Tuesday, November 30, 2021

মেম্বরের গন্ডগোলের দায় চাপল আছাদুল হকের ঘাড়ে! বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ২ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ, পরে মুক্তি https://ift.tt/eA8V8J

৩৫ জনের নামে মামলা, ১৩ নেতাকর্মী কারাগারে
আজিজুল হক আরিফ, দেবহাটা: সাতক্ষীরার দেবহাটায় গোলাম রব্বানী নামের এক মেম্বর ও নির্বাচনে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত শাহীনুজ্জামান রিপন নামের অপর মেম্বর প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যকার গন্ডগোল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং কয়েকটি বাড়ি ভাংচুরের ঘটনার দায় পরিকল্পিতভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কুলিয়া ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আছাদুল হকের ঘাড়ে। এমনটি অভিযোগ তুলেছেন আছাদুল হকসহ তার পরিবার। এছাড়া ওই ঘটনার জেরে মধ্যরাতে কুলিয়াস্থ বাগানবাড়ি থেকে চেয়ারম্যান আছাদুল হক ও তার অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৩জন কর্মীকে তুলে নিয়ে যায় দেবহাটা থানা পুলিশ। থানায় নেওয়ার পর আছাদুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে দুই ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আছাদুল হককে তার পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ। অপরদিকে বাগানবাড়ি থেকে তার সাথে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৩ কর্মীকে একটি মামলা দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারে প্রেরণ এবং মামলাটি তার ছেলেসহ আরো ৩৫ জন নেতাকর্মীকে এহাজার নামীয় আসামী করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছাদুল হক ও তার পরিবারের।

সোমবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উপজেলার পুষ্পকাটি সরদার বাড়ির মোড়সহ আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় এ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
দু:খজনক হলেও সত্য যে, দায়েরকৃত মামলায় যাদের বাড়িঘর ভাংচুরের অভিযোগ করা হয়েছে সেই ৬জন ভুক্তভোগীকে মামলার সাক্ষী এবং ওই হামলার ঘটনার প্রধান ভুমিকায় থাকা দুজনের মধ্যে পুষ্পকাটি ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান ও নব-নির্বাচিত মেম্বর গোলাম রব্বানীকে আসামী এবং পরাজিত মেম্বর প্রার্থী শাহীনুজ্জামান রিপনকে বাদী করে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।

হামলা ও বসতঘর ভাংচুরের ঘটনার ভিকটিম পুষ্পকাটি গ্রামের সাবেক সেনাকর্মকর্তা হায়দার আলী, তার ভাই গোলাম মোস্তফা টুটুলসহ অন্যান্যরা জানান, যে দু’জন ব্যাক্তির নেতাকর্মীরা হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে পুষ্পকাটির বর্তমান মেম্বর গোলাম রব্বানী নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আছাদুল হকের সমর্থক এবং অপরজন পরাজিত মেম্বর প্রার্থী শাহীনুজ্জামান রিপন পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুল ইসলামের সমর্থক। পুষ্পকাটির পরাজিত মেম্বর প্রার্থী শাহিনুজ্জামান রিপনের সাথে পূর্ব শত্রুতা ও নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে একই এলাকার রজব আলীর ছেলে হযরতকে নিয়ে সোমবার বিকেলে একটি শালিস চলছিল। শালিসের একপর্যায়ে শাহিনুজ্জামান রিপনের সমর্থকরা হযরত আলীকে ধাওয়া দিলে প্রান বাঁচাতে ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানীর ভাই শহীদুলের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয় হযরত। সেসময় শহীদুলে দোকানে ঢুকে শাহীনুজ্জামান রিপনের সমর্থকরা হযরতকে মারপিট করে। তখন তাদের হামলায় রব্বানী মেম্বরের ভাই শহীদুলও আহত হয়।

