Friday, March 5, 2021

প্রেম যেন ফুটে থাকে তোমার জামায় https://ift.tt/eA8V8J

আশিস মিশ্র
‘ কবি তো তোমার দাস / সেই আনন্দে লাস্যময়ী হয়ে ওঠো/ হয়ে ওঠো বিচিত্রচারিণী..”। আহা, কী অপূর্ব। কবি হরপ্রসাদ সাহুর এই চরণ কতোদিন আগে পড়েছিলাম, আজও মনে আছে। মনে পড়ে কবি দীনেশ দাশের ” চাঁদ দিল তোমার বুকে দুটি গোল দুধের বাটি “। কিংবা প্রেমেন্দ্র মিত্রর ” হাওয়া বয় শনশন/ তারারা কাঁপে / হৃদয়ে কি জং ধরে / পুরনো খাপে..”। কিংবা — ” কার সে মুখ, কার / প্রাণেশ্বরী পরমা যন্ত্রণার..”।
শুধু একটি দিন কেন, প্রতিদিনই প্রেমের দিন। প্রাণেশ্বর ও প্রাণেশ্বরী, পরমা যন্ত্রণা পেতে পেতে ভেসে যাবে চুম্বনের ¯্রােতে। মুখে মুখে তার ফুটে উঠবে শ্যামল জানার ” একটি চুম্বন রেখেছি জলে / তব্ওু নদী তোমার কথা বলে। ” আর শ্যামলকান্তি লিখে যাবেন — আজ টুকটুকির বিয়ে। অথবা, প্রেম –” এসেছে গাছের মতো/ মাটি যেন তোমাকেও পায়/ প্রেম যেন ফুটে থাকে / বারবার তোমার জামায়। ” আর শংকর চক্রবর্তী লিখে যাবেন ” একটা কোকিল বসন্ত ডাকার আগেই কার্নিশের ধারে ঝিম মেরে আছে। ” আর সুজিত সরকার লিখে যাবেন -” আকাশ আরও আকাশ”। বা ” কিছু না বলেও অনেক কিছু বলা যায়।” আরও কত কী। বুদ্ধদেব বসু, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত , আলোক সরকার, উৎপলকুমার বসু,মনীন্দ্র গুপ্ত, অমিতাভ দাশগুপ্ত, কালীকৃষ্ঞ গুহ, রণজিৎ দাস, মৃদুল দাশগুপ্তর কবিতা থেকে শুরু করে বাংলা কবিতায় ‘প্রেমের কবিতার সংখ্যাই ‘ সবচেয়ে বেশি। দুই বাংলার আরও অনেক কবির নাম বলা যায়। মনে পড়ে পরাণ মন্ডলের চরণ –” ভেঙে যাবে বুক তবুও তো বিদায়ের আয়োজন চলে; / বুকে ধর প্রেম মোহহীন মায়াজলে –ভাসাও আমাকে, / ডোবাও আমাকে –ডোবাও অশ্রুজলে… “।
এতো প্রেম আমাদের, কারো কাছে ধার চাইতে হয় না।
আর এখনকার ছেলেমেয়েরা– প্রেম কী, মনে হয় বুঝেও বোঝে না। সারাক্ষণ কানে মোবাইল গুঁজে তারা কী যে চুঁ চাঁ করে বুঝি না। খালি একটাই শব্দ জানে ” প্রপোজ “। সারাক্ষণ চ্যাটের ভাষা লিখতে লিখতে হয় তাদের ফ্যাট কমে যাচ্ছে, বা ফ্যাট বেড়ে যাচ্ছে। তাদের একজনকেও বলতে শুনলাম না শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সেই চরণ ” আমার কাছে আসতে বলো / একটু ভালোবাসতে বলো / বাহিরে নয় বাহিরে নয় / ভিতর জলে ভাসতে বলো..”। কিংবা অমিতাভ দাশগুপ্তর ” তেমন করে ভালোবাসলে পাথরও ঝর্ণা হয়ে যায় / তুমি তো কোন নারী.. “। কিংবা শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়ের ” গতবছর এমন দিনে ছোট্ট ছিলে / এবছর হঠাৎ হলে মস্ত বড়ো / তোমায় বাঁধে এমন বিদ্যে কেউ শেখেনি / যত বিশাল পাত্রে রাখি উপচে পড়ো..”। কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ” ভ্রুপল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে..। কিংবা বিনয় মজুমদারের ” তোমার ঠিকানা আছে আমার বাড়িতে / আমার ঠিকানা আছে তোমার বাড়িতে..”। কিংবা শঙ্খ ঘোষের ” যুবতী কিছু জানে না / শুধু প্রেমের কথা বলে/ দেহ আমার সাজিয়ে ছিল / প্রাচীন বল্কলে..”।কিংবা জীবনানন্দের ” সুচেতনা তুমি এক দূরতর দ্বীপ.. “।
আরও কতো আছে। লিখলে সারাবছর কেটে যাবে।
কিন্তু এই প্রজন্ম কি মনে মনে বলে ” তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে / কেউ তা জানে না.. “। না, বলেই না। তাদের সব অন্য ব্যাপার। অন্য গান। ঝিনচাক, ঝিনচাক। মান্টি সোনা, বান্টি সোনা। যাই করো বসন্তের এই মাতাল সমীরণ যদি না থাকে, তখন তো ঠোঁটে ঠোঁট লাগাতে গেলে ক্যাটবেরীর বদলে নুনের স্বাদ পাবে। আর মাতাল হয়ে গাইতে গাইতে নাচতে পারবে তো — ” পিঁন্দারে পলাশের বন পালাব পালাব মন… “। গাও গাও,নাচো, আরও নাচো। যৌবনবনের সেই স্বাদ গ্রহণ করো। আর মুখে মুখে কবিতা বলো —
” কালকে ছিল ভি ডে/ আজ কাছে আয় টি দে। ” টি মানে চুমু। বাংলাদেশের সেই মেয়েটি টেলিফোনে কত যে টি দিয়েছিল একদিন!! ভোলার নয়। আর একজনের ডাকে গাছতলায় দাঁড়িয়ে কালবৈশাখীর জলে তুমুল ভিজে গেছিলাম একদিন। দশম শ্রেণির মেয়েটি আর আছে এলো না। কোনোদিন আর আসবে না। প্রেমে পড়ার বয়স ফুরিয়ে গেছে। এখন তাই মনে হয় ” আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো / বুড়ি চাঁদটারে কালীদহে বেনোজলে করে দেবো পার/ তারপর দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাবো/ জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার..। ”

