Wednesday, June 30, 2021

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লকডাউনে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ! https://ift.tt/eA8V8J

নাজমুল শাহাদাৎ জাকির: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশজুড়ে যে কার্যত ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি চলছে, সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাতক্ষীরায় গত ৫ জুন থেকে লকডাউন শুরু হলেও সাতক্ষীরায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বারবার। জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি কিছু বিতর্কিত কর্মকান্ডে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় লকডাউন মানছেনা কেউ। একদিকে ভোট ইস্যুকে কেন্দ্রকরে লকডাউন কার্যকরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনীহা অপরদিকে লকডাউন অমান্যকারী জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সেনাবাহিনীতে আস্থা রাখছেন সবাই।
জেলায় এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৭১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৪৮৫ জন। এছাড়া বর্তমানে জেলায় ৮১৬ জন করোনা আক্রান্ত রুগী রয়েছেন। এরমধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫ জন করোনা আক্রান্ত রুগী ও ২৬০ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর বেসরকারি হাসপাতালে ১৭ জন আক্রান্ত রুগী ও ১৩৭ জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া ৭৭৪ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জেলায় চতুর্থ ধাপের লকডাউন চলাকালীন অবস্থায় ৩ হাজার ৬৪০জন ব্যক্তি করোনার টেস্ট করায়। বিপরীতে মোট টেস্টের ৪৪শতাংশ ব্যক্তি (১হাজার ৬৯৮জন ব্যক্তি) করোনায় আক্রান্ত হয়। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে লকডাউন চলাকালীন সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ১১৬ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মারা ২৩ জন ব্যক্তি।
জেলায় প্রথম দফার লকডাউনে ১হাজার ৪৫জন ব্যক্তি করোনার টেস্ট করায়। এর ভিতরে করোনায় আক্রান্ত হয় ৫৫৯জন ব্যক্তি। তবে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালসহ নিজ বাসায় করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ২২জন ব্যক্তি। এর ভিতরে করোনায় আক্রান্ত ছিলো ৪জন। আর সংক্রমণের হার ছিলো ৬৮শতাংশ। পর্যায়ক্রমে দিত্বীয়ধাপের লকডাউনে ১হাজার ৫জন ব্যক্তি করোনার টেস্ট করায়। এর ভিতরে করোনায় আক্রান্ত হয় ৫১০জন ব্যক্তি। তবে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালসহ নিজ বাসায় করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ২৪জন ব্যক্তি। এর ভিতরে করোনায় মারা যায় ৫জন। তবে প্রথম ধাপের লকডাউনের চেয়ে ২১শতাংশ করোনার সংক্রমণ কমে দিত্বীয় সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ হার ছিলো ৪৭শতাংশ। তৃতীয়ধাপের লকডাউনে ৮৩৩জন ব্যক্তি করোনার টেস্ট করায়। এর ভিতরে করোনায় আক্রান্ত হয় ৩৯৮জন ব্যক্তি। দিত্বীয়ধাপের লকডাউনের চেয়ে সংক্রমণের হার ১৫শতাংশ কম থাকলেও এসপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫৩জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালসহ নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৫৩জন ব্যক্তি। এর ভিতরে করোনায় আক্রান্ত ছিলো ১০জন। সর্বশেষ চতুর্থ ধাপের লকডাউন চলাকালীন অবস্থায় ইতোমধ্যে ৭৫৭জন ব্যক্তি করোনার টেস্ট করিয়েছে। বিপরীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২৩১জন ব্যক্তি। তৃতীয়ধাপের লকডাউনের মতোই চতুর্থধাপের লকডাউনেও করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গের মৃত্যুহার উর্দ্ধমূখী। লকডাউনের পঞ্চম দিন অতিবাহিত হলেও এপর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালসহ নিজ বাসায় করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৪০জন ব্যক্তি। এর ভিতরে করোনায় আক্রান্ত ছিলো ৪জন। চতুর্থ ধাপের লকডাউন চলমান অবস্থায় করোনার সংক্রমণ হার ৩২শতাংশ। তবে চতুর্থধাপের লকডাউনে মৃত্যুহার ও সংক্রমণ হার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দীর্ঘ ২৬দিন ধরে জেলাতে কঠোর লকডাউন চললেও করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণে আসছেনা। নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ সমন্ধে জেলার বিভিন্ন স্থানের মানুষদের অভিযোগ, সাতক্ষীরায় গত ৫ জুন থেকে লকডাউন শুরু হলেও সাতক্ষীরায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বার বার। এ ক্ষেত্রে এখনি জনপ্রতিনিধিদের কাজ শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সারা বিশ্বের ন্যায় যখন বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তখন সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধিদের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে কাজ করা দরকার। তবে এই সময় জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের পাশে না থাকায় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে এই মুহূর্তে জনগণের প্রতিনিধিদের জনগণের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সকলে। তথ্যমতে, করোনা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই জনপ্রতিনিধিদের। পাশে নেই জনগণের। জেলার এমপি, মেয়র, কাউন্সিলর কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বারও জনগণের পাশে নেই। নামমাত্র দুই একজন জনপ্রতিনিধি করোনা প্রতিরোধে কাজ করলেও অধিকাংশ জনপ্রতিনিধির এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে