Wednesday, July 28, 2021

মৌসুমী বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল https://ift.tt/3f5Tm8R

এসএম শহীদুল ইসলাম: নিম্নচাপের প্রভাবে মৌসুমী বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বিকাল থেকে বুধবার (২৮ জুলাই) সকাল পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ভেসে গেছে জমির ফসল, মাছের ঘের ও পুকুর।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিম্ন অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব আলী নূর খান বাবুল বলেন, পৌরসভার পানি নিষ্কাশন সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে জলাবদ্ধতায় নাকাল হচ্ছে বছরের পর বছর। তিনি আরও বলেন, মৌসুমী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা শহরের পৌরসভার রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, কামাননগর, কামাননগর, পুরাতন রাজারবাগান, বদ্দিপাড়া কলোনি, ঘুড্ডির ডাঙি, পুরাতন সাতক্ষীরা, কাটিয়া মাঠপাড়া, মাছখোলা, ডায়েরবিল, রথখোলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
কলারোয়ার খোরদো এলাকার আইয়ুব হোসেন জানান, বেত্রবতী নদীর উভয় পাশের বিল ও গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থেকে মুজিবর রহমান জানান, কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রাম ও বিল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব এলাকার বিলগুলোতে সদ্য রোপা আপন ও বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পানের বরজেরও ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর এলাকার বাসিন্দা জুলফিকার হায়দার জানান, ভারি বর্ষণে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, বড়দল, শ্রীউলা, আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে থৈ থৈ করছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালি, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা, মথুরেশপুর, ভাড়াশিমলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে বলে খবর দিয়েছেন স্থানীয়রা।
কালিগঞ্জ থেকে নিয়াজ কওছার তুহিন জানান, কালিগঞ্জে টর্নেডোয় লন্ডভন্ড হয়েছে প্রায় অর্ধশত কাঁচা ও পাকা বাড়ি। উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের হাড়দ্দহা গ্রামে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ঘটে যাওয়া এই দুর্যোগে ১৯টি বসতবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩০টির অধিক বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন বুধবার হাড়দ্দহা গ্রামে গেলে আব্দুস সবুর, সজীব হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে হঠাৎ ৩-৪ মিনিটের আচমকা একটি ঝড়ে লন্ডভন্ড যায় গ্রামের একাংশ।
তারা আরও জানান, রাত থেকে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিরা অসহায় এই মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এলাকার যুব সংঘের উদ্যোগে দুপুরে অসহায়দের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আকষ্মিক এই দুর্যোগে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ভেসে গেছে জমির ফসল, আমন বীজতলা, মাছের ঘের ও পুকুর। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।

 


