পত্রদূত ডেস্ক: দৈনিক পত্রদূতের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভোমরা স্থল বন্দর ও চেম্বার অব কমার্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষাবিদ স ম আলাউদ্দিনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি, দৈনিক ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াজেদ কচি।
আব্দুল ওয়াজেদ কচি বলেন, ১৯৯৬ সালের জুন মাস। একযুগ আগের ঘটনা। দিনটি ছিল ১৯ জুন। সন্ধ্যার পর টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত ১০টার পর হঠাৎ যেন পুরো সাতক্ষীরা শহর থমকে গেল। খসে পড়লো একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। এই সুন্দর পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিল একটি প্রতিষ্ঠান, একজন সফল অভিভাবক, একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন সাংবাদিক, একজন ব্যবসায়ী। যিনি দেশ নিয়ে ভাবতেন। তিনি আর কেউ নন। তিনি হচ্ছেন সাতক্ষীরার আপামর মানুষের কাছে সুপরিচিত সদালাপী আলহাজ স ম আলাউদ্দিন। প্রকৃতির নিয়মে সবা কে একদিন বিদায় নিতে হবে। সে বিদায় যদি হয় অস্বাভাবিক, নির্মম তাহলে তাকে কি বলা যেতে পারে সে ভাষা আমার জানা নেই। আমি দৈনিক কাফেলায় বার্তা বিভাগে কাজ করতাম। ওইদিন দেশের জাতীয় সংসদের কয়েকটি আসনে উপ-নির্বাচন হয়েছিল। আমি কাফেলা অফিসে কাজ করছি। রাত ১০টার পর। সম্ভবত ১০টা ২৫ মিনিটে। বৃষ্টির মধ্যেই খবর পেলাম দৈনিক পত্রদূত অফিসে বসে টেলিভিশনে উপ-নির্বাচনের ফলাফল দেখার সময় স ম আলাউদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ তার মত মানুষকে কেউ হত্যা করতে পারেনা। দৈনিক কাফেলা সম্পাদক আবদুল মোতাালেব সাহেব থরথর করে কাপতে কাপতে ছুটে এলেন আমার কাছে। বললেন ওই একই কথা। এরই মধ্যে খবর আসলো হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক স ম আলাউদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। থমকে গেল পুরো সাতক্ষীরা। পতন হলো একটি প্রতিক্ষণের। আলহাজ স ম আলাউদ্দিন ছিলেন আমার মামার ঘনিষ্ট বন্ধু। আমি তাই মামা দিন কথা বলিনি। ঘনিষ্ঠতাও ছিল না। তবে তার সাথে আমার কারণবশত সপ্তাহব্যাপী যোগাযোগ রাখতে হয়েছিল। যোগাযোগটা কখনো সরাসরি কখনো টেলিফোনে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপি সরকারের একটা প্রহসনের সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের কয়েক দিন পূর্বে বাংলাদেশস্থ আমেরিকান দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা যিনি আমেরিকান, এসেছিলেন সাতক্ষীরায়। সৌভাগ্যক্রমে আমি ছিলাম তার সমন্বয়কারী। একদিনের জন্য তিনি এসেছিলেন সাথে একজন বাংলাদেশী দোভাষিকে সাথে নিয়ে। আমার কাজ ছিল সাতক্ষীরার সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে এবং চেম্বারের সভাপতির সাথে, তাদের সময়মত সাক্ষাত করার ব্যবস্থা করা। এজন্য আমি পূর্বেই সাতক্ষীরার বড়বড় দলের নেতাদের সাথে ধারাবাহিকভাবে সাক্ষাৎ করার সময় এবং স্থান নির্ধারণ করে রেখেছিলাম। বিদেশী যেদিন এসেছিলেন ওইদিন ছিল জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার দিন। আমার পুত্রের পরীক্ষাকে উপেক্ষা করে আমাকে তাদের সময় দিতে হয়েছিল। সকাল ১০টার দিকে তারা সাতক্ষীরায় এসেছিলেন। সর্বপ্রথম নির্ধারিত ছিল নিউ মার্কেটের দোতলায় চেম্বারের কার্যালয়ে সভাপতির সাথে সাক্ষাতের সময়। কথা মতো চেম্বারের সভাপতি স ম আলাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন কার্যালয়ে। সেখানে আরো ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এএফএম এন্তাজ আলী। বিদেশীকে প্রথম স্বাগত জানালেন আলাউদ্দিন সাহেব। কথোপকথন হলো ইংরেজিতে। কথা হলো দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে। কথা হলো সাতক্ষীরার উন্নয়নে ভোমরা স্থলবন্দরের ভূমিকা নিয়ে। ওই আমেরিকান পরে মন্তব্য করেছিলেন- He is a great man and he is a good politician. He knows Bangladeshi politics. এর কয়েক মাস পরের ঘটনা। জুন মাসের ১৯ তারিখ। রাত ১০টার পর ঘাতকের বুলেটের আঘাতে সেই মহান ব্যক্তিত্ব তারই সম্পদনায় প্রকাশিত সন্তানতুল্য দৈনিক পত্রদূত কার্যালয়ে প্রাণ হারালেন। মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিনের কাছাকাছি যে আসেনি সে বুঝবে না তার সম্পর্কে। সাতক্ষীরাবাসীর দু:খ এক যুগ পার হতে চললো স ম আলাউদ্দিন হত্যার বিচার কাজ এখনো শেষ হয়নি। কেন, কি কারণে, কোন স্বার্থে কারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তা সাতক্ষীরাবাসীর অজানা নয়। এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার তরান্বিত হোক এটা সকলেই চায়। আমিও। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। সমবেদনা জানাই তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি।
The post স্মরণ: হি নোজ বাংলাদেশী পলিটিক্স appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/34R9ci6
No comments:
Post a Comment