জনপ্রতিনিধিদের এসময় সব বেশি ভূমিকা পালন করার কথা থাকলেও তারা জনগণ থেকে পিছিয়ে রয়েছে। আর এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সচেতন মহলের মতে, সাতক্ষীরায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিরা মাঠে নামলে মানুষ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি মেনে নিয়ে আরও বেশি সচেতন হবেন। তবে, জনপ্রতিনিধিরা কী কারণে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তবে জনপ্রতিনিধিদের কাজ না করার পেছনে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে দায়ী করছেন অনেকে। তাদের ভাষ্যমতে, জনপ্রতিনিধিরা যদি কঠোর হয় তাহলে হয়তো তাদের ভোট কমে যেতে পারে। এ আশঙ্কায় লকডাউন বাস্তবায়নে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখছেন না তারা।
এদিকে, দুইএকজন জনপ্রতিনিধি মাঠে নামলেও এমপি, মেয়রদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কাউকে এ বিষয় নিয়ে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের এখনি কাজ শুরু করা প্রয়োজন এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তবে করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনা বৃদ্ধি এবং এই ভাইরাস থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত রাখতে প্রয়োজনী ব্যবহার সামগ্রী বিতরণ করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
এবিষয়ে জেলার অধিকাংশ মানুষদের সাথে কথা হলে তারা জানান, জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কিছু বিতর্কিত কর্মকান্ডে লকডাউন মানছেননা কেউ। কারণ হিসেবে তারা জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পাশে নেই জনপ্রতিধিরা। কয়েকজন জনপ্রতিনিধি মাঠে নেমে কাজ শুরু করলেও অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন। এই মুহূর্তে জনপ্রতিনিধিদের জনগণের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন ছিল। মাস্ক বিতরণ থেকে শুরু করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে মাঠে নেমে কাজ করা জরুরী বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজ। এ সময় জনপ্রতিনিধিরা পাশে থাকলে সাধারণ মানুষ সাহস পাবেন করোনা মোকাবেলায়। কিন্তু, সেটা না হয়ে হীতের বিপরীত হচ্ছে।
এসময় তারা আরো জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছেন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। গত ৭ জুন তার ঘোরাঘুরির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। এঘটনার একদিন না যেতেই প্রশাসন নির্ধারিত সময়ের পর দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন তারই পরিষদের এক ইউপি সদস্যকে মারপিট করে। তবে দু:খের বিষয় প্রশাসন এখানেও কোনপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অথচ হামলায় আহত ওই ব্যক্তি সখিপুরের ৬নং ওয়ার্ডের বারবার নির্বাচিত ইউপি সদস্যের পাশাপাশি জেলার একটি পত্রিকার দেবহাটা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। অনুরুপভাবে সখিপুরের ৬ নং ওয়ার্ডে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠিত হয়।
জনসমাগমপূর্ণ ঈদগাহ বাজারটি নির্মল মন্ডলের নির্বাচিত এলাকার আওতাধীন হওয়ায় করোনা সংক্রমন হ্রাসে ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রশাসন নির্ধারিত সময়ের পর দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গারা তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এবিষয়ে ভূক্তভোগী জনপ্রতিনিধি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও সুফল মেলেনি। এসময় তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, আইনের রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে কীভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা সম্ভব? কারণ হিসেবে জানান, বিদায়ী জেলা প্রশাসক করোনার সংক্রমণ রোধে গত ১৮ জুন একটি র‌্যালির আয়োজন করেন। যেখানে জেলার সর্বস্তরের মানুষদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এসময় তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, করোনা কী শুধু বাজারঘাট, আর চায়ের দোকানে থাকে? জেলা প্রশাসনের র‌্যালিতে কী করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকেনা? যদি থেকেই থাকে তাহলে এধরণের র‌্যালির যৌক্তিকতা কতটুকু? সূত্রমতে এ র‌্যালিকে কেন্দ্র করে জেলার বিদায়ী জেলা প্রশাসক তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। সমালোচনার মুখে পড়ে র‌্যালি সম্পর্কিত তার ফেসবুক পোস্টটিও তিনি ডিলিট করে দেন। এবিষয়ে সাতক্ষীরা নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে জনপ্রতিনিধিরা লকডাউন বাস্তবায়নে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে সে বিষয়ে অবগত নন তিনি। আর যে সমস্ত জনপ্রতিনিধি লকডাউন বাস্তবায়নে ভূমিকা না রেখে বরং বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে খোজঁখবর নিয়ে কঠোর থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, লকডাউন কার্যকরে স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জনপ্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্ব নিয়ে কোনপ্রকার নয়-ছয়ের সুযোগ নেই। আর সেটাই যদি হয় তাহলে জেলা প্রশাসন অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধের বিরুদ্ধে কঠোর হবে বলে জানান তিনি।

The post ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লকডাউনে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3hnWZY3

No comments:

Post a Comment