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিরাজ হোসেন খান বলেন, আমি সকালে হাড়দ্দহা গ্রামে গিয়েছিলাম। আপাতত তাদেরকে কিছু শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। ১৯টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শ্যামনগর থেকে রনজিৎ বর্মন জানান, শ্যামনগর উপজেলায় অতি বর্ষণে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার ভারী বর্ষণে উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, কাশিমাড়ী, আটুলিয়া, রমজাননগর, পদ্মপুকুর, শ্যামনগর, নুরনগর, কৈখালী, ঈশ^রীপুর ইউনিয়ন সহ অন্যান্য এলাকায় ভারী বর্ষণে চিংড়ী ঘের, পুকুর, নিচু রাস্তা, সবজিক্ষেত, বীজতলা অধিকাংশের বেশি ডুবে গেছে।
বিশেষ করে বর্তমানে আমন মৌসুম থাকায় ধানের বীজতলা ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা চিন্তায় পড়েছেন। উপজেলার আবাদচন্ডিপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন আমন মৌসুমের জমিতে ধান রোপনের জন্য বীজতলা প্রস্তুত করেছিলেন কিন্ত অতিবর্ষণে ডুবে থাকায় তিনি শঙ্কা প্রকাশ করছেন। মুন্সিগঞ্জ জেলেখালীর বাসিন্দা কৃষক নিরঞ্জন মন্ডল বলেন, ভারী বর্ষণে ধানের বীজ তলা তলিয়ে গেছে।
ভেটখালী গ্রামের বাসিন্দা শচীন্দ্র নাথ বলেন প্রচন্ড বর্ষায় চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। শুধু তার নয় এলাকায় অনেকের চিংড়ি ঘের ডুবে আছে।
নীলডুমুরের বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন প্রবল বর্ষণে গাবুরাসহ অন্যান্য এলাকায় চিংড়ি ঘের ডুবে গেছে।
বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের বাসিন্দা নৃপেন্দ্র মল্লিক বলেন, তার বাড়ির মধ্যে অতি বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাদঘাটা গ্রামের ইমরান বলেন অতি বর্ষণে অনেকের বাস ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা সদরের বাসিন্দা নাছিমা বেগম বলেন, তার বাড়ী নকিপুর বাজারের পাশে হলেও নকিপুর কাঁচা বাজার ডুবে গেছে সাথে তার বাস ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে।
কাশিমাড়ী গ্রামের বাসিন্দা রহমত আলী বলেন বিভিন্ন এলাকার চিংড়ি ঘের ও পুকুর ডুবে যাওয়ায় রাস্তার উপর দিয়ে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ সময়ে মানুষকে বিভিন্ন জলাশয়ে জাল ফেলে মাছ ধরতে দেখা যাচ্ছে।
নকিপুর বাজারের ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন অতি বৃষ্টির কারণে পলিথিন, নেট জাল বিক্রি বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাঁচা ঘর দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে ও চিংড়ি ঘের এবং পুকুরের মাছ আটকাতে নেট জাল ও পলিথিনের চাহিদা বেড়েছে।
এদিকে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ. ন. ম আবুজর গিফারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক বার্তায় জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও সকল ইউপি চেয়ারম্যান সমন্বয়পূর্বক যত দ্রæত সম্ভব অবৈধ নেটপাটা উচ্ছেদের মাধ্যমে পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্লাবিত এলাকায় বিদ্যুতের পোল হেলে পড়লে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিশু সন্তানদেরকে নিরাপদ রাখতে বলা হয়েছে ।

 

উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউপির স্থানীয় সাংবাদিক দিপক মিস্ত্রী, রমজাননগর ইউপির স্থানীয় সাংবাদিক আকতার হোসেনসহ অন্যান্যরা বলেন উপজেলায় যে সকল খাল আছে সেগুলির পানি নিস্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েকদিন এভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরেরর তথ্য কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ভারি বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সদ্য রোপা আমন, আউশ বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপন করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যদি ভারি বর্ষণ থেমে যায়, তাহলে রোপা আমন ও বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো: আব্দুল বাছেদ জানান, হঠাৎ ভারি বর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মারাত্মক কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া অতি বর্ষণজনিত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনে কোন নির্দেশনা পাননি তারা।

 


এদিকে আমাদের পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি প্রকাশ ঘোষ বিধান জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে শুর হওয়া টানা বৃষ্টিতে পাইকগাছার নি¤œ এলাকা তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তা ও বাড়ির উঠান পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। একটানা বর্ষণে জন-জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এলাকার নি¤œঞ্চল প্লাবিত হয়ে মৎস্য, কৃষি ও নার্সারী ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
একটানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আউশ ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমন ধানের বীজতলা,আমন ধানের রোপনকৃত ক্ষেত, নার্সারী ক্ষেত ও বিভিন্ন সবজি ও ফসলের ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাধের বাহির ও নি¤œ এলাকার মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস বলেন, এলাকার মৎস্য চাষিরা নিয়ম মাফিক ঘেরের বাধ নির্মাণ করে না । ভারি বৃষ্টি হলে নিচু এলাকা ও মৎস্য ঘেরগুলো তলিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ঘের তলিয়ে যাওয়া বা মাছ ভেসে যাওয়ার কোন অভিযোগ করেনি। তবে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। টানা বর্ষণে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের রোপনকৃত ৪০ একর আমন ধানের ক্ষেতের মধ্যে ৩৪ একর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো: হারুন বলেন, খামারে এ পর্যন্ত ৪০ একর আমন ধানের চারা রোপন করা হয়েছে। রোপনকৃত ক্ষেত থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পানি নিষ্কাশন হলে রোপনকৃত চারা খুববেশি ক্ষতি হবে না।

The post মৌসুমী বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/376H3om

No comments:

Post a Comment