বিলাল হোসেন
উপকূলের মানুষের জন্য কী রেখে গেল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস? বাংলাদেশর দক্ষিণ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানার কথা থাকলেও সেটির গতিপথ পরিবর্তন করে ভারতের দিঘাসহ বিভিন্ন প্রদেশে আঘাত হানে। কিন্তু বাংলাদেশের উপকূলের মানুষের জন্য কী রেখে গেল ইয়াস? উপকূলে ইয়াস আঘাত না হানলেও যে দাপট ইয়াস দেখিয়েছে তার প্রভাবে উপকূল লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আম্পানের পরে আবার একবার ধ্বংসের মুখে পড়লো উপকূলের মানুষ। আম্পানের ক্ষত থাকতেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আবারও তলিয়ে গেল উপকূলের শ্যামনগরের ৬টি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী কয়ারা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীর পানি বৃুদ্ধি পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করা শুরু করে। বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবেশের কারণে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যায়। উপকূলের মানুষের ক্ষতি হয় হাজার হাজার বিঘার মৎস্য ঘের, সুপেয় পানির উৎস, ঘরবাড়ি, পশু-পাখি, গাছ-গাছালি, রাস্তাঘাট, কাঁকড়ার প্রজেক্ট। ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তবে উপকূলের মানুষ এসকল ক্ষতির জন্য দায়ি করেছেন ঝুঁকিপণ বেড়িবাঁধকে। বারবার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের আন্দোলন করলেও তা পূরণ হয়নি। সরকারি আশ্বাস প্রদান করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। গাবুরা ইউনিয়নের আবু হাসান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়ে আতঙ্কিত থাকি। ইয়াস আমাদের সব শেষ করে দিয়ে গেছে। বুড়িগোয়ালীনির পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের তাপস মন্ডল বলেন, গত ২৭ মার্চে ভেঙে ছিল এই এলাকা সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এক দেড় মাস পরে পুরাতন ভাঙনের পাশে ইয়াসের সময় আবার ভেঙেছে। আমরা এখন কী দিয়ে পরিবার চালাবো? সব শেষ হয়ে গেছে। কৈখালী গ্রামের মজিদ বলেন, আমার পুকুরে মিষ্টি পানির মাছ চাষ করি। ইয়াসের এসে লোনা পানি প্রবেশ করে সাব মাছ মরে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয় নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিরা।
মুন্সীগঞ্জ ইউপি চেয়াম্যান আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, বেড়িবাঁধের পাশ দিয়ে যে সকল ঘর বাড়ি ছিল পানি ঢোকার কারণে ৩ থেকে ৪শত ঘর বাড়ি ও মৎস্য ঘের ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
কৈখালী ইউপি চেয়াম্যান আব্দুর রহিম বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েক হাজার বিঘার মৎস্য ঘের পানির নিচে তলিয়ে আছে। এছাড়া সুপেয় পানির সকল উৎস নষ্ট হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধের ১০০টির অধিক পয়েন্ট থেকে ওভার ফ্লো হয়ে পানি ঢুকেছে।
বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল বলেন, ২০টি পয়েন্ট ভেঙে পানি ঢোকে ইউনিয়নে। ৩ ভাগের ২ ভাগ পানির নিচে তলিয়ে আছে। ২ শতাধিক ঘরবাড়ি একেবার নষ্ট হয়ে গেছ। ৭ হাজার বিঘার মতো মৎস্য ঘের ডুবে আছে। ২ হাজার বিঘার মতো কাঁকড়ার প্রজেক্ট নষ্ট হয়েছে।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রহমান বলেন, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে গাবুরা ইউনিয়ন সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে। ইয়াস না আসলেও তার প্রভাবের কারণে নদীর পানি অধিক বৃদ্ধি পায়। যে কারণে নতুন করে ভেঙে প্ল¬াবিত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার সম্পদ।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজার গিফারী বলেন, মানুষের প্রচুর পরিমানে ক্ষতি হয়েছে। কি পরিমান ক্ষতি তা এখন সঠিক বলা যাচ্ছে না। দু’এক দিন পরে জানা যাবে।
The post ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: উপকূলে রেখে গেল স্মৃতি appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3wWOdGJ
No comments:
Post a Comment