Monday, December 28, 2020

কেমন আছে মা-বাবা, ভাই-বোন হারা সেই অবুঝ শিশু মারিয়া! https://ift.tt/2WRNSVQ

কেমন আছে মায়ের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকা সেই ৫মাসের অবুঝ শিশু মারিয়া সুলতানা। গত ১৫ অক্টোবর ভোররাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলশি গ্রামে মারিয়ার পিতা মাছ ব্যবসায়ী শাহীনুর রহমান, মা সাবিনা খাতুন, বড় ভাই সিয়াম হোসেন মাহী ও বোন তাসমিন সুলতানাকে গলাকেটে হত্যা করে তার আপন চাচা রায়হানুল ইসলাম।

মায়ের রক্তাক্ত লাশের পাশে ছোট্ট ৫মাসের শিশু মারিয়াকে অক্ষত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় ঘাতক। মায়ের রক্তপান করে বেঁচেছিল মারিয়া সুলতানা। নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায় ৫ মাসের শিশু কন্যা মারিয়া। শিশু মারিয়ার দায়িত্ব নেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম মোস্তফা কামাল।
তিনি ওই শিশুর চিকিৎসা ও বেড়ে ওঠার সব ব্যয়ভার বহন করবেন বলে ঘোষণা দেন। শিশুটি বর্তমানে হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের হেফাজতে রয়েছে।

কেমন আছে সেই মারিয়া জানতে চাইলে ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন বলেন, প্রতিদিন ভোর ৪টায়, যখন মুয়াজ্জিন যখন ফজরের আজান দেয় তখন ঘুম ভাঙে মারিয়ার। ঘুম থেকে উঠে খেলা করে। দুধ খায়। বুকের উপর আবার ঘুমায়। রাতে যদি জেগে গেলে আর বেডে থাকে থাকে না, সরাসরি বুকে এসে ঘুমায়। সকালে মারিয়াকে নিয়ে হাঁটি, বেড়াতে যাই। মারিয়াকে নিয়ে আমার দিন কাটে।

ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন আরও বলেন, মারিয়া আমাদের আম্মু ডাকে, আব্বু ডাকে। মাঝে মাঝে জিদ ধরে। নাক-চোখ খামছে দেয়। দুষ্টমিও করে। খেলনা নিয়ে খেলে। মারিয়ার মায়ের অভাব আমার কাছে কম আছে বলে আমি মনে করি না।

নাসিমা খাতুন বলেন, প্রথম যেদিন মারিয়াকে নিয়ে আসি তারপর থেকে ৫/৬ দিন কালো রঙের পায়খানা করেছে। আমার ধারণা-মারিয়া প্রচুর রক্ত পান করেছিল বলে পায়খানার রঙ কালো ছিল। তিনি বলেন, প্রথমে ফিডারে খেতে পারতো না, এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। সাতক্ষীরার ডিসি স্যার আমাকে সাময়িক দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আমি চাই মারিয়া আমার কাছে স্থায়ীভাবে থাকুক।

আমার কারো হেল্প লাগবে না, কারো সাহায্য লাগবে না। মারিয়াকে আমার দুই ছেলে ও বৌমারাও আদর স্নেহে জড়িয়ে রেখেছে। ওর প্রতি সবাই খেয়াল রাখে। মারিয়ার সাথে খেলতে খেলতে দিনকাটে আমাদের। দেশবাসির কাছে আমার একটাই চাওয়া- সবাই যেনো মারিয়ার জন্য দোয়া করে।
মারিয়া সুলতানার দাদি শাহিদা সুলতানা বলেন, আমার তো আর কেউ নেই। আমি তো এখন সব হারা। আমি মারিয়াকে নিয়ে বাঁচতে চাই।

এদিকে সময় পেলেই মারিয়ার খোঁজ-খবর নেন সাতক্ষীরার  জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। মাঝে মাঝে নিজের কাছে এনে পরম আদর স্নেহে খেলা করেন মারিয়ার সাথে। গত ২৭ অক্টোবর নিজের কাছে এনে মারিয়ার সাথে সময় কাটান তিনি। এরপর ২৫ নভেম্বর মারিয়াকে নিয়ে দীর্ঘ সময় খেলা করেন। খোঁজ খবর নেন।

জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, কলারোয়ায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের জীবিত একমাত্র চার মাসের কন্যা শিশুর দায়িত্ব নিয়ে আপাতত দেখাশোনার জন্য স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে রাখা হয়েছে। তাকে সাময়িকভাবে দেখভাল করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মারিয়া-যার মা-বাবা, ভাই-বোন একরাতে কলারোয়ায় নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হয়।  তার দাদি এবং নানা নানি উভয়েই তাকে নিজেদের কাছে রেখে মানুষ করতে চায়। এছাড়াও শতাধিক নিঃসন্তান দম্পতি মারিয়াকে দত্তক নিতে প্রবল আগ্রহী। মারিয়া এখন  ভালো আছে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ অক্টোবর ভোররাতে কলারোয়া উপজেলার খলশি গ্রামে মাছ ব্যবসায়ী শাহিনুল ইসলামসহ পরিবারের চার সদস্যকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ওই দিন রাতেই শাহিনুলের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সাতক্ষীরা সিআইডিকে। হত্যার দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় নিহতের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামকে। পরদিন রায়হানুলকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

পরে রায়হানুলকে রিমান্ডে নেয় সিআইডি। এরপর হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে রায়হানুল স্বীকার করেন চাপাতি দিয়ে নিজেই ভাই শাহিনুল ইসলামসহ পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করেছেন।

নির্মম এ হত্যাকান্ডের একমাত্র আসামি রায়হানুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ২৪ নভেম্বর-২০২০ তারিখে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।  সাতক্ষীরার আমলি আদালত-১ এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ওই চার্জশিট দাখিল করেন।

সাতক্ষীরা সিআইডির পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, ২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও আদালতে ১৬৪ ধারায় রায়হানুল ইসলামের দেয়া জবানবন্দি পর্যালোচনা করে তাকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

এসএম শহীদুল ইসলাম:

The post কেমন আছে মা-বাবা, ভাই-বোন হারা সেই অবুঝ শিশু মারিয়া! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3hlvuxX

No comments:

Post a Comment