Friday, November 26, 2021

খুলনা ব্লাক মেইলের শিকার সাবেক জেল সুপারসহ এক ওসি https://ift.tt/eA8V8J

খুলনার প্রতারক মনি ফাঁদে ফেলে হিন্দু যুবককে বিয়ে

খুলনা প্রতিনিধি: কখনও কোন অভিযোগে কু-প্রস্তাব, ভয়ভীতি হুমকি, শারীরিক নির্যাতন, খারাপ নজরে তাকানো আর কখনও টাকা ধার দেওয়ার অভিযোগের বাদি হন খুলনার প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি (৪২)। এসকল অভিযোগ তিনি পরিচিত নানা শ্রেণি পেশার মানুষের নামে করেই ব্লাক মেইল করতেন বলে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনার একজন সাবেক জেল সুপার ও ঢাকার (সিআইডি)’র সাবেক একজন পুলিশ পরিদর্শকও তার ব্লাক মেইলের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ প্রতাহারের জন্য তাদের কাছ থেকে দাবি করা হয়েছিলো মোটা অংকের টাকা। এছাড়া তার কথিত ২য় স্বামী নিউটন গাইন ওরফে লিটনের লিখিত অভিযোগে ফুটে ওঠে মনি’র উশৃঙ্খল জীবন যাপনের নানা চিত্র। বিয়ের পর ২০১৭ সাল নাগাদ নিউটন গাইনের কাছে থাকা ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাকেও ঢাকার বাসা থেকে ভয়ভীতি দিয়ে বের করে দেন প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি। এরপরেও ক্ষান্ত হননি তিনি ওই পরিবারের সকল সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে ৮-৯টি মামলা দায়ের করেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি জিডি করে (নং-১৫২৫)। ওই জিডিতে তিনি দু’জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ¬ীলতাহানীর চেষ্টা, কুপ্রস্তাব ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ দেন। ওই জিডিতে দেওয়া বিবাদীদের মোবাইল নম্বরের সুত্র ধরে জানাযায় তাদেও মধ্যে একজন খুলনা জেলা কারাগারের একজন সাবেক সুপার। প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি জিডির অভিযোগ দেখিয়ে ওই কর্মকর্তাকে ব্লাক মেইল  করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া তার কথিত ২য় স্বামী নিউটনসহ পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অপহরণে মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট প্রদানকারী তদন্ত কর্মকর্তা একজন সাবেক সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধেও তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে প্রতারক মনি ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাব ও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তোলেন। পরে মোটা অংকের টাকা দাবি করে অভিযোগ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। সিআইডি পুলিশের সদর দপ্তরের নির্দেশে প্রতারক মনি’র ওই অভিযোগটি তদন্ত করা হয়। তবে তার অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।

এদিকে একের পর এক মিথ্যা মামলা, জিডি, অভিযোগে জর্জরিত হয়ে জন্মমাটি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পারি জমান পরিবারটি। খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালী পোদ্দারগঞ্জ সাহেবের আবাদ গ্রামের বিনয় কৃষ্ণ গাইন’র পরিবার গত ৪-৫বছর ধরে ভারতের কোলকাতায় মানবেতর জীবনযাপন কর ছেন। বাংলাদেশের খুলনায় পৈতৃক জায়গা জমি সব শশ্মান হয়ে পড়ে আছে। এ যেন ৭১সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাত থেকে জীবন বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার সেই মুহূর্ত। দেশে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদনও করেছে পরিবারটির পক্ষ থেকে। পাশাপশি তাদের ওপরে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে ওই আবেদনের কপি প্রেরণ করেছেন। গত ২৩ ডিসেম্বর বিনয় কৃষ্ণ গাইন’র পুত্র নিউটন গাইন এ আবেদন করেছেন।

ওই আবেদনে বলা হয়, খুলনা নগরীর করিমনগর মসজিদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুল ওহাব খাঁনের মেয়ে (বর্তমানে বসুপাড়া কবরখানা এলাকার টাওয়ার ওয়ালা গলির শহিদুল ইসলামের ৫তলার ভাড়াটিয়া) ফরিদা ইয়াসমিন মনি (৪২)। গত ৬ বছর আগে দাকোপ উপজেলার পানখালী  পোদ্দারগঞ্জ সাহেবের আবাদ এলাকার বিনয় কৃষ্ণ গাইন’র পুত্র নিউটন গাইনকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। তার প্রথম স্বামী খুলনা নগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকার হায়দার আলী শেখ। প্রথম স্বামী শেখ হায়দার আলীও গত ১৩ জুন মনি’র বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি জিডি করেছেন (নং-৮৪০)। তাকে তার সাবেক স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন মনি ভয়ভীতি ও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রতারক মনি’র ঢাকা খুলনা ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে ব্যক্তিগত কিছু মানুষ। তারা মনি’র বেআইনী কার্যক্রমের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করেন। মনি’র বিভিন্ন মামলা, জিডি, অভিযোগ ও সিআইডি সদর দপ্তরের তদন্তের আদেশ কপি’র মাধ্যমে চক্রের বেশ কিছু নাম পাওয়া গেছে। এরা মনি’র বিভিন্ন মামলার স্বাক্ষী সেজে থাকেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।  এরা হলেন, প্রতারক মনি’র আপন ভাই নবাব খানের স্ত্রী সুচনা ইসলাম আশা, খুলনার দেবেনবাবু রোডের হামিদ শিকদারের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন, একই এলাকার মো: সাঈদের স্ত্রী জোসনা, মো: নাসিমের স্ত্রী নাগিনা বেগম পুতুল, ঢাকার সিদ্দিক বাজার জাভেদ গলির দেলোয়ার হোসেন দিলুর ছেলে আশিকুর রহমান, তার স্ত্রী মিনা, মুগদা থানাধিন মান্ডা এলাকার লাল মিয়া গলির মৃত শাহাদাৎ হোসেনের ছেলে কাওছার আহমেদ চৌধুরী। এছাড়ও এ চক্রের সাথে আরও ১০-১২জন জড়িত বলে সুত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ নভেম্বর রাতে খুলনার সদর থানার একটি প্রতারনা মামলায় প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৬। এরপর তাকে ২৫ নভেম্বর সদর থানা পুলিশ আদালতে সোপর্দ  করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ শাহীদুল ইসলাম তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন। আদালতের নির্দেশে দায়ের হওয়া ওই মামলায় মনি’র আরও ৪জন সহযোগির নাম ও অজ্ঞাত ৩-৪জন আসামি রয়েছে। তারা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অলিয়ার রহমান জানান। তবে তাদেও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।

The post খুলনা ব্লাক মেইলের শিকার সাবেক জেল সুপারসহ এক ওসি appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3HVR3Sq

No comments:

Post a Comment