Thursday, March 4, 2021

কবিরা গুনাহর ভয়াবহ পরিণাম জাহান্নাম https://ift.tt/eA8V8J

মাওলানা মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
(২০ তম পর্ব)…
গুনাহ কি? গুনাহ বা নাফারমানী উর্দু শব্দ, বাংলা প্রতিশব্দ হলো পাপ, পাপাচার। আরবী শব্দ হলো ইছ’ম/জামবুন যার বাংলা অর্থ হলো-অপরাধ, অন্যায়, দুষ্কর্ম। পরিভাষায় গুনাহ হলো এমন আমল করা, যা পবিত্র শরী’আহ প্রণেতার (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো আদর্শ ও তরীকার) বিরোধী হওয়ায় ‘আমলকারী শাস্তির যোগ্য হয়। হাদিসের ভাষায় পাপ হলো, আন নাওয়্যাস ইবনে সিম’আন আল আনসারী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূর্ণ ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। অত:পর তিনি বলেন, পূর্ণ হলো উত্তম চরিত্র। আর পাপ সেটিই যা তোমার অন্তরে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে এবং লোকেরা সেটি অবগত হোক তা তুমি অপছন্দ করো। সুত্র: সহীহ মুসলিম, হাঃ নং-২৫৫৩।

কবিরা গুনাহের পরিচয়: যে সকল গুনাহের জন্য দুনিয়াতে হদ বা দ- নির্ধারণ করা হয়েছে এবং একইসাথে যে সকল পাপের জন্য আখিরাতে শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়েছে। বাইহাকি শরিফের একটি বর্ণনায় কবিরা গুনাহের পরিচয় এসেছে ঠিক এভাবে-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- “যে সকল কবিরা গুনাহ থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে,যদি তোমরা সেসব বড় গুনাহগুলো (কবিরা গুনাহ) থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি (আল্লাহ তায়ালা) তোমাদের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং (জান্নাতের) সম্মানজনক স্থানে তোমাদেরকে প্রবেশ করাব।” সুরাহ নিসা: ৩১। আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে তিনি (ইবনে আব্বাস রা:) বলেন, কবিরা গুনাহ হলো সে গুনাহ যার বর্ণনায় আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম, ক্রোধ, শাস্তি অথবা অভিশাপ দ্বারা শেষ করেছেন।” সুত্র: বায়হাকি, শো’আবুল ঈমান, হা: নং-২৮৬। এ বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, যে সকল কাজ করা বা না করার জন্য জাহান্নামের কারণ হয় এবং অভিশপ্ত হওয়ার কারণ হয়, সেগুলোই কবিরা গুনাহ।

