Friday, March 5, 2021

বেলা অবেলা https://ift.tt/eA8V8J

রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
অনেকক্ষণ ধরে ডোরবেল একটানা বেজে চলেছে। বাথরুম থেকে তো জুলেখা ঠিকই শুনতে পাচ্ছেন আর কেউ শুনতে পারছে না নাকি!
তুতুল কি করছে কে জানে? এই দুপুর বেলা পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে হয়তো।

আর এ অসময়ে কে ই বা এলো। জুলেখার আরও কিছু কাজ বাকি ছিলো স্নানঘরে, খানিকটা বিরক্ত হয়ে সব কাজ ফেলে, গায়ে কোন রকম দু চার মগ হাপুস হুপুস পানি ঢালল বেলা গড়িয়েছে অনেকটা তারপর ভেজা শরীর কোন রকম আলতো করে মুছে, হুড়োহুড়ি করে কাপড় বদলিয়ে, জুলেখা বানু দরজা খুললেন একরাশ বিরক্তি নিয়ে।

দরজা খুলতেই জবাকে দেখে তার বিরক্তি আরও বেড়ে গেলো।
– তুই?
জবারও এমনিতে রাগে শরীর জ্বলছে। এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে? বাড়িতে কি সব মরে গেছে নাকি? সেই ধরে বেল দিচ্ছে তো দিচ্ছে কারো আসার নাম নেই।
তার উপর মায়ের অমন প্রশ্ন। কার না রাগ হয়? সেও ঝাঁঝিয়ে উঠল,
– কেন এ বাড়িতে আমার আসা বারণ নাকি?
– বারণ হবে কেন?
– তোমার কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে । তা না হলে…যাক সে যাক বলো মুখ অমন গোমড়া করে রেখেছো কেন?
– হাসাহাসির কি যথেষ্ট কারণ আর অবশিষ্ট আছে? খেটে খেটে মরে গেলাম কেউ খোঁজ নেবার নেই, আবার সবার ঝাড়ি ও খাচ্ছি সারাদিন, বড় কপাল করে এসেছিলাম তো পৃথিবীতে তাই এই দশা ।
– মা এত খোঁচা মারো কেন? খোঁচা খুঁচি আমার অসহ্য লাগে।
– আমার অবস্থায় পড়তিস তবে বুঝতি, কত ধানে কত চাল।সারা জীবন তো সবাই গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ালে, তা আর বুঝবে কি?
– আবার বুঝি ভাবির সাথে ঝগড়া করছো? তা দরজা থেকে সরবে, না চলে যাবো।
জুলেখা একপাশে সরে দাড়ালেন তবে আবার বললেন,
-দাড়া আগে হ্যান্ড ওয়াশ আনি, আর মাস্ক পরিসনি কেন?
– ওসব মাস্ক টাস্ক আমার ভালো লাগে না। তুমি দেখি ঝগড়া করার মুডে আছো সরো তো সরো, সোজা ওয়াশরুমে যাচ্ছি। এমনিতে গোসল হয়নি। ভালো কথা তোমাদের ওয়াশরুমে তো সাবান শ্যাম্পু থাকে না। না থাকলে দিয়ে যাও। আর হ্যাঁ লেদার খুলে লাল রং এর ম্যাক্সি আছে একেবারে উপরে, ওটা দিয়ে যেও।
– শ্যাম্পু শেষ, সাবান আছে।
তারপর জুলেখা বানু লেদারের দিকে তাকিয়ে বেশ উষ্মা প্রকাশ করলেন,
-এত ভারি ব্যাগ বয়ে এনেছিস কি কারণে?
– থাকবো ক’দিন।
– কদিন থাকবি মানে? এই তো সাত দিন আগে গেলি।
– আচ্ছা মা আমাকে কি ও বাড়িতে বেঁচে দিয়েছো?
– ও কথা আসছে কেন? মানুষ কি বলে বাপের বাড়ি এত ঘন ঘন এলে?
– আমি আমার বাড়িতে এসেছি ব্যাস তাতে কে কি বলল না বলল শুনতে আমার বয়ে’ই গেছে।
-তুই কারো ধার না ধারলেও আমাদের সমাজ নিয়ে চলতে হয়।
– আরে রাখো তোমার সমাজ। এটা আধুনিক যুগ। আমার সিদ্ধান্ত আমার, ব্যস। আর জুবায়েরের সাথে আমার থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই চলে এলাম।
– এসব আবার কি বলছিস তুই? দুদিন অন্তর নাটক আমার ভালো লাগে না। তোরা কি একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না আমাদের? কি বলবো আর।
আমার হয়েছে যত জ্বালা, সব কপালের লিখন,কোন পাপে যে এমন শাস্তি তিনিই জানেন।
সোমত্ত ছেলে স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে আছে,তার বউ রাত দিন হুমকি ধামকি দিচ্ছে, এখানে তার নাকি আর পোষাচ্ছে না।তার উপর তুই নিত্য নতুন অশান্তি। আমাদের বয়স হয়েছে জবা। আমরা আর পারছি না।
– মা দয়া করে তোমার বকবকানি থামাবে? এই একই ভাঙা রেকর্ড শুনে শুনে আর ভালো লাগে না।
[২]
জবা মায়ের কাছ থেকে সরে এসে গোসল সেরে ভাবির রুমে উঁকি মারলো। যেহেতু ভাইয়া অসুস্থ সেহেতু উঁকি মারতে দোষ নেই।
– ভাবি কি করো?
তুতুল চমকে ওঠে। চোখ বড় বড় করে তাকায়।যদিও সে একটুও চমকায়নি এসব তার ভান। সে বহু আগেই জবার আগমন টের পেয়েছে। জবা যখন গেটের মুখে জানালা দিয়ে তুতুল তাকে দেখতে পেয়েছে। মা মেয়ের গরম গরম বাক্য বান, তাকে নিয়ে আলাপ সবই তার কর্ণকুহরে যথাসময়ে প্রবেশ করেছে। সে এসব আর এখন পাত্তা দেয় না, গায়েও মাখে না।

