Thursday, December 31, 2020

প্রসঙ্গ: ইংরেজি বর্ষ https://ift.tt/eA8V8J

প্রকাশ ঘোষ বিধান
স্বাগতম খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২১। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছি এবং ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নতুন সময় সূচিত হচ্ছে। অপূর্ণ বাসনা পূরণের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ সময়ের মুগ্ধতায় বেঁচে থাকে। অপ্রাপ্তি ফেলে নতুন বছর পূর্ণতার স্বপ্নে উদ্বেল করবে। নতুন প্রভাত এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’।
আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডর ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারী ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর। তবে ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনের ধারনাটি আসে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিটে ইংরেজি নববর্ষ বরণ করা হয়। নববর্ষ বলতে নতুন বছরাম্ভকে বোঝায়। পৃথিবীর সব দেশে এবং সব জাতির মাঝে নববর্ষ পালনের রীতি রয়েছে। ইউরোপ আমেরিকাস্থ খ্রিষ্টান দেশ সমূহে পালিত নববর্ষের নাম ‘নিউ ইয়ার্স ডে’। এ দিন খ্রিষ্টান বিশ্বে সরকারি ছুটি পালিত হয়। এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করা হয় নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে। সময়ের চাঁকা ঘুরে ঘুরে আবারও আমাদের সামনে এসেছে ইংরেজি নববর্ষ।
ইংরেজি নববর্ষের বিরাট এক ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাস অত্যন্ত জটিল ও বিশাল। নানা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, বিবর্তন এবং যোগ-বিয়োজনের মধ্যদিয়ে বর্ষ গণনায় বর্তমান অবকাঠামো লাভ করে। ইংরেজি সন বা খ্রিষ্টাব্দ হচ্ছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এটা সৌর সন। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের আগে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচরণ ছিল। এর আগেও রোমানরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী রোমান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত। তখন তারা ৩০৪ দিনে বছর ধরতো এবং ১০ মাসে বছর ভাগ করা হয়েছিল। তখনও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের জন্ম হয়নি।
বর্তমান বিশ্বে যতগুলো অব্দ বিদ্যমান তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হলো খ্রিষ্টাব্দ। ৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে দিওনিসউস এস্ক্রিজিউয়ুস প্রথম খ্রিষ্টাব্দ প্রচলন করেন। তখন ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত খ্রিষ্টাব্দ বছরের যে কোন দিন প্রথম দিন হিসেবে বিবেচিত হতো। তখন বর্তমানের মতো জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ গণনা শুরু হতোনা। যখনি বসন্তের আগমন হতো তখনই নিউইয়ার পালন করা হতো। জানাযায় মিসরীয় সভ্যতাই পৃথিবীর প্রচীনতম সৌর ক্যালেন্ডার চালু করে। রোমান স¤্রাট রমুলাসই ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বেব্দে রোমান ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করার চেষ্টা করেন। প্রচীন মিসরীয় ক্যালেন্ডার পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে জ্যোতির্বিজ্ঞনীরা ধারণা করেন যে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩৬ অব্দে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু হয়। গ্রিক গনিতজ্ঞ ও জ্যাতির্বিদদের কাছ থেকে রোমানরা তাদের প্রথম ক্যালেন্ডার লাভ করে বলে জানা যায়। রোমানদের প্রাচীন ক্যালেন্ডারে মাস সংখ্য ছিল ১০টি এবং তারা ৩০৪ দিনে বছর গণনা করতো। শীত মৌসুমের ৬০ দিন তারা বর্ষ গণণায় আনতোনা। রোমানদের বর্ষ গণণার প্রথম মাস ছিল মার্চ। তখন ১ মার্চ নববর্ষ পালিত হতো। শীত মৌসুমের ৬০ দিন তারা বর্ষ গণণায় না আনার কারণে ২ মাসের ঘাটতি পড়তো তা পূরণে অনির্দিস্ট দিন-মাসের দারস্ত হতে হতো। পরবর্তী কালে রোমান স¤্রাট নোমাপাস পিলিয়াস ১০ মাসের সাথে আরও ২টি মাস জানুয়ারি মাস ও ফেব্রুয়ারি মাস ক্যালেন্ডারে যুক্ত করেন। জানুয়ারি মাস ২৯ দিনে এবং ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে ধার্য করা হয়। আর মারসিডানাস মাস গণণা করা হতো ২২ দিনে। এ ছাড়া মারসিডানাস নামে অতিরিক্ত একটি মাসও প্রবর্তন। তিনি জানুয়ারিকে প্রথম মাস হিসেবে চালু করেন। রোমান স¤্রাট জুলিয়াস সিজারে শাসনামলে মিসরীয় ক্যালেন্ডার চালু করেন। তিনি জ্যোতিবির্দদের পরামর্শে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝ খানে ৬৭ দিন এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে ২৩ দিন এই মোট ৯০ দিন যুক্ত করে ক্যালেন্ডার সংস্কার করেন। এই ক্যালেন্ডার জুলিয়ান সিজার ক্যালেন্ডার নামে পরিচিতি লাভ করে। এই ক্যালেন্ডারে মার্চ, মে, কুইন্টিলিস ও অক্টোবর দিনের সংখ্যা ৩১ দিন, অপারদিকে জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে আরো ২ দিন যুক্ত করে ৩১ দিন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে গণণা করা হতে থাকে।
মিসরীয়রী সৌর বর্ষস গণণা করতো ৩৬৫ দিনে। কিন্তু জুলিয়াস সিজারে সংস্কারের ফলে ৩শত সাড়ে ৬৫ দিনে এসে দাড়ায়। এই ক্যালেন্ডার তৈরী করা হয় ১৫৮২ সালে। যিশু খ্রিষ্টের জন্ম থেকে গণণা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস ৫৩০ অব্দে খ্রিষ্টাব্দের সুচণা করেন। যিশু এর জন্ম বছর থেকে খ্রিষ্টব্দ গণণার সূচনা। পরে জানা যায় যে বছর খ্রিষ্টাব্দ গণণা করা হয় যিশু সম্ভবত তার ৪ বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে রোমের পোপ গ্রেগরি জ্যোতিরর্বিদের পরামর্শে জুলিয়াস ক্রালেন্ডার সংশোধন করেন। জুলিয়াস সিজারের নাম অনুসারে প্রাচীন কালে কুইন্টিলিস মাসের নাম বদলিয়ে রাখা হয় জুলাই। অন্যদিকে স¤্রাট আগাস্টাসের নাম অনুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম পাল্টিয়ে রাখা হয় আগোস্ট আর রোমান দেবতা জানো’স এর নাম অনুসারে জানুয়ারি মাসের নাম রাখা হয়। তার নির্দেশে ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর ১০ দিন বাদ দেওয়া হয়, ফলে ওই বছরের ৫ তারিখকে ১৫ তারিখ করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস প্রতি ৪ বছর অন্তর ১দিন যুক্ত করা হয়। পোপ গ্রেগরি ঘোষণা করেন যে, যেসব শতবর্ষীয় অব্দ ৪০০ দারা বিভক্ত হবে সে সব শতবর্ষ লিপ ইয়ার হিসেবে গণ্য হবে। এই ক্যালেন্ডারই আমাদের দেশে ইংরেজি ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। লেখক: সাংবাদিক

The post প্রসঙ্গ: ইংরেজি বর্ষ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2X0aB1W

No comments:

Post a Comment