Friday, November 27, 2020

শিশু নির্যাতন কেন হচ্ছে https://ift.tt/eA8V8J

জহিরুল ইসলাম শাহীন
সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ের দোকানে এককাপ চা পান করার সময়ে দৈনিক খবরের কাগজের দিকে চোখ দিলেই শিরোনামে শিশু নির্যাতনের চিত্র এবং বাড়িতে টিভির পর্দার দিকে তাকালেই দেখতে হয় শিশু নির্যাতন বা নারী নির্যাতন বা ধর্ষণ। এই চিত্রটাই এখন প্রায় সকলের চোখে ধরা পড়ে। নারী ধর্ষণ কিছু কিছু সময় ঘটতে পারে কারণ তারা প্রাপ্ত বয়স্ক, একটু ভুলের কারণে বা একজন নিকৃষ্ট ব্যক্তির প্রলোভনে বশীভূত হয়ে হয়তোবা একজন নারী তার সম্ভ্রম হারিয়ে ফেলতে পারে।

 

কিন্তু একজন শিশু সে তো সব বিষয়ে অবুঝ। তার ভিতরে অতটা জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক বলে কিছুই নেই। কিন্তু তাকে কেন নির্যাতন করতে হবে। নির্যাতনের কারণ কি? কারা বা এগুলি করে। নিত্যন্তই বর্বর, অসভ্য, অশিক্ষিত অমানবিক এবং পশুত্ব ভাব যাদের ভিতর আছে তারা ছাড়া এই কাজগুলি অন্য কেউ করতে পারে না। একজন শিশুর পায়ু পথে বায়ু ঢুকিয়ে, হাত, পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়। যা চোখে দেখা যায়না। মৃত্যুর কোলে শিশুটি ঢলে পড়ছে তবুও অমানবিক নির্যাতন এমন কি একজন নবজাতক যার বয়স ১ দিন বা এক সপ্তাহ বা এক মাস তাকে ও রাস্তায় নর্দমায় বা ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এ কিসের আলামত, বন্য প্রাণিরা যখন ক্ষুধা পায় তখন অন্য পশুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ক্ষুধা যখন থাকে না, তখন বন্য প্রাণিরা যেমন বাঘ, সিংহ বা হায়েনা অন্য কোনো বন্য প্রাণির উপর আক্রমন করে না।

 