জেনে শুনে ঢং করা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
– ওমা ননদিনী কখন এলে? কি কিউট লাগছে তোমাকে।
– এইতো কিছুক্ষণ। এসেই তো ঝগড়াঝাটি করলাম তুমি কোথায় ছিলে ,শোননি কিছু?
– আমার না কারো পারসোনাল ম্যাটারে ইন্টার ফেয়ার করা একদম পছন্দ না। তাই আমি ওসব কানে নেই না।
– তুমি না একদম আমার মতো, এজন্য তো তোমায় এত পছন্দ করি। সে যাক ভাবি কি রেঁধেছো আজ? আমার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে, কিন্তু মায়ের কাছে খাবার চাইলে হাজারটা কথা শোনাবে। তাই তোমার কাছে এলাম।
– তোমার পাগলামি আর যাবে না, এই অবেলায় কেউ না খেয়ে বের হয়?
– আর বলো না ,মা ছেলে দুজনার সাথে ঝগড়া করে খাওয়ার মুডটা নষ্ট হয়ে গেছিলো।
– কি নিয়ে আবার গোল বাঁধালে?
– আরে ভাইয়া সুস্থ হয়ে ওঠা অবধি ভাইয়ার মটর সাইকেলটা জুবায়ের দেখে শুনে রাখবে বলে নিয়ে গেল না। ওটা ও গতকাল বেঁচে দিয়েছে।
– কি? তুতুলের মুখ দিয়ে আর্তচিৎকার বেরিয়ে এলো।
– বেঁচে দিয়েছে মানে কি জবা? ওটা তোমার ভায়ের অনেক শখের মোটরসাইকেল ছিলো।
– সে আমি জানি না বলছো? তাই নিয়ে তো ঝগড়া। মহা ঝগড়া।
– তো বেঁচে দিলো কেন?
– কে জানে? নেশাখোর হলে যা হয়। বেঁচে জুয়া খেলেছে নয়তো কি? ও তো বলছে ও নাকি মায়ের জন্য এক জোড়া ঝুমকো গড়াতে দিয়েছে। তুমি বলো বুড়ো বয়সে কেউ ঝুমকো পড়ে ,না তাকে মানায়। সবটা শুনে আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিলো। আমার বাপের বাড়ির জিনিস আর তোরা মা ছেলে ভাগ বাটোয়ারা করছিস। লজ্জা হওয়া উচিত , না কি বলো?
– ওই মোটরসাইকেল মোটেও তোমার বাপের বাড়ির জিনিসের মধ্যে গন্য হবে না, ওটা তোমার ভায়ের খুব শখের। ওটাতে আমার টাকাও দেয়া ছিলো। শুধু ব্যবহার করলে ভালো থাকবে বলে দেওয়া। এখন যদি তোমরা বেঁচে খাও। তোমার ভাই সুস্থ হলে আমি কি কৈফিয়ত দেবো?
– ভাইয়া সুস্থ হবে? তুমি এখনো আশা করছো? আমার তো মনে হয় না ভাইয়া কোনদিন সুস্থ হবে। তুতুল জবার কথায় পাত্তা দিলো না। ফয়সালের ভালো হওয়া মন্দ হওয়ায় এখন আর তার কিছু যায় আসে না। সে যা সিদ্ধান্ত নেবার নিয়ে ফেলেছে।
কথা ঘুরিয়ে তুতুল বলল,
– তুমি প্রেম করার জন্য আর ছেলে পাওনি ননদীনি।এ তোমাকে তোমার পরিবারকে সারাজীবন জ্বালাবে।
– আমি কি করবো, বিয়ের আগে তো ভালোই ছিলো। লেখাপড়ায় ভালো, বাবার বড় ব্যবসা। সে কারণে তো মা বাবার অমতে গিয়ে বিয়েটা করলাম। কত কান্ড করে তারপর সব মীমাংসা হলো।জানো তো সবই।
তুতুলের মনটা জবার কথা শুনে হঠাৎ করে বিগড়ে গেছে, এই সব দায়িত্বজ্ঞানহীন লোভী মানুষগুলো দেখলে তার রাগে গা জ্বলে। এবার সে নিজের কাজে মন দিলো। আজ বিজয়ের সাথে দেখা করতে হবে। এ বাড়িতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
[৩]
রাকিব সাহেব অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। অবসরে গিয়েছেন তিন বছর হলো। সারা জীবন স্কুল আর টিউশনি করে তার দিন পার হয়েছে এ যাবৎকাল । দারিদ্রতার কারণে পুরোটা জীবনে অন্য কোন দিকে নজর দেবার ফুরসত খুব একটা পাননি তিনি।
যদিও এ নিয়ে আক্ষেপ বা অভিযোগ কোনটিই তার নেই। তিনি তার কাজ আর জীবন নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট।সবচেয়ে বড় কথা তিনি সৎ ভাবে জীবন যাপন করতে পারছেন এটা তার কাছে অনেক গর্বের বিষয়।
তার জীবনটাও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কেটে গেছে। একই ধারায় বয়ে গেছে, মেয়েটা যা একটু বেয়াড়া তা বাদে আর সব ঠিক ঠাক চলেছে বরাবরই যেমনটি তিনি চেয়েছেন । যদিও ছেলের পড়াশোনা বেশি দূর হয়নি।সবার দ্বারা সব কিছু হয় না তাও তিনি জানেন ,এনিয়ে তার কোন আফসোস নেই। তিনি ছেলেকে শর্ট একটা কোর্স করিয়ে ফার্মেসীতে বসিয়ে দিয়েছেন।