সাথে সাথে তার দোকানেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে নির্বাচিত মেম্বর গোলাম রব্বানী দলবল নিয়ে তার ভাই শহীদুলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষ শাহীনুজ্জামান রিপনের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একে এক দুপক্ষের উত্তেজিত কর্মী সমর্থকরা দফায় দফায় হামলা চালিয়ে পুষ্পকাটির ছইল উদ্দীন সরদারের ৪ ছেলে সাবেক সেনাসদস্য হায়দার আলী, রবিউল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা টুটুল, গোলাম কিবরিয়া, একই গ্রামের মৃত জাহা উদ্দীনের ছেলে আজিজুল ও বজলু শেখের ছেলে আবুল হোসেনের বাড়িঘর ভাংচুর করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহর নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে উত্তেজিত জনগণকে শান্ত এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে সহায়তা করেন কুলিয়ার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আছাদুল হক। ভুক্তভোগীরা আরোও বলেন, হামলার ঘটনায় একদিকে রব্বানী মেম্বর, অপরদিকে পরাজিত মেম্বর প্রার্থী শাহীনুজ্জামান রিপন নেতৃত্ব দিয়েছিল। তাতে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আছাদুল হকের কোন হস্তক্ষেপ বা ইন্ধন ছিলনা। এমনকি আছাদুল হকের যেসব কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং যাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে তারাও হামলায় জড়িত ছিল কিনা তাও তাদের কাছে স্পষ্ট নয়।

এদিকে আছাদুল হকের স্বজনরা জানান, যে হামলার ঘটনার দায় আছাদুল হকের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে, তাতে আছাদুল হক বা তার নেতাকর্মীদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। ওই ঘটনার সব দায় রব্বানী মেম্বর ও পরাজিত তার প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বর প্রার্থী শাহীনুজ্জামান রিপনের। এছাড়া যেসময় দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে সেসময় জেলা পরিষদের একজন সদস্য ওই এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সম্ভবত তারই ইন্ধনে একের পর এক হামলা হয়েছে। তারা আরও বলেন, সোমবার রাত ১১টার দিকে দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এসএম জামিল আহমেদের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও দেবহাটা থানা পুলিশের সদস্যরা তাদের কুলিয়াস্থ বাগান বাড়ির গেইটে পৌঁছায়। এসময় পুলিশ সদস্যরা বাড়ির গেট খুলে আছাদুল হককে বাইরে বের হয়ে আসতে বললে তাদের কথামতো বেরিয়ে আসেন আছাদুল হক। তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ ভ্যানে তুলে দেবহাটা থানায় নেয় পুলিশ। তার সাথে ওই সময় বাগানবাড়িতে উপস্থিত থাকা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর মন্ডলসহ আরও ৭ নেতাকর্মীকেও তার সাথেই থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। থানায় পৌছানোর পর বুকে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে আছাদুল হকের।

 

একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দুঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ২টার দিকে পরিবারের জিম্মায় আছাদুল হককে থানা থেকে ছেড়ে দিলে তাকে প্রথমে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অন্যদিকে হামলা ও বসতবাড়ি ভাংচুরের ঘটনার ভুক্তভোগীরা আছাদুল হক এবং তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সম্মত না হলে, হামলার অন্যতম নেপথ্যে থাকা পরাজিত মেম্বর প্রার্থী শাহীনুজ্জামান রিপন বাদী হয়ে আগে থেকে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রলীগ নেতা সাগর ও অপর ৭ কর্মীসহ আছাদুল হকের আরোও ৩৫ জন নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-০৮। রাতেই ওই মামলার আরও ৫জন এজাহার নামীয় আসামীকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।

এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, পুষ্পকাটিতে হামলার ঘটনায় শাহীনুজ্জামান রিপন বাদী হয়ে ৩৫ জনের নামে মামলা দায়ের করলে ১৩জন আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্ররণ করা হয়। এছাড়া কুলিয়ার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আছাদুল হককে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও জানান ওসি।

The post মেম্বরের গন্ডগোলের দায় চাপল আছাদুল হকের ঘাড়ে! বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ২ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ, পরে মুক্তি appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2ZCF2jw

No comments:

Post a Comment