Tuesday, November 2, 2021

বেকার সমস্যা সমাধানের পথ আমাদেরকে খুজে বের করতে হবে https://ift.tt/eA8V8J

জহিরুল ইসলাম শাহিন
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ঘন জনবহুল দেশ। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা এতটাই বেশী যাহা পৃথিবীতে অন্য কোন দেশে নেই। সুতরাং দিন দিন জনসংখ্যা বাড়বে এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেকার সমস্যাও সৃষ্টি হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মৌসুমী বায়ুর প্রভাব আমাদের দেশে এতটাই প্রবল যার ফলে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা ও খুব বেশী হয় এবং অনেক সন্তান খুব সহজেই জন্ম দিতে পারে। সুতরাং জন সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতনতা এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

জন্ম হার একটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই আমার মনে হয় বেকার সমস্যা অনেকটা ঘুচানো সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে সরকার সহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা ও শিক্ষিত জনগনকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যখন থেকে শিশু মায়ের কোল ভরে জন্ম নেয় তখন থেকে সে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের কাছে আদর যতœ পেয়ে লালিত পালিত হতে থাকে। আস্তে আস্তে সে বড় হতে থাকে এবং বাবা মা ও স্বপ্ন দেখতে থাকে আমাদের সন্তান অনেক বড় হবে, অনেক বড় চাকরী করবে, বৃদ্ধ বয়সে আমরা অতি সাচ্ছন্দে জীবন যাপন করবো।

মনে কোন কষ্ট থাকবে না। খুব সুখেই অবশিষ্ট দিনগুলি কাটিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহন করবো। কিন্তু বিধিবাম এটা সম্ভব হয়ে উঠে না। ছেলেটি বা মেয়েটি যখন জীবনে পূর্ন বয়সে পদার্পন করে তখন সে ভাবে লেখা পড়া শেষ করার পর অনেক বড় চকরী পাবো। কারোর উপর নির্ভর করবো না। স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করবো কিন্তু দেখা যায় কি, আমাদের দেশে চাকুরীর বিভিন্ন পদ অনেক স্বল্প।

সেক্ষেত্রে প্রতিযোগীর সংখ্যা অনেক বেশী সুতরাং যোগ্যতা, দক্ষতা, প্রতিভা ও মেধা থাকা স্বত্বেও তাকে চাকরী থেকে অনেক দূরে সরে যেতে হচ্ছে। জীবনে নেমে আসে তখন অমবস্যার অন্ধকার রাত। জীবনে নেমে আসে তখন দুঃখ কষ্ট, হতাশা ও নিরাশা। সুতরাং লেখাপড়া শেষ করার পর সরকারী বা বেসরকারী চাকরীর উপর নির্ভর করলে চলবে না। অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে জীবনের কোন লক্ষ্যে পৌছাতে হলে বা উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে হলে নিজস্ব মেধা বা প্রতিভা দ্বারা সেটা সম্পন্ন করেত হব্ েউদ্দেশ্য সিদ্দির জন্য চেপ্টার নাম সাধনা। সাধনা ছাড়া পৃথিবীতে কেহ কখনও বড় হতে পারেনি।

তাই মনিষীদের ইতিহাস যদি আমরা জানার চেষ্ট করি তাহলে দেখবো তাদের সফলতার পিছনে যে জিনিসটি বেশী কাজ করছে তা তাদের শ্রম এবং সাধনা। এখন মোর্দ্দা কথায় আসা যাক একটি ক্ষুদ্র আয়তনের এবং সীমিত সম্পদের এ দেশে জনসংখ্যাই প্রধান সমস্যা এবং এই অতি জনসংখ্যাই উন্নতির অন্তরায়। ১৯৮১ সারে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৬২৪ জন ১৯৯১ সালে তা বেড়ে দাড়ায় ৭৭৫ জনে এবং ২০০১ সারে আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যার এ হার দাড়ায় ৮৭৬ জনে এবং ২০০৮ সালের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ৯৫৩ জন। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় লোকসংখ্যা ১৮ কোটি। জনসংখ্যা এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনসংখ্যা দাড়াবে ২৫ কোটিতে এটা আমার ব্যক্তিগত ধারনা।

সুতরাং এই ধারনা থেকে ¯পষ্ট ভাবে আমরা বলতে পারি আগামী দিন গুলিতে বেকার জনগনের সংখ্যা অধিকতর বৃদ্ধি পাবে। বেকার সমস্যা বেকারত্ব বৃদ্ধির উপর যেমন অভিশাপ স্বরূপ তেমনি কোন দেশ বা জাতি কিংবা দেশের অর্থনীতির উপর ও একটা অভিশাপ স্বরূপ। যদি অসংখ্য কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন বা বেকার হয়ে পড়ে তাহলে দেশের সংকট যে কোন স্তরে যেয়ে পৌছায় তা বলাই বাহুল্য। বেকার এর শাব্দিক অর্থ কর্মহীন। যার কোন কাজ নেই সেই বেকার।

অর্থনীতির পরিভাষায় আমরা বলতে পারি বেকার সেই যে কাজ কারার যোগ্যতা এবং ইচ্ছা থাকা সত্বেও কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগ পায় না। সমাজ বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলতে গেলে যখন সমাজে যথেষ্ঠ কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে কর্ম সুযোগ কম থাকে তখনই বেকারত্ব দেখা দেয়। আমাদের দেশে জনসংখার অনুপাতে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। ফলে মানুষ কাজের সন্ধানে ছুটছে দিশেহারা হয়ে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কিছুটা আছে কৃষিক্ষেত্রে কারণ বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ।

