Monday, July 27, 2020

মার্কিন কনস্যুলেটের দায়িত্ব নিলেন চীনা কর্মকর্তারা https://ift.tt/eA8V8J

চীনের চেংডুর মার্কিন কনস্যুলেট খালি করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। বেইজিংয়ের বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টা শেষ হওয়ার পর কনস্যুলেট ছেড়ে যান তারা।

গেলো সপ্তাহ হিউস্টনের চীনা কনস্যুলেট বন্ধে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চেংডুর মার্কিন কূটনীতিক কার্যালয় বন্ধের নির্দেশ দেয় বেইজিং।

সোমবার (২৭ জুলাই) বেঁধে দেয়া সময় শেষ হওয়ার আগে, কনস্যুলেটের কর্মরতদের বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সরিয়ে ফেলা হয় নামফলক। নামিয়ে নেয়া হয় মার্কিন পতাকা।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর চীনা কর্মকর্তারা কনস্যুলেটে প্রবেশে করে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, গেলো ৩৫ বছর ধরে তিব্বতসহ চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এ কনস্যুলেট।

‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। চীনে থাকা অন্যান্য কনস্যুলেটের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ওই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সংযোগ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো আমরা।’

মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয়রা সেখানে জড়ো হন। চীনা পতাকা উড়ানোর পাশাপাশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধের প্রতিবাদে চেংডুতে মার্কিন বন্ধ করলো বেইজিং। হিউস্টন কনস্যুলেট চরবৃত্তির জন্য ব্যবহার হতো বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।

বেশ কিছু কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। করোনা ভাইরাস এবং বাণিজ্য ইস্যুতে চীনের সঙ্গে দফায় দফায় বিবাদে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হংকংয়ে চীনা বিতর্কিন আইন বাস্তবায়নের নিন্দা জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

গেলো সপ্তাহে চীনের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চরবৃত্তির অভিযোগ স্বীকার করেছেন সিঙ্গাপুরের এক নাগরিক।

ওই সপ্তাহে ভিসা জালিয়াতি এবং চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক গোপনের অভিযোগে আলাদা মামলায় চার চীনা নাগরিককে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র। এদের মধ্যে একজন চীনা গবেষক রয়েছেন।

সোমবার চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভিতে মার্কিন পতাকা সরিয়ে নেয়ার একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বেশ কিছু চীনা পুলিশ সদস্য। যারা কনস্যুলেটে কর্মরতের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ।

তবে রোববার বাসে করে কনস্যুলেট ত্যাগের সময় মার্কিন কর্মকর্তারা স্থানীয়দের টিটকারির সম্মুখীন হন বলে জানায় বার্তা সংস্থা এএফপি।

গেলো সপ্তাহে চীনা কূটনীতিকরাও হিউস্টনের কনস্যুলেট ছাড়ার সময় বিক্ষোভকারীদের ব্যাঙ্গাত্মক আচরণের শিকার হন।

১৯৮৫ সালে চেংডুতে কনস্যুলেট স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। যার মাধ্যমে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় ওয়াশিংটন তাদের কার্যক্রম চালাতো। ওই অঞ্চলে রয়েছে চীনের স্বায়াত্বশাসিত অঞ্চল তিব্বত। স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিন যাবত সেখানে আন্দোলন চলছে।

কূটনীতিক মিশনে ২শ’-এর বেশি স্থানীয় নাগরিক কাজ করেতেন।

শিল্প এবং ক্রমবর্ধমান পরিষেবা খাতের পাশাপাশি চেংডুকে মার্কিন কৃষি পণ্য, গাড়ি এবং যন্ত্রপাতি রফতানির সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতো যুক্তরাষ্ট্র।

চেংডু মিশন বন্ধ হওয়ায় এখন চীনের মুলভূণ্ডে চারটি মার্কিন কনস্যুলেট রয়েছে। একমাত্র দূতাবাসটি রয়েছে রাজধানী বেইজিংয়ে। এছাড়া, চীনের বিশেষায়িত অঞ্চলকে হংকংয়ে একটি মার্কিন কনস্যুলেট রয়েছে। অঞ্চলটি অতীতে ব্রিটিশ উপনেবিশ ছিল।

হিউস্টন কনস্যুলেট বন্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে চীনের আরো চারটি কনস্যুলেট রয়েছে। চীনা দূতাবাস রয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে।

৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর শুক্রবার হিউস্টনের কনস্যুলেট ত্যাগ করে চীনা কূটনীতিকরা। ওইসময় জোর করে মার্কিন নিরাপত্তাকর্মীরা কনস্যুলেটের ভেরতে প্রবেশ করে বলে খবর প্রকাশ হয।

যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, চীন মেধাস্বত্ত্ব চুরি করছিল। তাই টেক্সাসের চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে জগাখিচুরি মার্কা চীনবিরোধী মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেছেন।

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বিবাদের বেশকিছু কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনকে দায়ী করছেন। এ কাজটা বিশেষভাবে করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই তিনি দাবি করে আসছেন, চীনের উহানের গবেষণাগার থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে।

মার্চে ট্রাম্পের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, সম্ভবত মার্কিন সেনারা উহানে ভাইরাসটি নিয়ে এসেছিল।

২০১৮ সাল থেকে শুল্কযুদ্ধে জড়িত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র

সংক্ষেপে চীন -যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব: ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, চীন অসৎভাবে বাণিজ্য করছে এবং বেইজিংকে মেধাস্বত্ব চোর বলে আখ্যা দেন তিনি। চীনের ধারণা, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান অবস্থানকে প্রতিরোধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এরকম করছে।

চীনা রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তরা জিনজিয়ানে সংখ্যালঘু মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গণ-কারাগারে উইঘুরসহ সংখ্যালঘুদের আটকে রেখে ধর্মীয় নির্যাতন, জোরপূর্বক বন্ধ্যা করছে চীন।

অভিযোগ অস্বীকার করে চীন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভয়াবহ হস্তক্ষেপ।

হংকংয়ে নতুন নিরাপত্তা আইন: তড়িঘড়ি করে হংকংয়ে চীনা জাতীয় নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন বেইজিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হংকং ব্রিটেনের প্রশাসনিক অঞ্চল ছিল।

প্রতিবাদে, গেলো সপ্তাহে হংকংকে দেয়া বিশেষ বাণিজ্য মর্যাদা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই বাণিজ্য সুবিধায় যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক এড়ানোর সুযোগ পেতো চীন।

১৯৮৪ সালে হংকংয়ের সার্বভৌমত্ব বিষয়ে চীন-যুক্তরাজ্যের মধ্যে চুক্তি সই হয়। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তর করে। ওয়াশিংটন ও লন্ডন বলছে, চুক্তিতে হংকংয়ের বাসিন্দাদের যে স্বাধীনতা দেয়া হয়, নতুন নিরাপত্তা আইনে তা হুমকিতে পড়বে।

ক্ষুব্ধ যুক্তরাজ্য, হংকংয়ের ৩০ লাখ বাসিন্দাকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা দেয়। হংকংয়ে বসবাসকারী যারা ব্রিটিশ পাসপোর্ট ব্যবহার করেন, তাদের ব্রিটিশ পাসপোর্ট বাতিলের হুমকি দিয়ে লন্ডনের প্রতিবাদের জবাব দেয় চীন।

The post মার্কিন কনস্যুলেটের দায়িত্ব নিলেন চীনা কর্মকর্তারা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3jJvY1x

No comments:

Post a Comment