প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হল
আসাদুজ্জামান সরদার: ‘আমাগির দু:খ দিকার (দেখার) কেউ ছেল না। মরিচ্চাপ নদীর গাভার চরে কোন রকমে মাটির ঘর বান্দি (বেঁধে) থাকতাম। ঝড় বৃষ্টি হ’লি আমাগির সাইক্লোনে গে (গিয়ে) উঠতি হ’তু। নুন আনলি পান্তা ফুরোই যেতু। ঘর বান্ধার মতোন বা জমি কিনার মতোন টাকা পয়সাও নেই। জীবনে অনেক কষ্ট করিছি। সরকারিভাবে জমি ও পাকা ঘর পাইছি। এ যে কীরাম আনন্দ তা ক’য়ি বুজুতি (বলে বোঝাতে) পারবো না। ভাবতিও পারিনি পাকা ঘরে থাকতি পারব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমারে পাকা ঘর দিছেন। জমি দিছেন। জমির দলিল পর্যন্ত আমাগির বুঝুয়ি দিছেন। তারে কী ক’য়ি ধন্যবাদ জানাবো। সে ভাষা আমাগির জানা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সারাজীবন দোয়া করবো। আল্লাহ যেনো শেখ হাসিনার পরিবারের সকলকে জান্নাতের মধ্যে সুন্দর ঘর তৈরী করে দেয়।
মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জেলায় দ্বিতীয় ধাপে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার হিসেবে জায়গাসহ পাকা বাড়ি পেয়ে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন লাইলী খাতুন। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের ব্যাংদহা গ্রামের আসলামের স্ত্রী। শুধু তিনি না তানজিয়া খাতুনও পেয়েছেন ঘরসহ জমি। সেই সাথে বুঝে পেয়েছেন জমির দলিল। পাকা ঘর পেয়ে তাদের পরিবারের সবাই আনন্দিত। লাইলী খাতুন জানজিয়া খাতুনের মতো ব্যাংদহা গ্রামের ৮০ জন সরকারি ঘর পেয়েছেন।
একই গ্রামের আব্দুল মাজেদ বলেন, গাভা চরের মধ্যে কোন রকম পাতলা টিন দে ঘর বান্দি থাকতাম। আমাদের দেকার (দেখার) কেউ ছিল না। সরকার থেকে পাকা ঘর পাইছি। আমাগির কষ্ট এবার লাঘব হবে।
মঞ্জিলা খাতুন বলেন, আমরার এখন পাকা ঘর, রান্নার ঘর, বাথরুম, টিউবওয়েল সবই আছে। পানির জন্নি (জন্য) কারো বাড়ি যাতি হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সারাজীবন দোয়া করবো।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে জমিসহ ঘর পান সাতক্ষীরা জেলার সাত উপজেলার ১ হাজার ১৪৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় যাদের জমি নেই, ঘর নেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি খাস জমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জেলায় দ্বিতীয় ধাপে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার হিসেবে রবিবার (২০ জুন) ৬৬৫ জন ভূমিহীন ও পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ২ শতাংশ জমি দিয়ে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সবগুলো ঘর একই নকঁশায় হচ্ছে। দুটি রুম, একটি করিডোর, একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর। দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা।
সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফ হোসেন বলেন, আমার ওয়ার্ডের অধিকাংশ মানুষ মরিচ্চাপ নদীর চরে বসবাস করতো। ঝড় বৃষ্টি হলেও মানুষগুলোর খুবই কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হতো। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য গাভায় ‘বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা পল্লী’ গড়ে তুলেছেন। এসব মানুষ কখও ভাবতেও পারেননি তারা পাকা ঘরে বসবার করবে। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে এখানকার মানুষ এখন সুখে শান্তিতে বসবাস করবে।
সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামসুর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরগুলোর উপকারভোগী বাছাই করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৩০ পরিবাবের মাঝে গৃহ ও দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাবে প্রায় ৮০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে গৃহ ও দলিল হস্তান্তর করা হচ্ছে। প্রকৃত ভূমিহীনদের বাছাই করে ঘরগুলো দেওয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিখন বনিক বলেন, জেলার ৭টি উপজেলায় ৬৬৫ টি ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরের দলিল মাঝে বিতরণ করেছেন। এবার জেলার ৭ টি উপজেলার মধ্যে সদরে ১০০, কলারোয়ায় ২০, তালায় ৭০, আশাশুনিতে ২৬০, শ্যামনগরে ৭০, দেবহাটায় ৭৫ ও কালিগঞ্জের ৭০টি ভূমিহীন পরিবার পাবেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়েছেন। প্রথম দফায় সাতক্ষীরা জেলার সাত উপজেলার ১ হাজার ১৪৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। সুবিধাভোগীরা রাস্তার পাশে, ফুটপাত কিংবা অন্যের জায়গায় বসবাস করতেন। তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেয়েছেন। পর্যায়ক্রমে জেলার সব ভূমি ও গৃহহীনদের এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
The post ‘আমরা ভাবতিও পারিনি এইরাম পাকা ঘরে থাকতি পারব’ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3qs8pyf
No comments:
Post a Comment