চলে যাবো। চলে যায়।
তবুও অশ্রুজলে ডুবছে কত চোখ। প্রেমে পড়া চোখ ভিজে যায় না কারুর, এ হতে পারে না। ‘ আলো আমার আলো ‘ ছবির শেষ দৃশ্যটি একবার মনে করুন। সুচিত্রা সেন বাড়ির বারান্দা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন, শেষে তাঁর চোখে জল। তার পেছনে এগিয়ে আসছেন ধির পায়ে উত্তমকুমার। অশ্রুনয়নে পেছনে ঘুরে সুচিত্রা ঝাঁপিয়ে পড়লেন উত্তমের বুকে। কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, কোথাও তুমি যেতে পারবে না। কোথাও না।
এমন আরও কিছু দৃশ্য আছে। যেমন সাগরিকা, অগ্নিপরীক্ষা, পথে হলো দেরি, চাওয়া পাওয়া, হারমানাহার ইত্যাদি। সেই সব প্রেমের ছবিগুলি আজও বারবার দেখতে ভালো লাগে। যত পুরনো হচ্ছে, ততই মনে হচ্ছে এই তো যেন রিলিজ হলো।

সেই সব দিনের প্রেমের গানগুলির কথাও ভাবুন। কী মায়াটান তাতে…
সেই টান… রেডিওতে শোনা সব নাটক। মনে পড়ে মপাসাঁর গল্প অবলম্বনে নাটক ‘ বেদেনী ‘। তা শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ত। কিংবা সেই সব গল্প, উপন্যাস…। বাঙালি পাঠক – পাঠিকা পড়ে কাঁদেনি, এমন ঘটনা নেই। প্রেমের টানাপোড়েনে সেই সব গল্প, গল্পের চরিত্রদের ভোলা যায় না আজও।
তেমনি একান্তে পড়া পাবলো নেরুদার প্রেমের কবিতার বাংলা অনুবাদ….।

শুধু কি তাই? রবীন্দ্রনাথ- নজরুলের গানের অমোঘ টান। আমাদের কিছু আর দরকার নেই! রবীন্দ্রনাথ – নজরুলের যত প্রেমের গান আছে, তার সবই যেন এই জগতের চিরন্তন অক্ষর ও বাক্য। শুনতে শুনতে মনে হয় এই বয়সে প্রেমে যদি সত্যিকারের পড়তে হয় — তাহলে ওই সব গানের প্রেমে পড়বো আর গেয়ে যাবো — “‘যৌবনসরসীনীরে মিলনশতদল / কোন চঞ্চল বন্যায় টলোমল টলোমল।। “

The post প্রেম যেন ফুটে থাকে তোমার জামায় appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/30i0qaI

No comments:

Post a Comment