Saturday, July 31, 2021

তালায় গ্রীষ্মকালে তাপদাহ আর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট https://ift.tt/eA8V8J

খাতা-কলমে ৬৪৬ টি গভীর নলকূল, ২২ টি সরকারি পুকুর থাকলেও বাস্তবে ভিন্ন
এসএম বাচ্চু: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চালের সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় গ্রীষ্মকালে অনাবৃষ্টির আকাশ হতে প্রবাহিত তাপদাহে শুকিয়ে যায় খাল-বিল-পুকুর। পক্ষান্তরে ১২ মাসের মধ্যে বর্ষাকালের ৩-৪ মাস জলাবদ্ধতার কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে চলতে থাকে এই উপজেলায়।
ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পানির আধারগুলো অনেক দূরে সরে গিয়েছে। এক কলস খাবার পানি সংগ্রহের জন্য নারী ও শিশুরা ছুটে যায় এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। কোনো কোনো গ্রামে মিষ্টি পানির আধার বলতে আছে দুয়েকটি পুকুর। তবে অধিকাংশ গ্রামে পুকুরও নেই।
এহেন পরিস্থিতিতে সবকিছু মিলিয়ে তালা উপজেলায় সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানির প্রয়োজন তো অন্য কিছুতে মেটানো সম্ভব নয়। তাই, যেভাবেই হোক সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে মরিয়া স্থানীয়রা। আর যারা ক্লান্ত শরীরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারছেন না,তাদের নগদ টাকার বিনিময়ে কিনতে হচ্ছে খাবার পানি। এভাবে গ্রীষ্মে ও বর্ষাকালে খাবার পানি সংগ্রহে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে তাদের।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২২৯টি গ্রামে ২লাখ ৯৯ হাজার ৮২০ জন জনসংখ্যা ছিল। বর্তমান বেসরকারি জরিপ অনুযায়ী এর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ২৯ হাজার। প্রকৃতপক্ষে শুমারি হলে লোকসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ উপজেলায় পুকুরের সংখ্যা দেওয়া আছে ২,৮৮১টি। এরমধ্য সরকারি পুকুর ২২টি, সরকারিভাবে অগভীর নলকূপের সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৬৩টি নলকূপ থাকলেও এর মধ্যে সামান্য কিছু নলকূপে নিরাপদ পানি ঘোষণা করা হয়েছে। আর গভীর নলকূপের সংখ্যা ৬৪৬টি থাকলেও বর্তমানে ওই সমস্ত নিরাপদ পানির উৎস অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
প্রয়োজনের তাগিদেই উপজেলা সদরের আশপাশের বাসিন্দারা পানযোগ্য এক কলসি পানির জন্য কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ছুটে পানি নিতে তালা সরকারি কলেজ, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন, তালা মহিলা কলেজ সংলগ্নসহ মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি গভীর নলকুপ থেকে পানি নিচ্ছেন। আর বাকি যাদের বাড়ি উপজেলা সদর হতে অনেক দূরে তারা পাশের পুকুর হতে পানি ফিল্টারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে প্রয়োজন মেটাচ্ছে।
২০০০ সালের পর থেকে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা এ উপজেলার স্যানিটেশন ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ে। ২০০১ সাল থেকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন তৈরিতে জরিপ অনুযায়ী জনসচেতনতা ও বাস্তবায়নে ২০০৩ সালে শতভাগ অর্জন করায় এক যুগান্তকারী সাফল্য। বর্তমান ২০ বছরের ব্যবধানে সঠিক তদারকি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রচার-প্রচারণা ও লোকবল সঙ্কটে তালার স্যানিটেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এদিকে উপজেলার প্রত্যেকটি বাসা বাড়িতে টিউবওয়েল থাকলেও ২০০৫ সালে নিরাপদ ও অনিরাপদ জরিপে লাল ও সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। বর্তমান ওই চিহ্নিত ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার ৮০ ভাগ মানুষ এখনো আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছেন। যার কারণে সম্প্রতি তালার জালালপুরের একই পরিবারের ৮-১০ সদস্য আর্সেনিক আক্রান্ত হয়েছেন।
তালা উপজেলার সর্বত্রই কৃষি কাজের জন্য অতিমাত্রায় সেচ পাম্প দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। ফলে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। এ কারণে গ্রামের অধিকাংশ টিউবওয়ালেই পানি উঠছে না। আর উঠছে তা পানযোগ্য নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে উপজেলার মহান্দী, খলিলনগর, নলতা, গোনালি, শাহাপুর, খড়েরডাঙা, শিবপুর, গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দারা কলসি, ড্রাম, বোতল নিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান যোগে ছুটছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসা সামনে, সরকারি কলেজ ও মহিলা কলেজ অভিমুখে।
শুধুমাত্র তালা উপজেলার লোকজন নয়, এখানে পানি নিতে আসছেন সুদূর পাইকগাছা, কপিলমুনি থেকেও। সেখানে গিয়ে মিলছে পানি সংগ্রহ করতে যাওয়া মানুষের লম্বা লাইন। অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পর মিলছে কাক্সিক্ষত পানি।
উপজেলার বালিয়াদহ গ্রামে দেখা যায়, সরকারি পুকুরে বসানো ফিল্টার করা পানি নিতে টিকারামপুর গ্রাম, বাগমারা, চাঁদকাটি, বলরামপুর গ্রাম হতে কয়েক শতাধিক সাধারণ মানুষ পানি নিতে আসছে। তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা।
অপরদিকে সুপেয় পানি সংকটকে কাজে লাগিয়ে উপজেলা সদরে এলাকায় গড়ে ওঠা পানি কোম্পানিতেও ভিড় করছেন স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন। কিন্তু সেখানেও চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহ, খরা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং বর্ষকালের ৩-৪ মাস জলাবদ্ধতার কারণে এ সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। আগামি কয়েক বছরে এ সংকট আরও ব্যাপকতা লাভ করবে। তাই এখন থেকেই বিকল্প পথে মানুষকে সুপেয় পানি সরবরাহে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া আমরা গভীর নলকুপ বিভিন্ন স্থানে বসিয়েছি এবং বসানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোন ভালো ফল পাচ্ছি না।

The post তালায় গ্রীষ্মকালে তাপদাহ আর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3j85Hul

No comments:

Post a Comment