কবিরা গুনাহ এর তালিকা: (১) শিরক করা, (২) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, (৩) জাদু করা, (৪) নামাজে শৈথিল্য প্রদর্শন করা, (৫) যাকাত না দেওয়া, (৬) বিনা ওযরে রমজানের রোজা ভঙ্গ করা, (৭) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ্ব না করা, (৮) আত্ম হত্যা করা, (৯) হত্যা করা, (১০) রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় স্বজনকে পরিত্যাগ করা, (১১) সমকামিতা ও যৌনবিকার, (১২) যিনা-ব্যভিচার করা, (১৩) সুদের আদান প্রদান করা, (১৪) ইয়াতীমের উপর জুলুম করা, (১৫) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যে না করা এবং তাঁদের উপর মিথ্যারোপ করা, (১৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা, (১৭) শাসক কর্তৃক শাসিতের উপর জুলুম, (১৮) অহংকার করা, (১৯) মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, (২০)মদ পান করা, (২১) জুয়া খেলা করা, (২২) সতী নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো, (২৩) রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাত করা, (২৪) চুরি করা, (২৫) ডাকাতি করা, (২৬) মিথ্যা শপথ করা, (২৭)যুলুম করা, (২৮)জোপূর্বক চাঁদা আদায় করা, (২৯) হারাম খাওয়া ও হারাম উপার্জন করা, (৩০) মিথ্যা বলা, (৩১) বিচার কার্যে অসততা ও দুর্নীতি, (৩২) ঘুষ গ্রহণ করা (উল্লেখ্য যে, সরকারি অফিসে বসে হাদিয়া নেওয়ার কোনো বৈধ্যতা নেই বরং হারাম), (৩৩) নারীর সাথে পুরুষের এবং পুরুষের সাথে নারীর সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা, (৩৪) নিজ পরিবারের মধ্যে অশ্লীলতা ও পাপাচারের প্রশ্রয় দান করা, (৩৫) তালাক প্রাপ্ত নারীর তাহশীল, (৩৬) প্রস্রাব থেকে যথাযথভাবে পবিত্রতা অর্জন না করা, (৩৭) রিয়া অর্থাৎ অন্যকে দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ কাজ করা, (৩৮) নিছক দুনিয়ার উদ্দেশ্যে কোনো জ্ঞান অর্জন করা, (৩৯) খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা করা, (৪০) নিজ কৃত দান খয়রাতের বা অনুগ্রহের খোটা দেওয়া, (৪১) ভাগ্যকে অস্বীকার করা, (৪২) মানুষের গোপনীয় দোষ জানার চেষ্টা করা, (৪৩) চোখলখুরি করা, (৪৪) বিনা অপারাধে কোনো মুসলমানকে অভিশাপ ও গালি দেওয়া, (৪৫) ওয়াদা খেলাপ করা, (৪৬) ভবিষ্যদ্বক্তা ও জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করা, (৪৭) স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের অধিকার লংঘন করা, (৪৮) প্রাণির প্রতিকৃতি বা ছবি আঁকা, (৪৯) বিপদে দুর্যোগে বা শোকাবহ ঘটনায় উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা, (৫০) বিদ্রোহ, ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতা প্রকাশ করা, (৫১) দুর্বল শ্রেণি, দাস-দাসী, চাকর-চাকরাণী ও জীবজন্তুর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা, (৫২) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া, (৫৩) মুসলমানদেরকে উত্যক্ত করা, গালি দেওয়া, (৫৪) সৎ ও খোদাভীরু বান্দাকে কষ্ট দেওয়া, (৫৫) দাম্ভিকতা ও আভিজাত্য প্রদর্শনার্থে টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা, (৫৬) পুরুষের স্বর্ণ ও রেশম ব্যবহার করা, (৫৭) বৈধ কর্তৃপক্ষের অবাধ্য হওয়া ও বৈধ আনুগত্যেও বন্ধন একতরফাভাবে ছিন্ন কর, (৫৮) আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কারোর নামে জন্তু জবাই করা, (৫৯) জেনেশুনে নিজেকে পিতা ব্যতিত অন্যের সন্তান বলে পরিচয় দেওয়া, (৬০) জেনেশুনে অন্যায়ের পক্ষে তর্ক, ঝগড়া ও দ্বন্দ, (৬১) উদ্বৃত্ত পানি অন্যকে না দেওয়া, (৬২) মাপে ও ওজনে কম দেওয়া, (৬৩) আল্লাহর আযাব ও গযব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া, (৬৪) আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হওয়া, (৬৫)বিনা ওজরে জামায়াত ত্যাগ করা ও একাকী নামাজ পড়া, (৬৭) ধোকাবাজি,ছলচাতুরি ও ষড়যন্ত্র করা, (৬৮) কৃপণতা, অপচয় ও অপব্যয় তথা অবৈধ ও বিশৃংখলভাবে ব্যয় করা, (৬৯) মুসলমানদের গোপনীয় বিষয় শত্রুর নিকট ফাঁস করা, (৭০) কোনো সাহাবীকে গালি দেওয়া। তথ্যসুত্র: কিতাবুল কাবায়ের, ইমাম শামসুদ্দীন আয় যাহাবী রহ:।

কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-“হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের নফসের উপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্থ গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” সুত্র: সুরা আল-যুমার: ৫৩। বস্তুত: একানিষ্ঠ তাওবার মাধ্যমে সকল গুনাহ থেকে নিষ্কৃতি বা মুক্তিলাভ করা যায়। তবে এর জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। যেমন- (১) তাওবাহ কারী তাঁর কৃত গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হবে। (২) তাওবাহ কারীকে কৃতগুনাহ থেকে চিরতরে বিরত থাকতে হবে। (৩) পরবর্তীতে কখনো গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। (৪) আর প্রদত্ত পাপ যদি বান্দার হক্বের সাথে সম্পর্কিত হয়, তাহলে তাওবাহ কারীকে বান্দার হক্ব যথাযথভাবে আদায় করে দিতে হবে। চলবে…। লেখক: ইসলামী গবেষক

The post কবিরা গুনাহর ভয়াবহ পরিণাম জাহান্নাম appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3kLiGlZ

No comments:

Post a Comment