Monday, July 27, 2020

সাতক্ষীরা জেলার সংসদ সদস্যবৃন্দের সহযোগিতায় নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা চাই https://ift.tt/eA8V8J

অধ্যাপক ইদ্রিস আলী
আধুনিক যুগের মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। এই স্বাস্থ্যসেবা আমাদের জীবন ও জীবিকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। কি এক অদৃশ্য কারণে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানই হল বিজ্ঞান। পক্ষান্তরে ভয় ও আতঙ্ক, লোভ হল অলৌকিক বিশ্বাসের মূল বস্তু। সমাজে বিজ্ঞানের সাথে অলৌকিক ধ্যান ধারণার দ্বন্দ্ব আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলছে তো চলছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার কাছে অলৌকিক বিশ্বাসের ধোয়াসা আস্তে আস্তে পরাস্ত ও পরিবর্তন হয়েছে। আজকের বাস্তবতায় পৃথিবীর মনুষ্যসভ্যতা এবং এক শতকেরও বেশি সংখ্যক দেশের মানুষের জীবন জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া অভ্যাস, পোষাক ও পরিচ্ছেদ এবং ভাষা সংস্কৃতিতে ব্যবধান অনেক। এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা কোন দেশে কেমন ও জনগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে কি ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা পাচ্ছে সেটা এখন প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এই দেশে আমরা যে ধরনের স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছি, রাষ্ট্র ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসেবাকে কেমনভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে সে ব্যাপারে দেশের জনগণ প্রশ্ন রাখতে পারেন। আমিও এই দেশের একজন মালিক হিসেবে প্রশ্ন করতে পারি স্বাস্থ্যসেবায় রাষ্ট্র কতটুকু আন্তরিক। বর্তমানে বাজেটে ৫% টাকা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে। হিসাব করলে দেখা যায় বাজেটের ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫% স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দরে হিসাব করলে ২৬ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্য সেবায় সরকার ব্যয় করতে চাচ্ছেন। এই ২৬ হাজার কোটি টাকা ৬৪টি জেলায় জনসংখ্যার অনুপাত ধরে ভাগ করে দিলে কোন জেলা কত টাকা পাবে সেটা পরিষ্কার করে বুঝা যেতে পারে। এই হিসেবে আমাদের জেলায় ২৫ লক্ষ মানুষের জন্য ৪০০ কোটি টাকার স্বাস্থ্যসেবা ন্যায্য পাওনা। আমাদের জেলার ৪জন মাননীয় সংসদ সদস্য জনগণের অভিভাবক হিসেবে এই পাওনা অর্থ ও স্বাস্থ্য সেক্টরকে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করবেন কিনা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে এই জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা, সংসদ সদস্যবৃন্দের কাছে জবাবদিহি করবেন কিনা এবং জনপ্রতিনিধিগণ সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ থেকে শপথ বাক্য অনুযায়ী নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন কিনা, সেটাই আমার প্রত্যাশা। আমার মতো একজন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যক্তির কথা শুনলেই কি অথবা না শুনলেই বা কি? জেলায় ১৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা হাসপাতাল ৭টি, জেলায় ১টি মেডিকেল কলেজ আছে। এই প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন, আর এইসব প্রতিষ্ঠানে আমার মতো অধম ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যসেবা নিতে যান, তাদের সাথে জনপ্রতিনিধিবৃন্দের একটি আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠা জরুরী। মহান সংসদে যে সকল সদস্যবৃন্দ ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অনেক কথা বলেন, তারা কি মাঝে মাঝে নিজ এলাকার এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে একটু মতবিনিময় করতে পারেন না? ২৫ লক্ষ মানুষকে দেখার জন্য ৪ জন সংসদ সদস্য যে পরিমাণ পরিশ্রম করেন, ফেইসবুক বা পত্রিকায় ছবি ও অনুষ্ঠানে দেখা যায়, তাতে আমি মোটেও হতাশা প্রকাশ করি না। কিন্তু জেলায় অনেকগুলো সেক্টর আছে, যে সেক্টরগুলোর সাথে সংসদ সদস্যবৃন্দের মাঝে মাঝে কথা হলে জনগণের মধ্যে অনেক আশা সৃষ্টি হত। সংসদ সদস্যবৃন্দের নজর উপরের দিকে যেমন থাকে, তেমনি নিচের দিকে একটু থাকলে জনগণ অনেক খুশি হত। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে কি আমরা আমাদের কথাগুলো আমাদের জনপ্রতিনিধিবৃন্দের কাছে বলতে পারব না? সরকারি হাসপাতালে মাসের পর মাস ডাক্তার থাকবে না, রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি থাকবে না, হাসপাতালে পর্যাপ্ত ঔষধ থাকবে না, আবার হাসপাতালের পাশে ছোট ছোট মুদির দোকানের মতো ক্লি নিক গড়ে উঠবে, সেখানে রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি থাকবে, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের মোবাইলে কল করে ক্লিনিকে রোগী দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে, কিন্তু এ ব্যাপারে মানুষ কথা বলার জায়গা পাবে না। সেটা কেমনভাবে সম্ভব? এই জেলায় সাংবাদিক ভাইদের তথ্য মতে ৮৪টি ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল আছে। জেলার সিভিল সার্জন ও তার ক্লার্ক (বড় বাবু) এবং কতিপয় কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে প্রতিটি ক্লিনিক থেকে মাসে মাসে মাসোহারা নিচ্ছেন বলে জানা যায়। হয়তো বা কথা সত্য না হতেও পারে, কিন্তু ক্লিনিকগুলো নিয়ম মেনে মাসের পর মাস চলছে না। এটা তো জনগণ দেখছে যেখানে সিভিল সার্জন ও বড় বাবুদের সিন্ডিকেট এ বিষয়ে কি বলবেনÑএটাই প্রশ্ন সংসদ সদস্যবৃন্দের নিকটে।
এক্ষেত্রে এই জেলার চারজন সদস্য স্বাস্থ্যসেবা গণমুখী করার জন্য কতিপয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।
১. স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিচালনা পরিষদকে সচল করা ও স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ ও পর্যাপ্ত ঔষধ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করণে রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকবৃন্দের নিয়ে পর্যবেক্ষক টীম গঠন করা।
২. স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করা।
৩. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাসে কমপক্ষে ১টি স্বাস্থ্যসচেতনতামূলক মতবিনিময় করার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের দায়িত্ব বন্টন।
৪. সকল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বীমা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা ও বিনা খরচে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। লেখক: শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাসদ

The post সাতক্ষীরা জেলার সংসদ সদস্যবৃন্দের সহযোগিতায় নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা চাই appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3fZWIIV

No comments:

Post a Comment