দেখা গেছে তাঁরা একসাথে ঘুরছে, বেড়াচ্ছে বা এদিক ও দিকে ছুটছে কিন্তু বিবেক বর্জিত শিশু নির্যাতনকারী ব্যক্তিরা বন্য প্রাণিকেও হার মানিয়েছে। আমরা অনেক সময় দেখেছি গাছের সংগে বেঁধে একটা শিশুকে নির্মমভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, চার পাশে লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছে, কেউ কোন কথা বলছে না। কিসের ভয় জানি না। নির্যাতনকারী যত বড় শক্তিশালী হোক, যতই প্রভাবশালী হোক, যতই পেশীশক্তির অধিকারি হোক, সবাই মিলে যদি প্রতিরোধ করা যেত হয়তোবা আমরা আমাদের শিশুদের নির্যাতনের হাত থেকে কিছুটা রক্ষা করতে পারতাম। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী, এমন একটা অবস্থার মধ্যে আমরা পড়ে আছি। আমাদের দেশে সাম্প্রতিক কালে যে শিশু নির্যাতন বাড়ছে তাতে বিবেকবান মানুষ মাত্রই বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। একটু ভেবে দেখুন, যদি শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে সামাজিক আন্দোলন এবং জনগণের ভিতরে সচেতনা বোধ যদি সৃষ্টি করা না যায়, তবে শিশু নির্যাতন বন্ধ করা অদুর ভবিষ্যতে একে বারে কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা এবং বিভিন্ন স্তরের সাংবাদিক ভাইয়েরা নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে সাহসী প্রচারণার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। গৃহকর্মী শিশু, দোকানের কর্মী শিশু, চায়ের দোকানে কর্মী শিশু, ফুটপাতের উপরে পড়ে আছে অসহায় শিশু, বস্তির মধ্যে বসবাসকারী শিশু বিভিন্নভাবে জীবন ধারণকারী শিশুদের উপর বর্বর নির্যাতন দিনে দিনে বাড়ছে। তারা বড়ই অসহায়। তাদের দেখ-ভাল করার জন্য কেউ নেই। তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, তারা সমাজের আলো থেকে বঞ্চিত, তারা তাদের বাবা মায়ের ¯েœহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত, তারা শুধু বঞ্চিত না গৃহ কর্তার নির্যাতন থেকে ,দোকানের মালিকের বর্বর শাস্তির হাত থেকে, চায়ের দোকানের মালিকের অকথ্য ভাষা থেকে এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্মম নিষ্ঠুর ও কঠোর নির্যাতন থেকে। নির্যাতন করতে করতে অনেক শিশুর প্রাণ গেছে প্রকাশ্যে দিবালোকে সবার উপস্থিতিতে। আমরা যদি একটু এগিয়ে আসি, হয়তো বা কিছু টা তারা নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। শিশুরা খুব একটা অপরাধ করে না। অন্যায় করে না হয়তো বা অতি ক্ষুদ্র অল্প বয়সী শিশুরা মনিবের আদেশ পালন করতে যেয়ে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে আর এইটাই অপরাধ মনে করে তার উপর কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়। আপনাদের মধ্যে কি কোন বিবেক নেই? কোন মনুষ্যত্ব বোধ নেই? শিশুটার করুন আর্তনাদ চিৎকার অসহ্য যন্ত্রানা আপনাদের কি মোটেও ব্যথিত করে না? এতটাই পাষান আপনারা? এতটায় দয়া মায়াহীন? কিসের জন্য বা কেন এতটা নির্মম আচারণ শিশুদের প্রতি করেন? আমার বোধগম্য নয়। আপনার নিজের সন্তানের মত করে তাদের কি একটু সামান্য ভালোবাসা দিতে পারেন না। সামান্য ভালবাসা পেলেই হয়তো তারা নিজের বাবা মায়ের মতো আপনাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসতে পারতো।

 

তাই আসুন সবাই মিলে আমরা শিশুদের রক্ষা করি। সকল প্রকার শিশু নির্যাতনের হাত থেকে তাদেরকে সুরক্ষা করে শিশু আইনের ভিতর দিয়েই তাদের সমাজে বেচে থাকার মতো অধিকার প্রতিষ্ঠিত করি। আইন শুধু কাগজে কলমে থাকলেই হবে না। নির্যাতন কারীর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে সকল ধরনের প্রশাসন, রাষ্ট্র, সরকার, জনগণ এবং বিশেষ করে সাংবাদিকদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশু নির্যাতন কারী যদি তার অপরাধের যথাযথ শাস্তি পায় তবে শিশু নীপিড়ন বা নির্যাতন অনেকটা হ্রাস পেতে পারে। স্বার্থান্বেষী মহল যেন শিশু পাচার বা শিশুদের যৌন নিপীড়ন বা কোন হীনকর্মে শিশুদের আর কখনও ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে রাষ্ট্রীয় নজরদারী বাড়াতে পারলে হয়তোবা শিশুরা কিছুটা নিরাপদ থাকতে পারে। তাই আসুন আজ আমরা সবাই মিলে এই অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করি। নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন চিরদিনের জন্য বন্ধ করে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি। এটাই হোক আমাদের আজকের শপথ। সবাই ভাল থাকবেন-এই প্রত্যাশা করি। লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ কলারোয়া, সাতক্ষীরা

The post শিশু নির্যাতন কেন হচ্ছে appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/39muiZi

No comments:

Post a Comment