Friday, November 27, 2020

খেজুরের রসে নতুন বিপদের গন্ধ! https://ift.tt/eA8V8J

 

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝেই আরেক মহামারির আশঙ্কার বার্তা শোনালেন বিজ্ঞানীরা। বিপদের কেন্দ্রে আছে বাংলাদেশ। আসছে শীতে ফের জাঁকিয়ে বসতে পারে নিপাহ ভাইরাস!

যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ বা পিএএনএস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগে যতটা ধারণা করা হয়েছিল নিপাহ ভাইরাস তারচেয়েও বেশি সংক্রামক। যেকোনও সময়, যেকোনও জনবসতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই নিপাহ ভাইরাস বাংলাদেশ, ভারত তথা এশিয়া অঞ্চলের আরেকটি মহামারির কারণ হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্বে যেসব রোগ মহামারি আকার নিতে পারে তার একটি তালিকা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সে তালিকায় আছে নিপাহ ভাইরাসের নামও। এ ভাইরাসেরও কোনও টিকা বা চিকিৎসা এখনও আবিষ্কার হয়নি।

গত ছয় বছর ধরে বাংলাদেশের ২ হাজার ৭০০ বাদুড়ের নমুনা সংগ্রহ করে এ গবেষণা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্পাদনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-এর পরিচালক এবং বিখ্যাত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি। গত জানুয়ারিতে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করার পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অনুমোদন দেওয়া হয়। জার্নালে প্রকাশ হয় গত ২ নভেম্বর।

নিপাহ ভাইরাসের প্রধান মাধ্যম খেজুরের কাঁচা রস ও বাদুড়ের আধখাওয়া ফল। করোনার মতো মারাত্মক ছোঁয়াচে না হলেও সংক্রমিত ব্যক্তির সংর্স্পশে আসা ব্যক্তিরাও এতে সংক্রমিত হচ্ছেন।

এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শীতকালেই বেশি দেখা যায়। তাই এবারের শীতে তাই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া এবং বাদুড়ের আধখাওয়া বা মাটিতে পড়ে থাকা ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণাটিতে আরও দেখা গেছে দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি ফরিদপুরে।

বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন, ভাইরাসটি দিনে দিনে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে সংক্রমণের ‘সহজ স্ট্রেইন’ তৈরি করে ফেলতে পারে। আর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর বলছে, সারা দেশেই বাদুড় উড়ে বেড়ায়, তাই এ ভাইরাসের সংক্রমণ নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকছে না।

পিএএনএস বলছে, ‘নিপাহ ভাইরাস বাংলাদেশ-ভারতের ঘনবসতি অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছরই দেখা দেয়। প্রাণঘাতী রোগটির প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় ১৮ জন আক্রান্ত হন নিপাহ ভাইরাসে। তার মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ৭০ শতাংশেরও বেশি।

২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তারপর থেকে প্রতিবছরই কম-বেশি নিপাহ আক্রান্ত রোগী দেখা গেছে। আইইডিসিআর-এর তথ্যানুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৯ জন। মারা গেছেন ২২৫ জন।

২০০৪, ২০১১ ও ২০১৪ সালে মূলত নিপাহর প্রকোপ বেশি ছিল। এ বছরগুলোতে রোগী ছিল ৬৭, ৪২ ও ৩৮ জন।

আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআরবি একসঙ্গে নিপাহ পর্যবেক্ষণ করছে ২০০৬ সাল থেকে। দেশের পাঁচটি হাসপাতালে এ জরিপ চলছে। চলতি বছর থেকে আরও তিনটি হাসপাতালে জরিপের কাজ শুরু হবে।

নিপাহ ভাইরাসকে ‘ডেডলি ডিজিজ’ তথা প্রাণঘাতী আখ্যা দিয়ে আইইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শতকরা ৭০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর শীতকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব আমরা বেশি দেখছি। নিপাহ ভাইরাসের উৎস হলো বাদুড়। বাদুড়ের মুখ নিঃসৃত লালা বা মূত্র মিশ্রিত কাঁচা খেজুর রস কিংবা বাদুড়ের আধখাওয়া ফল খেলে নিপাহ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত খেজুরের রসের মাধ্যমেই এ রোগ ছড়াচ্ছে বলে দেখা গেছে।

নিপাহ ভাইরাস কতক্ষণ জীবিত থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাঁচা রসটাকে ফোটালেই ভাইরাস মারা যাবে। শুকনো পরিবেশে যদি কোনো হোস্ট তথা আশ্রয় নেওয়ার মতো পরিবেশ না পায় তবে দুই ঘণ্টার ভেতর মারা যাবে। বাদুড়ের মূত্রে চার দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে নিপাহ।’

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘সারা দেশেই বাদুড় উড়ে বেড়ায়, তাই এ ভাইরাসের সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকছে না। যে কারণে আমাদের নজরদারি আরও বাড়াতে হয়েছে।’

নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে তিনি জানান, ‘নিপাহ আক্রান্ত হলে হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ ও কারও কারও শ্বাসকষ্ট বা অন্য স্নায়ুরোগ দেখা দিতে পারে। কারও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআর-এর হটলাইনে ফোন করে যোগাযোগ করা উচিত।’

The post খেজুরের রসে নতুন বিপদের গন্ধ! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3o4fpP8

No comments:

Post a Comment