Tuesday, December 29, 2020

সম্পাদকীয়: প্রসঙ্গ: স্থাপত্য সংরক্ষণে উদ্যোগ নিন https://ift.tt/eA8V8J

ইতিহাস ঐতিহ্যের উর্বরভূমি সাতক্ষীরা। রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র, রাজা প্রতাপ আদিত্যসহ বিভিন্ন রাজাদের ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে নানা স্থাপনা। মুঘল আমল ও সুলতানী আমলর নির্দর্শনও এখনো বিলীন হয়নি। ইতিহাসের উপাদান হিসেবে এসব নিদর্শন আগামী প্রজন্মের কাছে হয়ে থাকবে বাস্তব উদাহরণ। কালিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে মুঘল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক প্রবাজপুর শাহী মসজিদ। এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট মঙ্গলবার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পেয়েছে।

প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, মুঘল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক প্রবাজপুর শাহী মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের একটি অনুপম নিদর্শন। সুলতানি আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ একটি প্রাচীন এবং প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা যা ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। দেশ ও বিদেশের অনেক পর্যটক এখনও মসজিদটি দেখার জন্য ও নামাজ আদায়ের জন্য সেখানে ভীড় করেন। ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে মসজিদটি ১৯৬৮ সালের পূরাকীর্তি আইন অনুযায়ী স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে প্রতœতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু প্রায় ৫শ’ বছর পূর্বে নির্মিত এই মসজিদটি প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে ঐতিহাসিক শাহী মসজিদটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুসুল্লী, মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সচেতন মহল।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্ধৃতি দিয়ে থবরে বলা হয়, সুদীর্ঘ ৫শ’ বছর পূর্বে মুঘল আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী মসজিদে স্থানীয় মুসুল্লীবৃন্দ ছাড়াও বহু দুরদুরান্ত থেকে আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীবৃন্দ এখানে নিয়মিত ওয়াক্তিয় নামাজ এবং জুমআ’র নামাজ আদায় করেন। প্রাচীন এই মসজিদের অবকাঠামো দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত দু’বছরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও আম্পান এর প্রভাবে মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদের মূল গম্বুজসহ ছাদে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ পাশের দেয়ালের ইট খসে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে ফাঁটল দিয়ে মসজিদের ভিতর পানি প্রবেশ করেছে। এর ফলে মুসুল্লীদের নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। ইটসুড়কির সমন্বয়ে নির্মিত মসজিদের ভিতরের অংশে কারুকার্যখচিত দেয়াল ও গম্বুজে জমেছে শ্যাওলা। সর্বদা বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকায় আছেন মুসুল্লীবৃন্দ। গত ২০-০১-২০১৮ তারিখে মসজিদের অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টি লিখিত ভাবে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছরেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। ঐতিহাসিক নিদর্শন এই মসজিদটি আশু সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৬-১২-২০২০ খ্রি. তারিখে আবারও প্রতœতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি অবগত করে প্রতœতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগ এর খুলনা আঞ্চলিক পরিচালক, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তারা। মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় মুসুল্লীবৃন্দ আক্ষেপ করে বলেন, প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি নিজেদের দায়িত্ব নেয়ার ফলে মসজিদের ভগ্নদশার চিত্র দেখতে পেলেও সরকারি বিধি বিধানের কারণে আমরা কোন সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করতে পারি না। নির্মাণকালে মসজিদের নামে নুরুল্লা খাঁ ১৬ একর ৮১ শতক জমি দিয়েছিলেন। মসজিদ নির্মাণের পর থেকে ২৯২ বছর যাবত সম্পূর্ণ জমি মসজিদ কর্তৃপক্ষের দখলে ছিল। তারপর মসজিদের খেদমতকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা মসজিদের নামিয় জমি নিজেরা তঞ্চকতার মাধ্যমে ভূয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে দখলে নেয়। বর্তমান জরিপে ৮ একর ৩৯ শতক জমি মসজিদের নামে রেকর্ডভূক্ত হলেও মাত্র ৭২ শতক জায়গায় খননকৃত একটি পুকুর, ৫ শতক জমির উপর নির্মিত মসজিদ, ওজুখানা ও পাশর্^বর্তী ঈদগাহ মিলে সর্বসাকুল্যে ১ একর ৮ শতক জমি ছাড়া বাকি জমি বেদখলে আছে। জমি উদ্ধারের জন্য মহামান্য হাইকোর্টে আপিল মামলা দায়ের করা হয়েছে যা বর্তমানে বিচারাধীন আছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১১০৪ হিজরী সনের ১৯ রমজান মোতাবেক ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২মে তৎকালীন ধুলিহর পরগনায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ। মসজিদটি জ¦ীনদের দ্বারা নির্মিত হয়েছে বলে কথিত থাকলেও এটি মূলত: স¤্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে নির্মিত হয়। স¤্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ তাঁর সেনাবাহিনীর নামাজের জন্য যমুনা নদীর তীরে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
প্রধান সেনাপতি পারভেজ খাঁ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বিধায় সুবেদার পারভেজ খাঁর নামানুসারে ওই গ্রামের নাম হয়েছে প্রবাজপুর এবং মসজিদটির নামকরণ করা হয় প্রবাজপুর শাহী মসজিদ। মুঘল সুলতানী আমল শেষে দীর্ঘদিন যথাযথ পরিচর্যা না থাকায় মসজিদটি অনেকটা পরিত্যক্ত স্থাপনায় পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে স্থানীয় মুকুন্দপুর গ্রামের সোহরাব আলী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে মসিজদটি নামাজের জন্য উপযোগী করেন।

দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির বহির্বিভাগের দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৩৯ ফুট ৮ ইঞ্চি। মসজিদটির অভ্যন্তরে ২১ ফুট ৬ ইঞ্চির বর্গাকৃতির একটি নামাজের জায়গা রয়েছে।

মসজিদের দেয়ালগুলো ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি থেকে ৭ ফুট পুরু। আর মসজিদের প্রধান দরজাটি ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি প্রশস্ত। মসজিদটিতে ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি বারান্দা ছিল যা এখন আর নেই।
মসজিদটিতে মোট ১০টি দরজা থাকলেও বর্তমানে দরজার নিচের অংশে পাতলা প্রাচীর নির্মাণ করে জানালার আকৃতি করা হয়েছে। তিনটি অলংকৃত মেহরাবও রয়েছে মসজিদটিতে। চার গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী হিসেবে এখনও সবার নজর কাড়ে।
আমরা মনে করি, ঐতিহাসিক এসব নির্দশন সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী। শুধু প্রবাজপুর শাহী মসজিদ নয়, জেলার প্রাচীন স্থাপত্য, মসজিদ, মন্দির, ভবন, হাম্মামখানা, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান, গণকবর সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন-এ প্রত্যাশা আমাদের।

The post সম্পাদকীয়: প্রসঙ্গ: স্থাপত্য সংরক্ষণে উদ্যোগ নিন appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3o07jaC

No comments:

Post a Comment