Tuesday, November 3, 2020

শিশুর বিকাশে মাতৃত্বকালীন ছুটি https://ift.tt/eA8V8J

শাকেরা আহমেদ
কর্মজীবী নারীদের প্রতি সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হলো দেশে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাসে উন্নীত করা। এটা কর্মজীবী মায়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে এ ছুটি কার্যকর করে। আগে ছিল চার মাস। একজন সরকারি কর্মজীবী নারী তার সমগ্র চাকরি জীবনে এ সুযোগ সর্বোচ্চ দু’বার পেয়ে থাকে। তবে সরকারি কর্মজীবী নারীরাই ছ’মাস পূর্ণবেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করতে পারেন। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে থাকে।

মাতৃত্বকালীন ছুটি ছ’মাস করা কর্মজীবী মায়ের শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে দারুণভাবে সহায়ক হচ্ছে। একটি শিশুর সঠিক পুষ্টি ও বেড়ে ওঠার জন্য জšে§র পর মায়ের শালদুধ, প্রথম ছ’মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো (এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং) এবং মায়ের সান্নিধ্যে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ মায়ের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। শিশুর শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থতার জন্যও মায়ের দুধ খুব গুরুত্বপূর্ণ। চাকরিজীবী মায়েরা কর্মস্থলে যাওয়ার কারণে আগে ঠিকমতো বুকের দুধ শিশুকে দিতে পারতেন না। এটি একজন মায়ের জন্য যেমন অত্যন্ত কষ্টদায়ক ছিল তেমনি শিশুও তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হত। একজন কর্মজীবী মায়ের অফিস আদালতে এসে সারাক্ষণ শিশুর চিন্তা মাথায় থাকলে কর্মক্ষেত্রেও দাপ্তরিক কাজের সমস্যার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকায় সে সমস্যা লাঘব হয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে।

আমাদের দেশে মাতৃত্বকালীন ছুটি বলতে শুধু মায়ের ছুটির বিষয়কে বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু অন্যান্য দেশে মাতৃত্বকালীন ছুটি বলতে পিতৃত্বকালীন ছুটিকেও বোঝানো হয়। এসময় একজন মা বা একজন বাবা তাদের নবজাতক শিশুর পরিচর্যার জন্য কর্মস্থল থেকে ছুটি নেন। বিভিন্ন দেশে মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে একজন বাবা বা একজন মা ভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করে থাকেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে এ ছুটির মেয়াদও ভিন্ন রকমের। যেমন-ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় পূর্ণ বেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২ সপ্তাহ, নেপালে ৫২ দিন এবং আফগানিস্তানে ৯০ দিন। তবে চীন, অস্ট্রেলিয়ায় এক বছর পর্যন্ত ছুটি নেয়া যায়। চীনে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাবাও নিতে পারেন আবার মাও নিতে পারেন। অর্থাৎ ভাগাভাগি করে কিছু মাস মা, আবার কিছু মাস বাবা এভাবে ছুটি নেয়ার বিধান রয়েছে। সবটা ছুটিই পূর্ণ বেতনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে যেমন-লাইবেরিয়া, পাপুয়া নিউগিনিতে এখন মাতৃত্বকালীন/পিতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে বেতন দেয়ার বিধান নেই। ফ্রান্স ও বুলগেরিয়ায় শতভাগ বেতনসহ প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে। স্কটল্যান্ডে ৩৯ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয়। যার মধ্যে শুধু ৬ সপ্তাহের জন্য ৯০ ভাগ বেতন দেয়া হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করায় বাংলাদেশ এখন শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি নয় বিশ্বের অনান্য অনেক দেশের তুলনায় অগ্রগামী।
ভবিষ্যৎ প্রজš§কে গড়ে তোলার দায়িত্ব শুধু বাবা-মায়েদের নয়, গোটা সমাজের এবং রাষ্ট্রের। মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে সরকারের গৃহীত এ সিদ্ধান্ত একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে দেশের পক্ষে নেতৃত্বদানকারী আজকের শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা বিধান করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
আর্থসামাজিক অবস্থা এবং সরকারের ইতিবাচক নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ দ্রুত বাড়ছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস হওয়ার কারণে নারীরা কাজে উৎসাহিত হচ্ছেন এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে পোশাক শিল্প, অফিস, আদালত, সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে নারীর অবদান ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নারীরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশা যেমন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, পাইলট, পুলিশ, সেনাবাহিনী, সাংবাদিকতাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সবক্ষেত্রেই তারা যোগ্যতার সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। কর্মজীবী মায়েদের স্বার্থে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস নারীদের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগাচ্ছে।

নারীরা যাতে আরো বেশি করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য বর্তমান সরকার কর্মস্থলে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করেছে। কর্মজীবী মায়েদের সন্তানেরা যাতে মায়ের সান্নিধ্যে থাকতে পারে তার জন্য ঢাকা শহর ছাড়াও বিভিন্ন জেলা শহরে ইতোমধ্যেই ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলেছে। সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলে কর্মজীবী মায়েরা যেমন স্বস্তিবোধ করছেন, তেমনি শিশুরাও মায়েদের কাছ থেকে যথাযথ যতœ ও সুরক্ষা পাচ্ছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৪০জন নারীকর্মী রয়েছেন সেখানে একটি শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। গত বছর হাইকোর্ট এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেয়। তবে দেশে নারী শিক্ষা এবং কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সরকার আগে থেকেই শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপনে মনোযোগী হয়েছে। এ বাস্তবতার নিরীখে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন করার বিধান রেখে ‘শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র আইন ২০১৯’ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
সামগ্রিকভাবে জাতীয় উন্নয়নে নারীর ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত হলেও কিছু প্রতিবন্ধকতা এখনও রয়েছে। গর্ভধারণ ও প্রসব পরবর্তী সন্তানের পরিচর্যার মূল দায়িত্বটি এখনো মূলত: মাকেই পালন করতে হয়। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্মক্ষেত্রে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ব্যাহত হয় নবজাতক সন্তানের সূষ্ঠু পরিচর্যা। এ দশক আগেও অনেক কর্মজীবী মা সন্তান জš§ দেবার কারণে চাকরি ছেড়ে দিতেন। কিন্তু ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির ফলে সে বিড়ম্বনা থেকে সুরক্ষা পেয়েছে কর্মজীবী নারীরা। এখন আর চাকরিজীবী মায়েদের সন্তানরা প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ পান করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় না।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণের পেছনে মাতৃত্বকালীন ছুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশ এগিয়ে যাবার সাথে সাথে নতুন প্রজšে§র শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের দিক বিবেচনায় এনে বর্তমান সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সরকারি কর্মজীবীদের পাশাপাশি বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সব পর্যায়ের কর্মজীবী মায়েদেরও ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করা প্রয়োজন। এতে আরও বেশি নারী কর্মমূখী হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।

The post শিশুর বিকাশে মাতৃত্বকালীন ছুটি appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/366IDG2

No comments:

Post a Comment