দেবহাটা ব্যুরো: সাতক্ষীরার দেবহাটায় নোড়ারচক-চারকুনি ভূমিহীন জনপদের হাজার হাজার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে কথিত ভূমিদস্যু ইসমাইল বাহিনীর কাছে। বর্তমানে গোটা ভূমিহীন পল্লীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইসমাইল বাহিনী।
চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে সরকারি জমি বেচাকেনা, টাকার বিনিময়ে বাহিনী দিয়ে জমি দখল, কথায় কথায় ভূমিহীনদের ওপর হামলা, রাতের আঁধারে অন্যের মৎস্য ঘের লুট আর অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করে পাঁচ শতাধিক নিরীহ ভূমিহীন পরিবারের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে বাহিনী প্রধান ভূমিদস্যু ইসমাইল গাজী। সে বর্তমানে চারকুনি এলাকার বাসিন্দা ও মৃত আকরাম গাজীর ছেলে।
একসময়ে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ মহাসড়কের পাশে সরকারি জমিতে বসবাস করা ইসমাইল গাজী কয়েক বছরের ব্যবধানে কাঠ মিস্ত্রি ও অন্যের মৎস্য ঘেরের কর্মচারী থেকে এখন বনে গেছে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক। ভূমিহীন জনপদে আধিপত্য ও নিজস্ব বাহিনী থাকায় অশিক্ষিত ইসমাইল গাজী টাকার জোরে বাগিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের ভুঁইফোড় সংগঠন প্রজন্মলীগের উপজেলা সভাপতির পদ। একইসাথে রয়েছে উপজেলা যুবলীগের ত্রান বিষয়ক সম্পাদকের পদেও।
সুচতুর ইসমাইল দেবহাটা থানা পুলিশের দু’একজন সদস্যদের মাঝেমধ্যে বাড়িতে নিয়ে ভুরিভোজ করিয়ে সেই দাপটে শোষন করে আসছে নীরিহ ভুমিহীনদের। অফিস খুলে প্রতিনিয়ত শালিস বিচারের নামে বাদী-বিবাদী দুপক্ষের কাছ থেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ইসমাইল ও তার দলবল। চাঁদাবাজি, সরকারি জমি বেচাকেনা, বাহিনী দিয়ে জমি দখল, অন্যের মৎস্য ঘের লুটসহ নানা অপকর্মের টাকায় চারকুনিতে অন্যের বন্দোবস্তকৃত সরকারি খাস জমিতে আলীশান বাড়িও গড়ে তুলছে এক সময়ের বাস্তহারা ইসমাইল গাজী।
কয়েকমাস আগে নোড়ারচক-চারকুনির একাধিক ভুমিহীন নেতার ওপর হামলা ও তাদেরকে মারপিট করে ওই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে ইসমাইল বাহিনী। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আবদার ও করিমের দুটি পক্ষের কাছ থেকে প্রশাসনের নাম করে লক্ষাধিক টাকাও হাতিয়ে নেয় সে। ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে ভুমিহীন জনপদ। সম্প্রতি আবারও ভূমিহীন পল্লীতে বিদ্যুতায়নের নামে কয়েকশ ভুমিহীন পরিবারের কাছ থেকে চাঁদাবাজি ও ভুমিহীনদের মাঠ সংলগ্ন সরকারি ৪/৫ বিঘা খাস জমি অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ভূমিদস্যু ইসমাইলের বিরুদ্ধে।
নোড়ারচক-চারকুনি ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কয়েক বছর আগেও ভূমিহীন পল্লীর মানুষরা স্বস্তিতে ছিল। অথচ বর্তমানে ভূমিদস্যু ইসমাইল বাহিনীর অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শুধু নিরীহ ভুমিহীন পরিবারের সদস্যরা নয়, ওই পল্লীর একাধিক ভুমিহীন নেতাও ইসমাইল বাহিনীর আতঙ্কে রয়েছে। কথায় কথায় ভূমিহীন সদস্য ও নেতাকর্মীদের হুমকি আর হামলা চালিয়ে আসছে ইসমাইল বাহিনী।
তারা আরও জানান, গত কয়েক মাসে ভুমিহীনদের খেলার মাঠের জমি থেকে চারকুনির মৃত এন্তাজ সরদারের ছেলে লিয়াকাত, আনছার খাঁ’র ছেলে জাহিদ খাঁ, জামালউদ্দীনের ছেলে মুর্শিদ গাজী, মৃত এলাহি কারিকরের ছেলে সাবুর আলী ওরফে পুটু এবং আহম্মদ ও সালেহাসহ একাধিক ব্যাক্তির কাছে প্রায় ৫ বিঘা সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে বিক্রি ৬ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ভূমিদস্যু ইসমাইল গাজী।
জমি কেনার কথা স্বীকার করে মুর্শিদ গাজী বলেন, ৩-৪ মাস আগে আমি ইসমাইলের কাছ থেকে ভূমিহীন মাঠের সাথে লাগোয়া ১ বিঘা সরকারি জমি প্রচলিত দাম দিয়ে কিনেছি। এছাড়া অপর ক্রেতা লিয়াকাত, জাহিদ খাঁ, সাবুর আলী পুটু ও আহম্মদসহ অন্যান্যরাও ভূমিদস্যু ইসমাইলের কাছ থেকে ভূমিহীন মাঠের সরকারি জমি কেনার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ভূমিদস্যু ইসমাইলের পৈত্রিক সম্পত্তির মতো ভুমিহীন জনপদের সরকারি জমি বিক্রির ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন একাধিক ভূমিহীন নেতারা। পাশাপাশি অত্যাচারী এ বাহিনীর নীপিড়ন থেকে রেহাই পেতে এবং বাহিনী প্রধান ইসমাইলকে আইনের আওতায় আনতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ভুমিহীনরা।
চারকুনির মৃত বদিউল্লাহ কারিকরের ছেলে ছফেদ আলী বলেন, আমার বাবার নামে ৩৭ শতক জমি সরকার বন্দোবস্ত দেয়। তা থেকে ১৬ শতক জমি আমার বোন বাবার কাছ থেকে স্ট্যাম্প করে নিয়ে মুর্শিদ গাজীর কাছে অল্প কিছু টাকায় বন্ধক রাখে। পরে আমার ভিটেবাড়ি বাদে বাকি সবটুকু জমি ইসমাইল গাজী জবরদখল করে সেখানে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করে চলেছে। আমি নিরীহ মানুষ, তাই মামলা করেও কোন ফল পাইনি। উল্টো রাতদিন ইসমাইলের হুমকির মুখে বসবাস করছি।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে ভুমিদস্যু বাহিনী প্রধান ইসমাইল বলেন, আমি কোন জমি বিক্রি করিনি। তবে কয়েকজনকে বিনা টাকায় ভূমিহীন মাঠের জমি দিতে চেয়েছি। কয়েক বছরে বাস্তুহারা থেকে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, আমি সাতক্ষীরার মন্টু মিয়ার মৎস্য ঘেরের ম্যানেজার। আমার বেতনের টাকা দিয়ে বাড়ি করছি।
The post দেবহাটায় ভূমিহীন জনপদের মানুষ আতঙ্কে! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3ymk4S7
No comments:
Post a Comment