মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষক শম্ভু মালো এক বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা পদ্ধতি চালু করতে চান। প্রাথমিক পর্যায়ের শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা, সম্প্রীতি, শৃঙ্খলাবোধ, গণতান্ত্রিক মনোভাব সৃষ্টি, অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা, দেশপ্রেম, উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে আগ্রহ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য মানবীয় গুণাবলীর অধিকতর বিকাশ ঘটানোই হচ্ছে এই গবেষণা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ১১ নং দেবালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শম্ভুনাথ মালো কতৃক উদ্ভাবিত ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কতৃক অনুমোদিত উদ্ভাবনী ধারণা “শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ চর্চা” বিষয়ক চলমান গবেষণা কার্যক্রমটি তার বিদ্যালয়ের শিশুদের মধ্যে প্রয়োগের ফলে উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জন করেছে বলে তিনি দাবী করেন। শিক্ষক শম্ভুনাথ মালো ফলাফল বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ায় আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ভালভাবে পাশ করেছে, নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসার ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধীরে ধীরে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্যর উন্নতিসহ অন্যান্যক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে।
গবেষণামূলক কার্যক্রমটি তিনি ১ম ধাপ শুরু করেন ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত। তিনি বলেন বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত শিক্ষক হিসাবে লক্ষ্য করেছেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের পরও কাক্সিক্ষত ফলাফলগুলো অর্জনে কোথায় যেন ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আবার যা অর্জিত হচ্ছে তাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থায়ী রূপ লাভ করছে না। কারণ হিসেবে অনুসন্ধানপূর্বক তিনি ২টি কারণ উল্লেখ করেন। এক. শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখনফলগুলো সকল ক্ষেত্রে যথাযথ চর্চার অভাব। দুই. পারিবারিক অসচেতনতা।

শিশুরা শিখনে অধিকতর আগ্রহী হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্দিপকের মধ্যে ২টি উদ্দিপক বলেন এক ভয় (শারীরিক শাস্তি) ও দুই পুরস্কার। যেহেতু যুক্তিপূর্ণভাবে শারীরিক শাস্তি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই পরিপূরক হিসেবে দুই নং উদ্দীপক বা বেশি বেশি পুরস্কারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সদাচারণ ও লেখাপড়ায় অধিকতর আগ্রহী করে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন। এই পুরস্কার শুধু বস্তগত হবে এমন নয় অবস্তুগতও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনি শিখনফলগুলি স্থায়ীকরণে পরিবারকে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
সমাজে নানা ধরণের সমস্যার মূলে শিষ্টাচার , নৈতিকতা ও মূল্যবোধ চর্চার অভাব বলে মনে করেন। যার ফলে পারিবারিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে উন্নয়ন টেকসই হতে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের ছোটবেলা থেকেই শিষ্টাচার , নৈতিকতা ও কাক্সিক্ষত মূল্যবোধ চর্চা করানো ও শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে বিষয়গুলি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান সমৃদ্ধ, সচেতন ও সক্রিয় করে তোলা যায় তাহলে শিক্ষার্থীরা সদাচারণ ও লেখাপড়ায় অধিকতর আগ্রহী হবে। শিশুরা আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। পরিবারগুলোতে সচেতনতা ও দায়িত্ব কর্তব্য বৃদ্ধি পাবে। ধীরে ধীরে জনসংখ্যা জনশক্তিতে পরিণত হবে বলে মনে করেন।
“শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ চর্চা” বিষয়ক গবেষণা প্রকল্পের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ মত প্রকাশ করে বলেন সন্তানদের মধ্যে অনেক দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, নিয়মিত স্কুল গামী হয়েছে, সবজিবাগান তৈরী, গবাদি পশু পালন, সঞ্চয়ী মনোভাবাপন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্যগত বিষয়টিও খেয়াল রাখতে শুরু করেছে।
শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: সোহাগ আলম বিদ্যালয়ের পরিদর্শন প্রতিবেদনে লিখেছেন বিষয়টি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সমযোপযোগী এবং পরিপূরক বলে মনে হয়। বিষয়টি পিছিয়ে পড়াসহ সকল শিশুদের অগ্রগতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার মতো অন্যতম নিয়ামক।
উপজেলার সাবেক সহকারী শিক্ষা অফিসার তপন কুমার দেবনাথ পরিদর্শন বহিতে লিখেছেন উদ্যোগটি শিশুদের নৈতিকতা বিকাশে ভাল ভূমিকা রাখবে। শিশুদের লেখাপড়া উন্নয়নে প্রভাব পড়বে।

শ্যামনগর সরকারি মহসীন ডিগ্রী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো: ইউসুফ আলী শেখ পরিদর্শন বহিতে লিখেছেন, বিষয়টি প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সংযোজনযোগ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়োপযোগী কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করবে বলে মনে করেন।
শ্যামনগর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ১৬২ নং আটুলিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র মন্ডল পরিদর্শন বহিতে লিখেছেন, শিশুদের প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা গ্রহণের পরিপূরক ও পূর্ণতা লাভের একটি বড় সহায়ক অধ্যায় হবে। শ্যামনগর আতরজান মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী পরিদর্শন কালিন লিখেছেন, বিষয়টি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মের হার কমানো ও নিয়মিত উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ. ন. ম আবুজর গিফারী শিক্ষক শম্ভুনাথ মালোর গবেষণা প্রকল্পটি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
গবেষক ও শিক্ষক শম্ভুনাথ মালো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও সদাচারণে স্বেচ্ছায় আগ্রহ বৃদ্ধির দ্বারা আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং অভিভাবক শ্রেণির কাঙ্খিত পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির পরবর্তীধাপের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

The post শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার নৈতিকতা মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক শম্ভুর গবেষণা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3fl4Fer

No comments:

Post a Comment