Tuesday, June 29, 2021

লকডাউন শহর বা নগরে কিছুটা কঠোর কিন্তু গ্রামে নাই https://ift.tt/eA8V8J

জহিরুল ইসলাম শাহীন
মহামারী ও অত্যন্ত ভয়াবহ করোনার হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য এবং ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন, গ্রাম্য পুলিশ এবং বিজিবি বিভিন্ন শহরে এবং উপজেলাতে কঠোর হস্তে দমন করার আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু গ্রাম গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় বা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে শত শত তরুন, যুবক, কিশোর বৃদ্ধসহ সকল ধরনের জনগণের অযাচিত ভিড় এবং হাতে হাতে মোবাইল ফোন । সুতরাং একদিকে কঠোরতা অপর দিকে উদারতা এটা চলতে পারে না। এতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করার কোন সম্ভাবনা নেই। সব দিকে কঠোর নজরদারী করতে না পারলে কোন লাভ হবে না।

সরকারের মনে রাখা উচিত ২০২০ সালের করোনা ভাইরাসের সংক্রমন এবং ২০২১ সালের বর্তমান সময়ের ভাইরাসের সংক্রমণ এক রকম নহে। এবারের ভাইরাস অত্যন্ত মারাতœক, ভয়ানক এবং বিপদজনক। একবার ফুসফসে প্রবেশ করতে পারলে এবং যে ব্যক্তি আক্রান্ত হচ্ছে সেই বুঝতে পারছে আসলে এটা কি ধরনের ভাইরাস এবং মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই কঠিন। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভারতের সংক্রমনের যে ভেরিয়েন্ট খুজে পাওয়া গেছে।

তার নাম আসলে আমরা কি খুব ভাল ভাবে জানি? আলফা হচ্ছে সাধরণ মাত্রার, বিটা হচ্ছে একটু বেশী মাত্রার গামা হচ্ছে, মোটামুটি ভয়বহ এবং ডেল্টা অর্থই হচ্ছে এতটাই ভয়বহ যে মৃত্যুই হয়ত বা একমাত্র পথ। এর পর নতুন রুপে করোনা ভাইরাস শক্তি সঞ্চয় করে ডেল্টা প্লাসে রুপ নিয়েছে এবং এই ভেরিয়েন্টটিই ভারত থেকে আমাদের দেশের সীমান্ত বর্তী জেলা গুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আস্তে আস্তে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নাই।

ইতো মধ্যেই মৃত্যুর হার অনেক বেড়েছে দুই এক দিন আক্রান্ত হবার পর অতিরিক্ত শ্বাস কষ্টের কারণে মারা যাচ্ছে এ সংবাদ ও আমরা টিভির মাধ্যমে এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি এবং সংক্রমনের হার এক সপ্তাহের মধ্যে তিন গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং সবাই আমরা বুঝতে পারছি আমাদের আগামী দিন গুলি কিভাবে কাটবে।

ইতো মধ্যেই আপনারা সকলেই শুনেছেন এবং সংবাদ পত্রে পড়েছেন, টিভির পর্দায় দেখেছেন ইংল্যান্ডে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট প্রায় ৯১% পাওয়া গেছে এবং পৃথিবীর ৯৪ টি দেশে ঐ একই ভয়বহ ভারতীয় ভেরিয়েন্ট লক্ষ্য করা গেছে সুতরাং দেখা যাচ্ছে আবার নতুন করে সারা পৃথিবীতে তৃতীয় ঢেউ বিস্তার লাভ করছে। আমাদের মনে রাখা উচিত তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র জনবহুল দেশ বাংলাদেশ।

এ দেশটির চার দিকে ভারত। ভারত থেকে প্রতি নিয়ত ডেল্টা প্লাস বা ডেল্টা সংক্রমন বহন করে রাতের অন্ধকারে অনেক লোক সীমান্ত পার হয়ে দেশে প্রবেশ করছে এবং ভাইরাসটি ও চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এটা ও সত্য কোন সন্দেহ নেই। যদি আমরা এই মুহুর্ত থেকে সচেতন না হই তবে কি হবে বা আমাদের ভাগ্যে কি ঘটবে একটু ভাবুন, উত্তর আপনার কাছে। আপনার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করেন।

আপনাদের অযথা মোড়ে মোড়ে, পাড়ায় বা মহল্লায় ঘোরা ঘুরির কারণে সংক্রমনিত হতে পারেন এবং আপনার থেকে আপনার স্ত্রী পিতা মাতা সম্ভানেরা ও সংক্রমনিত হতে পারে। যে কোন সময় একটি তাজা প্রাণ এই ভয়বহ ভাইরাস টি কেড়ে নিতে পারে। সুতরাং কোন প্রয়োজন ছাড়া, কারণ ছাড়া কেন আমরা বাড়ী থেকে বের হবো। কেন আমরা সরকারের বিধি নিষেধ মানবো না।

একটু মেনে চললেই আমরাই উপকৃত হবো। বাংলাদেশ সরকারকে উক্ত ভাইরাস থেকে আপনাকে সুস্থ করার জন্য হাসপাতাল গুলিতে কে পরিমান অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, আপনি জানলে বিস্মিত হবেন, এমন কি যে ব্যক্তি সংক্রমনিত হচ্ছে তার কি পরিমান ব্যয় হচ্ছে শুধুমাত্র সে এবং তার পরিবার জানে। ইতো মধ্যেই জার্মানীতে, ফ্রান্সে, স্পেনে, উরুগুয়েতে, বেলারুশে, নেপালে, জাপানে, যুক্তরাষ্ট্রে, কলম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে সহ বহু দেশে নতুন করে আবার সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চিনের কথা আমরা অনেকেই জানি না।