রায়হান এক্ষেত্রে বেশ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে, দ্রুত ব্যবসা দাঁড় করিয়ে সে নিজে উদ্যোগী হয়ে বাবার টিউশনি ছাড়িয়েছে। বাবাকে সে জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।বাবার কষ্ট সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।
তারপর আর কি, রাকিব সাহেবের কাজ বলতে বাজার করা আর নাতিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা।তার বাইরে অখন্ড অবসর।
তার এত অবসর দেখে জুলেখা মাঝে মাঝে খোঁচা মারতে কম করেন না।
– নবাব সাহেব আপনার মতো ঝাড়া হাত পা হলে আমি একটু বাঁচতাম। কবে যে সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত হবো আল্লাই জানেন!
রাকিব সাহেব স্বভাবে বেশ রাশভারি হলেও রোমান্টিকতায়ও তিনি কম যান না তৎক্ষনাৎ তিনি উত্তর দেন,
-এবার তাহলে চলো যেখানে যা আছে , ছেলে আর ছেলের বউকে সব বুঝিয়ে দিয়ে দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলে যাই।
-এই যে মাস্টার মশাই দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকে না হয় গেলাম কিন্তু খাওয়া জুটবে কি হাওয়া থেকে? গেলে তুমি যাও আমার অত শখ নেই।
– সব শখ তাহলে মিটে গেছে বুঝি? আলহামদুলিল্লাহ।
– গলা অত চড়াচ্ছো কেন? আস্তে কথা বলো, ওরা সবাই শুনছে।
রাকিব সাহেব চুপ করেন বটে তবে ঠোঁট চেপে মিটমিটিয়ে হাসেন তাই দেখে জুলেখা ঝনঝনিয়ে উঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,
-বুড়ো বয়সে যত সব ভীমরতি, দেখলে গাঁ পিত্তি জ্বলে যায়। বয়স বাড়ছে আর ফাজিল হচ্ছে। যাচ্ছেতাই লোক একটা।
[৪]
জীবন কখনো সাজানো ছকে চলে না, কখন যে কার জীবনে কি ঘটবে কেউ তা জানে না। দিন ভালোই কাটছিলো রাকিব সাহেব ও তাঁর পরিবারের এর মধ্যে হঠাৎ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো মহামারী করোনা,অনেক মানুষের মতো করোনা রাকিব সাহেবর জীবনও লন্ড ভন্ড করে দিলো।
লকডাউনে রায়হানের ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও বেচাবিক্রি সর্ব নিম্ন পর্যায়ে নেমে এলো,তবুও সংসার চালানোর দায় থেকে রায়হান ফার্মেসি খুলে বসে নিয়মিত।
এর মধ্যে একদিন প্রচন্ড গায়ে ব্যথা আর জ্বর নিয়ে সে বাড়ি ফিরে আসে। দিন পার হতে না হতে তার অবস্থার ক্রমাবনতি হয়। বাড়ির সবাই ধারনা করেন রায়হানের করোনা হয়েছে কারণ করোনার প্রায় সব লক্ষ্মণ তাঁর মধ্যে বিদ্যমান, রাকিব সাহেব ঠিক করেন ছেলে সহ বাড়ির সকলের করোনা টেস্ট করাবেন। দেরি করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
কিন্তু রায়হানের স্ত্রী তুতুল হঠাৎ বাঁধ সাধে তাঁর মায়ের পরামর্শে। সে নানা যুক্তি উপস্থাপন করে যে, করোনা হোক বা না হোক ,টেস্ট করতে গেলে আশে পাশে পাড়া প্রতিবেশি সবার চোখে তারা নাকি ছোট হয়ে যাবে। আর যদি করোনা পজেটিভ হয় তাহলে তো ষোলকলা পূর্ণ, নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে সবাইকে। এক ঘরে হতে হবে, বাড়ি লকডাউন হবে,পাড়া প্রতিবেশি উঁকি ঝুকি মারবে, বাজে কথা বলবে। ইট পাটকেলও নিক্ষেপ করতে পারে। করোনা সেরে গেলেও তেমন একটা কেউ মিশতে চাইবে না। নানা কথার খোঁচায় জর্জরিক করবে।
তুতুল এই বিপথ থেকে উদ্ধারের বিকল্প পথও বাতলে দেয়। এলাকার এক কোয়াক ডাক্তার আছেন নাম তার ফুল ডাক্তার। তাকে দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে।
ফোনে ফুল ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তার ওষুধে রায়হান ঠিকই সেরে উঠবে। অনেকে নাকি এমন গোপন চিকিৎসায় ভালো হয়ে গেছে। এতে নিজেদের সামাজিক অবস্থানের কোন সমস্যা হবে না। বলা যায় সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না।
