মেহেদী হাসান, খুলনা:
দেশে করোনার নতুন ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে খুলনা। প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যু এবং সংক্রমণে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে।
খুলনা অঞ্চলে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় করোনা হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। করোনা হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে সংকট দেখা দিয়েছে শয্যা। রোগীর চাপ সামলাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। তবুও রোগীর সংখ্যা বেশিই থাকছে। ফলে নগরীর আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ শয্যার করোনার নতুন ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালিত ১৩০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। এখানেও বাড়ছে আরও ৭০ শয্যা। সব মিলিয়ে খুলনার দু’টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বাড়ছে আরও ১১৫ শয্যা। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল শনিবার থেকে নগরীর শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে তৃতীয় এ করোনা ইউনিটটি চালু হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ২৯ জুনের এক পত্রের আলোকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশের আলোকে বুধবার সকালে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ এস এম মোর্শেদ সভাপতিত্বে সকল বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠক হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাসপাতালের উত্তর পাশের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন প্লাস্টিক এন্ড বার্ন ইউনিটের ২০টি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিনি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগে ১৫টি বেড স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। ওই ৩৫টি বেড ছাড়াও চতুর্থ তলার আইসিইউ বিভাগের ১০টি বেডও করোনার রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
তবে সেখানে গতকাল দু’জন রোগী থাকায় একজনের অবস্থা ভালো থাকায় তাকে নিউরোলজী বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। অপর রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন থাকায় তাকে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে যদি তিনি অন্য কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে না যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে তার আত্মীয়-স্বজন চাইলে করোনা রোগীদের পাশাপাশি তাকেও সেখানে রাখা যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ।
খুলনা করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডাঃ সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৩০ শয্যার হাসপাতালে ১৯৮ রোগী ভর্তি ছিল। যা হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার বেশি। শয্যা না থাকায় অতিরিক্ত রোগীদের থাকতে হচ্ছে মেঝেতে।
এছাড়া খুলনা জেনারেল হাসপাতালেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৭০ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এর মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ৩৭ জন নারী। হাসপাতালটিতে ধারণ ক্ষমতা ৭০ শয্যা। এ তথ্য জানিয়েছেন খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডাঃ কাজী আবু রাশেদ।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও উপ-পরিচালক ডাঃ এস এম মোর্শেদ জানান, বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের প্রধান ডাঃ আব্দুলাহ বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় ছুটিতে আছেন এবং সেখানে রোগীর সংখ্যাও খুব কম সে কারণে ওই ইউনিটের ২০টি বেডকে করোনা ইউনিট করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জরুরি বিভাগের পাশের কক্ষে আরও ১৫টি বেডের সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ নিচ তলার এই ৩৫টি বেডে করোনা রোগী ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
সেখানের প্রতিটি বেডের সাথেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের সংযোগ দেয়া আছে। আর করোনা রোগীদের মধ্যে যাদের আইসিইউ প্রয়োজন হবে তাদেরকে চতুর্থ তলার হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সাধারণ রোগীদের কারও আইসিইউ প্রয়োজন হলে তাদের জন্য কোন সুযোগ থাকছে না বলেও তিনি জানান। প্রস্তুতি চলছে। বেডগুলো সংযোজন করে শনিবার থেকে হয়তো রোগী ভর্তি করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।
আপাতত যে জনবল আছে তা দিয়েই যাত্রা শুরু হবে উলেখ করে তিনি বলেন, তবে আরও কিছু জনবল চেয়ে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দেয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় ২০ জন ডাক্তার, ৫০ জন নার্স এবং ৫০ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী চাওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এ জনবল না দেয়া হলে করোনা ইউনিট চালিয়ে রাখা অসম্ভব হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আগামীকাল শনিবার থেকে যাতে করোনা রোগী ভর্তি করা যায় সেজন্য চেষ্টা চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে সংশ্লিষ্টদের হাসপাতালে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেটুকু কাজ বাকী রয়েছে তা শুক্রবারের মধ্যে শেষ হবে বলেও তিনি আশা করছেন।
করোনা ইউনিটে শুধুমাত্র পজেটিভ হয়েছে এমন রোগীদের ভর্তি করা হবে। এজন্য ইউনিটটি সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে। নিচ তলা থেকে রোগীদের চতুর্থ তলার আইসিইউতে নেয়ার জন্যও ব্যবহার করা হবে পৃথক লিফট।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গত বৃহস্পতিবার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। করোনা ইউনিটের বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। সর্বশেষ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও অন্যান্যদের সাথে বৈঠকও করেন তিনি।
খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যাসহ মোট ৪৫ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। করোনা হাসপাতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও ৭০টি শয্যা। এতে করে রোগীদের আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, খুলনা মেডিক্যালের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১৩০ বেড, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের ৭০ বেড, বেসরকারি গাজী মেডিক্যাল হাসপাতালে ১২০ বেড ও শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ বেড মিলিয়ে ৩৬৫ বেডে করোনা রোগীরা সেবা নিতে পারবেন।
The post খুলনা করোনা রোগীদের জন্য বাড়ছে আরও ১১৫ শয্যা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2V1KMRp
No comments:
Post a Comment