দেবহাটা ব্যুরো: পেশায় কেউ ভ্যানচালক, কেউ কৃষক, আবার কেউবা দিনমজুর। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী-সন্তানও। দেবহাটার এমন অসহায় কমপক্ষে ৩৪টি পরিবারের এবারের কোরবানির ঈদ কেটেছে চাপা কান্না নিয়ে।
মসজিদ কমিটির একক সিদ্ধান্তে ঈদের দিন ছোট্ট ছোট্ট অবুঝ শিশু, স্ত্রী বা বৃদ্ধ পিতা-মাতার মুখে কোরবানির গোশত তুলে দিতে পারেনি অসহায় পরিবারগুলো। চারপাশের বাড়িগুলোতে যখন সবাই কোরবানির গোশত নিয়ে শোরগোল করছে, তখন অবুঝ শিশুদের গোশত খাওয়ার বায়না ভোলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন তারা।
আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের সামনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ঝরেছে চোখের পানি। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের চন্ডীপুর গ্রামের কমপক্ষে ৩৪টি পরিবারের লোকজন।
প্রচলিত ধর্মীয় রীতি মোতাবেক সামর্থবান প্রত্যেকের কোরবানিকৃত পশুর গোশত থেকে লিল্লাহ ভাগের গোশত একত্রিত করে গ্রামের যেসব পরিবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কোরবানি করতে পারেনি তাদের মধ্যে সেসব গোশত জনপ্রতি হারে বিতরণ করে ধনী-গরীব সবাই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। অথচ গেল বুধবার কোরবানির ঈদের দিন চন্ডীপুর জামে মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তে গোশত বন্টনের লিস্ট থেকে নাম কেটে বাদ দেয়া হয় মৃত আদর আলীর পুত্র এমাদুল, মৃত তারেকের পুত্র খাইরুল, মৃত আদির আলীর পুত্র আকবর আলী, গোলামের পুত্র শফিক, আবদারের পুত্র একরাম, মৃত রমজানের পুত্র মিজানুর, কানাই গাজির পুত্র ভ্যানচালক জামশেদ গাজী, মহব্বত গাজীর পুত্র আলু ব্যবসায়ী মহিউদ্দীন গাজী, কেরামত গাজীর পুত্র ভাজা বিক্রেতা একরাম গাজী, রমজান সরদারের পুত্র মমিনুর সরদার, জবেদ মোল্যার পুত্র প্যারালাইসিস রোগী মালেক মোল্যা, জবেদ মোল্যার পুত্র ভ্যানচালক আইয়ুব মোল্যা সহ কমপক্ষে ৩৪টি পরিবারের। এসব পরিবারের মধ্যে অনেকেই গোশত আনতে কোরবানির ময়দানে গিয়ে দিন শেষে অপমান-অপদস্ত হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, আমাদের মধ্যে অধিকাংশরাই ভ্যান চালিয়ে, কৃষিকাজ করে বা দিনমজুরি করে সংসার চালাই। নেই তেমন কোন অর্থ-সম্পদ। তাছাড়া করোনাকালীন পরিস্থিতিতে আমরা আরো অসহায় হয়ে পড়েছি। ঈদের দু’দিন আগে গোশত বন্টনের লিস্টে আমাদের নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়। সর্বশেষ ঈদের আগের দিন ভোরে মসজিদ কমিটির কয়েকজন এবং কয়েকজন কোরবানিদাতা মিলে মসজিদে মিটিংয়ে বসেন। তাদের ধারণা, সামর্থ থাকা স্বত্ত্বেও আমরা কোরবানি করছিনা, তাই তারা আমাদের নাম গোশত বন্টনের লিস্ট থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, গোশত না দেয়ার বিষয়টি আগে থেকে আমাদের জানিয়ে দিলে ঈদের দিন অন্তত পরিবার পরিজনের মুখে ফার্মের মুরগির এক টুকরো গোশত তুলে দিতে পারতাম। তা না করে কোরবানির ময়দান থেকে অপমানজনক ভাবে আমাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে মসজিদ কমিটির লোকজন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চন্ডীপুর আহছানিয়া মিশনের সভাপতি মুজিবর মাষ্টারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে অনেক ভ্যানচালক, দিনমজুর ও কৃষকেরাও অর্থসম্পদের মালিক। তাই মসজিদ কমিটি ও কোরবানিদাতাদের সিদ্ধান্তে যারা কোরবানি করেনি অথচ সামর্থবান বলে মনে হয়েছে তাদের নাম গোশত বন্টনের লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে ন্যাক্কারজনক এমন ঘটনার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাকরিরত ওই গ্রামের কয়েকজন তরুণ যুবকদের পক্ষ থেকে ঈদের দিন বঞ্চিত পরিবারগুলোর জন্য নতুন করে একটি গরু কোরবানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
The post ঈদে দেবহাটায় ৩৪ পরিবারে কোরবানির গোশত না পাওয়ার অভিযোগ! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2WenPLe
No comments:
Post a Comment