যে গনচিন থেকে ভাইরাসটির উৎপত্তি, যে চিন শিক্ষা দিক্ষা, সংস্কৃতিতে, শিল্পে, বানিজ্যে, কল-কারখানার দিকে বিশ্বে উন্নত দেশ গুলির সাথে প্রতিযোগিতায় প্রায় শীর্ষ স্থানে চলে গেছে। সেই চিনের সংক্রমনের মাত্রা এতটাই বেশী এবং মৃত্যুর রিহার্সল চলছে যেখানে সেখানে কি পরিমান লোক মারা গেলে বিভিন্ন কল-কারখানায় যে সমস্ত শ্রমিক কাজ করতো তাদের সংখ্যা এখন এতটাই কম যে তাদের শিল্প কারখানা প্রায় বন্ধের উপক্রম।

আমার ব্যক্তিগত ধারণা ১০ লাখের অধিক লোক সেখানে মারা গেছে। তাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তাদের সরকার গণমাধ্যমে বা পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করছে না। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশংকা করছেন মহামারী করোনা ভাইরাসের চরিত্র এতটাই নিষ্ঠুর হবে এবং তাদের গতি পরিবর্তন করে এমন ভয়বহ রুপ ধরণ করবে যার নাম হবে ক্যাপটা। যেখানে কোন ঔষধ বা টিকা হয়তো কাজ করবে না।

সুতরাং আমাদের দেশ থেকে শক্তিশালী ও নির্দয় নিষ্ঠুর ভাইরাসের হাত থেকে বাচতে হলে প্রথমে যে কাজটি করা উচিত সেটা হচ্ছে গ্রামের জনগণকে সচেতন করা। তারা কোন কিছু মানতে চায়না। প্রতিটি গ্রামে যাতে জনগন রাস্তায় বা মোড়ে মোড়ে সমবেত না হতে পারে সে জন্যে এ মুহুর্তে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি করতে হবে, তদারকি করার জন্য এবং পুলিশ বাহিনী ও বিজিবিকে অবশ্যই সন্ধ্যার পর থেকে ১২ টা পর্যন্ত টহল জোর দার করতে হবে।

বাজারে, পাড়ায়, মহল্লয় এবং বিশেষ করে উপসানালয় গুলিতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিনা মাস্কে কেউ বের হলে কোন ছাড় নেই। এই ভাবে যদি প্রতিটা ইউনিয়নে বা ওয়ার্ডে মাইকিং করা যায় বা অন্য ভাবে প্রচার চালানো যায় হয়তো বা আমরা মহামারী শক্তিশালী করোনার তৃতীয় ঢেউ থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে পারি। আমাদের এলাকার বিভিন্ন গ্রামে তো অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে বা প্রতি নিয়ত দুই একজন করে মারা যাচ্ছে এথেকে ও আমরা শিক্ষা নিতে পারি। এবং সীমান্ত দিয়ে যাতে মানুষ আর ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ না করতে পারে তার ও তড়িৎ ব্যবস্থা আমাদের অত্যন্ত সাহসী দায়িত্বশীল বিজিবিকে নিতে হবে। কারণ এবারের করোনার ভয়াবহ থাবা থেকে শিশুরা ও মুক্তি পাচ্ছে না।

সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেড় বছরের শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে। শিশুদের কেও কোনভাবে বাড়ীর বাইরে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। সুতরাং আসুন আমরা সবাই মিলে করোনা প্রতিরোধ করি। মাক্স অবশ্যই পরিধান করি। আমাদের বিভাগীয় শহর খুলনা এমুহুর্তে খুবই বিপদজনক অবস্থায় আছে। এছাড়া দক্ষিনাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার অবস্থাও নাজুক। সুতরং বাড়ী থেকে কোন ভাবে আমরা বিনা প্রয়োজনে বের হবোনা।

নিজেদের সন্তানদের সুরক্ষা করি এবং নিশ্চিন্তে সুখী জীবন যাপন করি পরিবারের সকলকেই নিয়ে এবং আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতি নিয়ত প্রার্থনা করি। এই নির্মম, নির্দয়, নিষ্ঠুর, ভয়াবহ, বিপদ জনক ডেল্টা, ডেল্টা প্লাস বা ক্যাপটা নামক করোনা ভাইরাসের হাত থেকে ভাল থাকি সবাই। সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন এমুহুর্তে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কিছুটা বেকায়দায় আছে তাদেরকে আর্থিকভাবে একটু সাহায্য করতে পারলে মনেহয় তারাও হাসিখুশি মনে তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে কিছুটা চলতে পারবে এবং সরকার যে লকডাউন বা শাটডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা মেনে নিয়ে তারা চলতে পারবে।

লেখক: জহিরুল ইসলাম (শাহীন), অধ্যাপক, কলারোয়া মহিলা কলেজ, কলারোয়া, সাতক্ষীরা।

The post লকডাউন শহর বা নগরে কিছুটা কঠোর কিন্তু গ্রামে নাই appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/35YRQAr

No comments:

Post a Comment