রাকিব সাহেব বারবার অসম্মতি জানালে জবা আর তার মা ও তুতুলের পক্ষ নেয়। আসলে তুতুল তাদের আগে থেকে নানা রকম উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে হাত করে রেখেছে।
এভাবে ফুল ডাক্তারের চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দিন দুই পরে রায়হানের শারীরিক অবস্থা মারাতœক অবনতি হলে, হাসপাতালে নিতে সেখান থেকে তারা জানালো রুগি স্ট্রোক করেছে। রুগির ব্লাড প্রেশার মারাত্মক হাই। ডায়বেটিস ও আছে। অথচ রায়হানের পরিবারের লোকজন রায়হানের এ ধরনের শারিরীক সমস্যার কথা এত দিন জানতেন না।
কিভাবে কি হলো কে জানে?
নানান টেষ্টের পরে আশার কথা রায়হানের করোনা লক্ষ্মণ থাকলেও করোনা হয়নি। সিজেনাল জ্বর। কিন্তু ভুল চিকিৎসায় শারীরিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।
গ্রোতের মত টাকা খরচ হলো। অমানুষিক ভোগান্তি তার বদলে রায়হানের শারীরিক উন্নতি হলো যৎ সামান্য। মাস খানিক পরে যখন রায়হান বাড়িতে এলো তখন সে কোন রকমে পা টেনে টেনে হাঁটতে পারে। আর অনেক ক্ষণের প্রচেষ্টায় আব্বা বলে ডাকতে পারে।
যেহেতু ফার্মেসী ব্যবসার কিছু বোঝেন না রাকিব সাহেব তাই ফার্মেসী বেঁচে দিলেন পানির দামে। এছাড়া কি আর করবেন?
সংসারই বা চলবে কি করে? রাকিব সাহেব আবার ফিরে গেলেন পুরানো পেশায়,টিউশনিতে।
প্রথমদিকে টিউশনি পাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে গেলো। ফার্মেসি বেঁচা পয়সার হাত দিতে হলো বাধ্য হয়ে। জুলেখার গয়নাগুলো হাতছাড়া হয়ে গেলো।
পরবর্তীতেও পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আয়ের বেশির ভাগ খরচ হয়ে যেতে লাগলো রায়হানের চিকিৎসায়।
এর মধ্যে জবা আর তার জামাই নিয়ে হাজির হলো নতুন বায়না নিয়ে।
[৫] সেদিন জবার জন্মদিন ছিলো। করোনা, রায়হানের অসুস্থতা সাথে বিবিধ পারিবারিক সমস্যার কারণে জুলেখার মনটা অস্থির থাকে সবসময়।
সন্ধ্যাবেলা জবা ফোন দেয় মাকে,
– মা কি করো।
– এই নামাজ পড়ে উঠলাম।
– আমার কথা এখন আর তুমি অতটা ভাবো না তাই না?
– ওমা তা কেন হবে। এই তো নামাজ শেষে তোর, জামাই আর কণার জন্য দোয়া করলাম।
জবা অভিযোগের সুরে বলল,
-তোমাদের চিন্তা ভাবনা এখন শুধুই ভাইয়াকে নিয়ে।আমাকে তো পর করে দিয়েছো।
– তোর ভাইটা অসুস্থ তাকে নিয়ে এত অভিযোগ করা কি ঠিক?
– অভিযোগ করলাম কোথায়? আমি কি তোমাদের ব্যাপারে কিছু বলার অধিকারও হারিয়েছি?
– কি ভুল ভাল বকছিস। এসবের জন্য ফোন করেছিস?
– জানি তোমরা এখন আর আমাকে ভালোবাসো না, আমাকে তোমরা পর করে দিয়েছো। এখন আমার সব কথা তোমাদের তিতা লাগে যাহোক যা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম, আজ আমার জন্মদিন তোমরা মনে রাখার প্রয়োজন বোধটুকুও করনি। ভালোই হলো আমি জানলাম আমার পরিবারের আমি অবাঞ্ছিত।
জুলেখা অস্বস্তিতে পড়লেন তার অন্তত এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত ছিলো। নানা অশান্তিতে সব ভুল হয়ে যায় ইদানিং।
– মা রাখছি। আরো একরাশ অভিমান ঝরে পড়লো তার কন্ঠে।
জুলেখা বানু ফোনে ওদের নিমন্ত্রণ জানালো রাতে খাওয়ার। জবা আসলে জামাইকে নিয়ে এ বাড়িতে আসার বাহানা খুঁজছিলো। সেটা হয়ে গেলো।
– দেখি তোমার জামাইকে বলে ও যদি আসতে চায় তো একবার ঘুরে যেতে পারি তোমাদের ওখান থেকে। আমি পরে জানাচ্ছি।
জুলেখা জানেন জবা আসবে। তিনি রান্নাঘর ঘরে যান, আজ এমনিতে শুক্রবার ছিলো। মাংস আর ডিম ভূনা করা ছিলো। তুতুল তার মায়ের বাড়ি গেছে মেয়েকে নিয়ে। খাবার প্রায় সবটাই রয়ে গেছে। মাছ ভাজি আর সরষে ইলিশ সাথে প্লেইন পোলাও করে দিলে ভালোভাবে সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।