আর কৃষি নির্ভর এই কাজ মৌসুম অনুযায়ী হয়ে থাকে। অতি বৃষ্টির কারনে আবার খারাপ সময়ে কৃষকদের কাজ থাকে না ফলে কৃষকরাও এই সময়ে বেকার হয়ে পড়ে। বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশী। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশী বেকার তাদের হাতে প্রত্যাশিত পেশা বৃত্তি বা কাজ নেই। বাংলাদেশ যদিও কৃষি প্রধান দেশ অথচ কৃষি নিদারুণ ভাবে অনুন্নত। দেশের যে অল্প সংখ্যক মানুষ অবস্থা সম্পন্ন তারা ব্যবসায় বানিজ্যের ক্ষেত্রে বিমুখতা ও নিরুৎসাহ দেখায়। লোক সংখ্যার অনুপাতে নতুন নতুন কর্মের সংস্থান না হওয়ায় দেশে বেকার লোকের সংখ্যা বাড়ছে।

সুতরাং এ মুহুর্তে আমাদের দেশ বেকারত্বের ভীতিকর আবর্তের মধ্যে পড়ছে। শিল্পের প্রসার ও তেমনটা চোখে পড়ার মত নয়। বিদেশী পন্যের চাপে এখানকার শিল্প সংকটে নিপতিত হচ্ছে দিন দিন। কুটির শিল্প গুলোও এদেশে ইংরেজরা আসার পর মার খেতে থাকে। তারা এদেদেশর কুটির শিল্পগুলোকে পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংশ করে ফেলে। ১৯৫১ সালের একটি হিসাবে দেখা যায় মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৩০ ভাগই বেকার রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানি শাসক চক্র থেকে মুক্তি পেলেও এর দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের কারনে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যংকের মন্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতকি কাঠামোয় বেকার সমস্যার সমাধান এক দুরহ কাজ।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয় যে, গ্রাম অঞ্চলের গরিব বেকারদের কর্মসংস্থানের যে সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে সম্পদের অপ্রতুল্যর জন্য তা বাস্তবায়িত করা একেবারে কঠিন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ লাখ করে কর্মক্ষম শ্রমজীবির সংখ্যা বাড়ছে। এই বিপুল পরিমান কর্মহীন লোকের জীবিকার সংস্থান করতে হলে যে অর্থের বিনিয়োগ ব্যবস্থা দরকার তা বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ থেকে সংগ্রহ করা অসম্ভব।

সুতরাং এ মুহুর্তে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য বেকার সমস্যা সমাধান করা। আর এ সমস্যা সমাধান করতে হলে দেশ ও জাতিকে বিশেষ করে কয়েক দিকে নজর দিতে হবে। প্রথমত বাংলাদেশের জনসংখ্যার বাহুল্যতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাহা পূর্বে বলেছি, পল্লীপূর্ত কর্মসূচী, ওয়ার্কাস প্রোগ্রাম কর্মসূচী সুষ্ঠ ও সঠিক পরিচালনার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উভয়ই নতুন নতুন শিল্প কল কারখানা ফ্যাক্টরী এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

শিক্ষিত কৃষি গ্রাজুয়েটদের তত্বাবধানে ছোট ছোট সেচ ইউনিট চালু করে অন্যান্য শিক্ষিত অশিক্ষিত বেকারদের কাজে লাগাতে হবে। কুটির শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। শিক্ষিত ব্যক্তিদের হতে হবে স্বাবলম্ব্ ীতাদের নিজ নিজ উদ্দোগে ব্যবসায় বানিজ্যে, শিল্পে, কৃষিকার্য ও অন্যান্য কারিগরী পেশায় আতœ নিয়োগ করে স্বাবলম্বী হবার চেষ্ট অব্যহত রাখতে হবে। এবং বিশেষ করে সরকারী চাকরী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখাপেক্ষী না হয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে বেশী করে প্রাধান্যতা দিতে হবে।

সম্প্রতি সেনালী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের উদ্দোগে ও পরিচালনাধীনে যুবকদের মধ্যে টাকা ঋন দিয়ে উক্ত অর্থ মৎস্য চাষ, সবজি চাষ, ফুল ফলের বাগান, মাইক্রো বাস, ইজি বাইক, প্রাইভেটকার, স্কুটার প্রভৃতি ক্রয়ের ব্যবস্থা অধিক পরিমান গ্রহন করতে হবে। যার মাধ্যমে তারা বেকার জীবন ঘুচিয়ে সুন্দর জীবনে ফিরে আসতে পারে। জাতি হিসাবে আমাদেরকে বাচতে হলে চাই, এ বিশাল জাতীয় সমস্যার আশু সমাধান । নচেৎ আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং আমরা সকলেই মিলে চাই সরকারী উদ্দোগে ও যথার্থ কর্ম তৎপরতা বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য।

লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহিন, সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, কলারোয়া, সাতক্ষীরা।

The post বেকার সমস্যা সমাধানের পথ আমাদেরকে খুজে বের করতে হবে appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2Y6kori

No comments:

Post a Comment