Tuesday, March 23, 2021

পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের আপার সম্ভাবনা https://ift.tt/eA8V8J

জহিরুল ইসলাম শাহিন
পর্যটন শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পর্যটনের বা ভ্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিদেশ সম্পর্কে এবং মানুষের কৃষ্টি কালচার, আচরণ, চলন, অভ্যাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যে দেশগুলি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। শুধুমাত্র জীবনকে উপভোগ করার জন্য মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে। ভ্রমণের মাধ্যমে অনেক দেশ পৃথিবীতে অতি পরিচিত এবং পর্যটন শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার কারণে দেশ বিদেশ থেকে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে। এমনও দেশ আছে যেখানে শুধু পাহাড়, পর্বত, নদী, হাওড় ইত্যাদি প্রকৃতির এক অপরূপ শোভা। একটু দেখার জন্য এবং ওই দেশটা সম্পর্কে জানার জন্য মানুষ হৃদয়ের আবেগ দিয়ে পর্যটন এলাকাগুলো ভ্রমণ করে মনের তৃষ্ণা মেটায়। গত বিশ্বকাপ ফুটবলে আমরা এমন একটি দেশের দৃষ্টান্ত দিতে পারি, যার নাম ক্রোয়েশিয়া। এখানে কৃষিজ ফসল বা শিল্প কারখানা তেমন নেই। তাদের আছে মনের তৃপ্তি মেটানোর জন্য অনেক পর্যটন শিল্প যা দেখার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এবং প্রায় ৮০% অর্থ বা বৈদেশিক মুদ্রা দেশটির সরকার অর্জন করে। ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ অনেক উন্নত বলে আমি মনে করি।

 

আমরা সকলেই জানি, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে এবং পর্যটন শিল্পে সমৃদ্ধশালী। দক্ষিণে সাগর, নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঢাকা সুন্দরবন, যদি দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের কথা বলি আমরা দেখতে পাবো নোয়াখালীর সন্দীপ সাগরের মাঝখানে, কক্সবাজারের দীর্ঘ সী বিচ, কোয়াকাটার সাগরের তীর, রাখাইনদের আবাস ভূমি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছেড়াদীপ, মহেশখালী, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এবং পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর। এছাড়া বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল পাহাড়ে পাহাড়ে ঘেরা। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুরসহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যা ভ্রমণ করার জন্য বা পারিবারিকভাবে ঘুরার জন্য ও বিনোদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থানগুলি স্বয়ং আল্ল¬াহ তায়ালার অপূর্ব সৃষ্টি। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বা পৌরসভায় এবং দক্ষিণের বিভিন্ন ইউনিয়নগুলি এবং বিশেষ করে ঐ অঞ্চলের ছোট একটি দ্বীপ মনপুরাতে যদি আমরা বেড়াতে যাই, দেখতে পাবো ঐ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা কেমন। চর কুকুরী মুকুরী নামক একটি এলাকা সমুদ্র ঘেষা মেঘনা নদীর তীরে মানুষ কীভাবে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে, চোখে না দেখলে আমরা কিছুই বুঝতে পারবো না। শিক্ষার এবং জ্ঞানের অনেক কিছুই আছে। আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদকে। তিনি ঐ সমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেছেন এবং চর অঞ্চলের মানুষের খোঁজ খবরও নিয়েছেন। ঐ এলাকার মানুষ অত্যন্ত খুশি। নেত্রকোনার কমলা কান্তা নামক একটি উপজেলা যা উত্তরের শেষ সীমানা। এরপর মেঘালায় রাজ্য। সত্যি ঐ এলাকায় না গেলে আমরা বুঝবো না আসলে আমরা কোথায় আছি। যাই হোক বাংলাদেশে কিছু কিছু অঞ্চল আছে যেগুলি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ভ্রমণের জন্য। আবার কিছু কিছু অঞ্চল আছে ভ্রমণ করলে বুঝতে পারবেন সেখানকার মানুষ কতটা অসহায়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ কীভাবে মোকাবেলা করে চোখে না দেখলে আমরা কিছুই বুঝবো না। এছাড়া পীর ওলীদের কিছু তীর্থস্থান আছে সেগুলি ও অত্যন্ত দর্শনীয়। মোদ্দা কথায় আসা যাক, ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশে অসংখ্য পর্যটন এলাকা আছে। এই এলাকাগুলো চিহ্নিত করতে পারলে এবং তার আয়তন নির্ধারণ করে যদি আরও আকর্ষণীয় করা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ তার মানুষিক শান্তি ও স্বস্তির জন্য বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিতে পারে এবং আমার ধারণা বিদেশ থেকেও অনেক পর্যটক বাংলাদেশে ভিড় করতে পারে। তাদের অবকাশ যাপনের জন্য।

এতে করে আমরা বিদেশী অর্থ উপার্জন করতে পারবো এবং উক্ত এলাকার জনগণ ও মানসিকভাবে ও আর্থিকভাবে উপকৃত হবে। এজন্য আমাদের যেমন সচেতন হতে হবে, আবার সরকারকেও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আরও যাবে যদি পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থানের উন্নতি ঘটানো যায়। পূর্বে বহির্বিশ্ব থেকে পর্যটকরা আমাদের দেশ খুব একটা ভ্রমণ করতেন না। বর্তমান সময়ে তারা অনেকটা আগ্রহ প্রকাশ করছেন এবং কিছু কিছু অঞ্চল ভ্রমনের জন্য তারা বেছে নিয়েছেন। এটা নি:সন্দেহে আমাদের জন্য একটা সুখবর। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিবেশে বাংলাদেশের পর্যটনের যথাযথ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনেক পরিবর্তন আনা সম্ভব এবং বহির্বিশ্বে জনগণের জন্য উন্নত মানের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারলে দেখা যাবে আগামী দুই এক বছরের মধ্যে আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো। এ মুহূর্তে পর্যটকদের নিরাপত্তার বাড়তি নজরদারীর জন্য এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য নি:সন্দেহে সরকারের এই পদক্ষেপ প্রশংসার দাবীদার। বাংলাদেশের একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন রোল মডেল। সাতক্ষীরা থেকে দেশের উত্তর পূর্বঞ্চল পর্যন্ত বা খুলনা বা বরিশাল থেকে এমনকি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত ভ্রমণের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা এ মুহূর্তে এতটাই সহজ বা সুন্দর যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ভ্রমণের জন্য তেমন কষ্ট এখন আর হয় না। হোটেলগুলোর ব্যবস্থাপনা ও আগের তুলনায় অনেক ভালো। সুতরাং আমরা সবাই মিলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ভ্রমণের মাধ্যমে দেশ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি এবং শিক্ষামূলক কিছু জ্ঞানও অর্জন করি। বাংলাদেশ যে প্রাকৃতিক সম্পদে শস্য সুফলা ও সবুজে ঘেরা সেটা প্রত্যক্ষ করি এবং বিদেশ থেকে যাতে পর্যটকরা এসে বাংলাদেশকে জানুক এবং আরও ভালো করে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের মধ্যে উন্নত ধারণা জন্ম নিক এটাই আমরা আশা করি। পর্যটন শিল্প হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অচিরেই পালন করবে এবং এ শিল্পের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল হবে। আশা করি বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প হিসেবে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। লেখক: সহকারি অধ্যাপক (ইংরেজি), বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, কলারোয়া, সাতক্ষীরা

The post পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের আপার সম্ভাবনা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/31adPSr

No comments:

Post a Comment