জুলেখা ফ্রিজ খুলে অবশিষ্ট ইলিশ মাছ বের করে আনলেন।
তুতুল আর কাজরী এখনো ফেরেনি। হয়তো ফিরবে না। আজকাল তুতুল বাপের বাড়িতে থাকতে বেশি পছন্দ করে অথচ রায়হানের এখন সবচেয়ে বেশি তাকে প্রয়োজন। জুলেখার কানে অনেক কথাই আসে তুতুল সম্পর্কে তিনি অনেকবার ভেবেছেন কিছু জিজ্ঞেস করবেন।তারপর কি জানি কি ভেবে আর জিজ্ঞেস করা হয় নি।
রায়হানের বাবা এখনো সম্ভবত এসব ব্যাপারে কিছু জানেন না বা শোনেন নি। পুরুষ মানুষ অত শত বোঝেনও না, তবে জানতে পারলে ভীষণ আঘাত পাবেন।
এ ক’মাসে তার উপর দিয়ে অকল্পনীয় ঝড় ঝঞ্ঝা গেছে তার উপর জবার জ্বালাতন। না আজকাল মনে হয় এসব দেখার চাইতে মরে যাওয়া অনেক ভালো ছিল। অন্তত এতো কষ্ট পেতে হতো না।

The post বেলা অবেলা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2PClKFM

No comments:

Post a Comment