Monday, December 28, 2020

সাতক্ষীরায় ২৪ গ্রামের দলিত জনগোষ্ঠী নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত! https://ift.tt/eA8V8J

সেলিম হোসেন: সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ২৪ গ্রামে পিছিয়ে পড়া দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অর্থের অভাবে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা ভুগছেন নানা সমস্যায়। সদর উপজেলার এই ৩টি ইউনিয়নের ২৪টি গ্রামে রয়েছে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০০০ পরিবার। তবে দলিত সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, জনগোষ্ঠীর নিরাপদ সুপেয় পানি প্রকট সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি বলেন, ‘দলিত’ সংস্থাটি সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীকে আচরনগত পরিবর্তনে এগিয়ে নিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে সচেতনতা সৃষ্টিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এবং জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে ধারাবাহিকভাবে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ পানি ও নিরাপদ পায়খানা ও সাবান ব্যবহারের উপর সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি করোনা ভাইরাস ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপরও সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থাটি এ্যাডভোকেসী কর্যক্রম ও পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যে দলিত এনজিওর ওয়াশ এসডিজির ওয়াই বাংলাদেশ সাব-প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানার ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সাবান ও মাস্ক ব্যবহার সম্পর্কে ১৩টি গ্রামের ৩৯০টি পরিবারের মধ্যে পৌছে দিয়েছেন।
দলিত সংস্থার ওয়াস এসডিজি প্রকল্পের, প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিকাশ চন্দ্র দাস আরও বলেন, দলিত এনজিওর ওয়াশ এসডিজির ওয়াই বাংলাদেশ সাব-প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানার ব্যবহার, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও করোনা ভাইরাসের মতো মহামারী থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে সাবান ও মাস্ক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে চলেছে। সরেজমিনে তথ্য নিতে গেলে দেখা যায় যে নিরাপদ পানির ব্যবহার ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখনো ৩টি ইউনিয়নের ২৪ গ্রামের মধ্যে ১৩টি গ্রামে পৌছিয়েছে বাকী ১১টি গ্রামে পৌছায়নি। কিন্তু এই ১১টি গ্রামে দলিত সংস্থা ওয়াশ ক্যাম্পেইনের কাজ শুরু করেছেন এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে দলিত সম্প্রদায়ের বাড়ি বাড়ি যেয়ে প্রচার চালাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঝাউডাঙ্গা ও বল্লি ইউনিয়নের মধ্যে গভীর নলকুপের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ইউনিয়নরে ৫টি গ্রামের যেমন ওয়ারিয়ার কায়পুত্রপাড়া, বলাডাংগা কারিকর পাড়া, মুকুন্দপুর কলোনী পাড়া, ছয়ঘরিয়া দাসপাড়া ও আখরাখোলা কারিকরপাড়ায় ১৫০ পরিবারের মধ্যে দলিত সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবাররা কেনা পানি পান করেন। আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের মধ্যে যেমন বাবুলিয়া দাস পাড়া,ইন্দিরা কায়পুএ পাড়া, চুপড়িয়া দাস পাড়া, রামেরডাংগা ভগবেনে পাড়া, কাশেমপুর হাজামপাড়া ১৫০ পরিবারের মধ্যে দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ পরিবারের এলাকাতে গভীর নলকুপ নেই। কিন্তু দলিতের আচারনগত পরিবর্তনের উপর বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে তারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কেনা পানি পান করছে।
বল্লী ইউনিয়নে ৩টি গ্রামের মধ্যে কাঠালতলা দাসপাড়া, মুকুন্দপুর কারিকর পাড়া ও রাইপুর ভগবেনেপাড়ায় ৯০ পরিবারের মধ্যে কোন গভীর নলকুপ নেই। কিন্তু দলিতের আচারণগত পরিবর্তনের উপর বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে তারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কেনা পানি পান করছে। কিন্তু এটা কি স্থায়ী কোন সমাধান? যেহেতু অত্র এলাকাতে গভীর নলকুপ সাকসেস না সেক্ষেত্রে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের স্থায়ী সমাধানের জন্য রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেমের মতো কোন প্রযুক্তি অত্র এলাকায় স্থাপন করা প্রয়োজন যেটা একমাত্র সরকারের পক্ষেই সম্ভব। ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সর্বাগ্রে দলিত জনগোষ্ঠীর বসবাসকৃত এলাকাতে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া ঋষিপাড়া, ইন্দ্রিরা সরকারপাড়া, চুপড়িয়া ঋষিপাড়া, রামেরডাঙ্গা ভগবানীপাড়া ও কাশেমপুর হাজামপাড়ার প্রায় ২৫২টি পরিবারের নারী-শিশু মিলে প্রায় ১১৬০ জন নিরাপদ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে বল্লী ইউনিয়নের কাঁঠালতলা ঋষিপাড়া, মুকুন্দপুর কারিকরপাড়া ও রায়পুর ভগবানীপাড়ার ১৭৫টি পরিবারের প্রায় ৮৭৫জন পরিবারের মধ্যে নিরাপদ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ঋষিপাড়া, বলাডাঙ্গা কারিকরপাড়া, মাধবকাঠি কলোনীপাড়া, আখড়াখোলা মোড়লপাড়া ও ওয়ারিয়া গোলদারপাড়ার ৩০৪টি পরিবারের ১৫২০ জন সদস্য নানা সমস্যায় ভুগছেন। পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি তারা ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হাপানীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব এলাকায় অধিকাংশ মানুষ অগভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করেন। নলকূপগুলোর অধিকাংশই আর্সেনিক ও আয়রনে আক্রান্ত।
৩টি ইউনিয়নের ২৪টি গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ব্যবহার করছেন আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত পানি। এসব পাড়ার অধিকাংশ নলকূপ এখনো পাকা নয়। নলকূপের গোড়া ময়লা আবর্জনায় ভরা। তাছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে এলাকার এসব পরিবারের অধিকাংশ মানুষ দূর থেকে পায়ে হেটে পাশর্^বর্তী গ্রাম থেকে নিরাপদ পানি এনে ব্যবহার করে থাকেন। আবার এসব পরিবারের অনেকে ফিল্টারের নিরাপদ পানি কিনে ব্যবহার করে থাকেন।
এলাকার অধিকাংশ পরিবার অতি দরিদ্র। অন্যের ক্ষেতে খামারে মজুরী খেটে তাদের দিনাতিপাত করতে হয়। গ্রাম থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে ঝুড়ি ডালা বুনে অনেকেরই সংসার চালাতে হয়। গরীব শ্রমজীবী এসব মানুষের পক্ষে নিরাপদ পানি কিনে পান করা অত্যন্ত দু:সাধ্য। তাই অর্থের অভাবে অধিকাংশ পরিবার নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবহার করতে পারে না। পাকা পায়খানা নির্মাণ করার সক্ষমতা তাদের নেই। তবে যাহাতে দলিত জনগোষ্ঠীর পরিবার নিরাপদ পায়খানা ও পানি বিনামুল্য ব্যবহার করতে পারে সরকারের একটি পরিকল্পনার গ্রহণ করার দাবি জানান দলিত সম্প্রদায়ের পরিবার। ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া দাস পাড়ার সুমন দাস, সাধন দাস, মাধবকাঠি কলোনীপাড়ার তহমিনা খাতুন, শাহানারা খাতুন, বলাডাঙ্গার কারিকরপাড়ার আসমা খাতুন, শফিকুল ইসলাম, মুকুন্দপুরের আলতাফ হোসেন ও শাহিদা খাতুন, আখড়াখোলার ফতেমা খাতুন ও নাজমা খাতুন, আগরদাড়ী ইউনিয়নের বাবুলিয়া দাস পাড়ার রিনা দাস, রামপ্রসাদ দাস, আশালতা দাস, দিপালী দাস, মঞ্জুরী দাস, কল্যানী দাস, সম্পা দাস, ইন্দ্রিরা সরকারপাড়া সাধনা বিশ^াস, কাশেমপুর হাজামপাড়ার রফিকুল, চুপড়িয়ার অসীম দাস ও প্রফল্ল দাসসহ অনেকেই এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নিরাপদ সুপেয় পানি সংকটের কথা তুলে ধরেন। বল্লীর ইউনিয়নের রায়পুর ভগবানীপাড়ার অনেকেই তাদের সমস্যার কথা এভাবেই তুলে ধরেন। এছাড়াও এসব এলাকার পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সম্পর্কে তুলে ধরে তারা বলেন স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সমস্যা প্রকট ছিল। কিন্তু‘ দলিত এনজিওর ওয়াস কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে আচরন পরিবর্তনে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তারা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, নিরাপদ পানি ক্রয় করে ও হাইজিনের ব্যবহার করছেন। জানা গেছে দলিত সংস্থার এ্যাডভোকেসীর মাধ্যমে বল্লী ¬ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাইপুর ভগবানিপাড়ায় আরতি রানীর বাড়ি একটি পানির ফিল্টার, আগরদাড়ী ইউনিয়নের বাবুলিয়া দাসপাড়ায় ঋশিল্পী সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানটি একটি পানির ফিল্টার এবং এসকেএস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানটি ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ারিয়ার গোলদার পাড়ায় ৪টি, ছয়ঘরিয়া দাসপাড়ায় ১০টি পায়খানার রিং-স্লাব প্রদান করেছেন। সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, নিরাপদ পানি ও পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ অগ্রগতি অর্জন করেছে। খোলা স্থানে মলত্যাগের হার প্রায় শূন্যের কোঠায় এসেছে। এলাকায় গভীর নলকুপ স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নীতি নির্ধারকদের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ কামনা করেন এলাকার দলিত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষ।

The post সাতক্ষীরায় ২৪ গ্রামের দলিত জনগোষ্ঠী নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2WT9G3o

No comments:

Post a Comment