Thursday, October 29, 2020

আমাদের নামায পড়া https://ift.tt/eA8V8J

শামসুল আজিজি এমএসসি, পিএইচডি
আমাদের বেশির ভাগ মানুষেরই নামায পড়তে দাঁড়ালে এমন কোনো দুনিয়ার চিন্তা নেই, যেটা মাথায় আসে না। নামাযে দাঁড়ালে স্কুলের চিন্তা, ছেলে মেয়ের চিন্তা, অফিসের বড় সাহেবের চিন্তা, ব্যবসার চিন্তা, বাজার লিস্টেও চিন্তা আরও কত যে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে তার কো শেষ নেই। এখন কেন নামায পড়তে গেলে আমাদের মাথায় সারা দুনিয়ার হাজারো চিন্তা চলে আসে? এর একটা মূল কারণ হল শয়তান। শয়তান কোনভাবেই চাইবে না যে, আপনি নামায পড়েন। কারণ আপনি নামায পড়লেই সে হেরে গেল। এজন্য যখনি আপনি নামায পড়তে দাঁড়াবেন, সে সমস্ত শক্তি নিয়ে আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। একারণেই আমরা নামায শুরু করি শয়তানের কাছ থেকে বাঁচার জন্য আল্ল¬াহ সুবহানাহুঅয়া তালার কাছে আকুল আবেদন করে, আউ’যুবিল¬াহি মিনাশশাইতয়ানিররাজিম, আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই বিতাড়িত শয়তানের কাছ থেকে।

মোট কথা নামাজে মনোযোগ নষ্ট করাই হলো শয়তানের একটা বড় কাজ। উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে আরজ করি, হে আল্ল¬াহর রাসুল! শয়তান আমার ও আমার নামাজ-কিরাতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং তাতে জটিলতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল¬াহ (সা.) তখন বললেন, ‘তুমি যখন তার উপস্থিতি অনুভব করবে তখন তার কুমন্ত্রণা থেকে আল¬াহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তোমার বাঁদিকে তিন বার থুতু ফেলবে।’ সহীহ মুসলিম।

নামাযে মনোযোগ দিতে না পারার আরেকটি বড় কারণ হল, আমরা সারাদিন দুনিয়ার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। হাজারো কাজের মাঝে একটু সময় নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে ঠা-া মাথায় নিজেকে চিন্তা করার সুযোগ দেই না। তাই স্বাভাবিকভাবেই নামাযে দাঁড়ালে আপনার মাথায় সারাদিনের জমে থাকা চিন্তাগুলো চলে আসে। সারাদিনের নানারকম ঘটনা, মানুষের নানান কথা, হাজারো দুশ্চিন্তা আপনার মনের ভিতওে এসে জমাট বাঁধে যখনই আপনি নামাযে দাঁড়ান। আসল কথা হল আমরা বীনা প্রস্তুতিতেই নামায শুরু কওে দেই।

এ ব্যাপারে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। পরীক্ষা দেবার আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রস্তুতি নিই। পরীক্ষার হলে এক ঘণ্টা আগে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। মন শান্ত করি, যাতে পরীক্ষার সময় অন্য কোন চিন্তা মাথায় না আসে এবং সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিতে পারি। কিংবা মনে করুন, আপনি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেলেন যে, তিনি আপনার সাথে দেখা করবেন। ফেইসবুকের মাধ্যমে দেশের প্রতি অসামান্য অবদান রাখার জন্য আপনাকে নিজের হাতে ‘বুদ্ধিজীবী’ পদক দিবেন। আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো প্রেসিডেন্টের দফতরে গিয়ে তাঁর কাছ থেকে পদক নিয়ে আসতে। শুরু হল দিনের পর দিন প্রস্তুতি। আপনি মাস খানেক আগে থেকে চিন্তা করা শুরু করলেন, কোন পোশাকটা পরবেন, গিয়ে কি সালাম দিবেন, নাকি হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করবেন, আরও কত কি। কিন্তু আল্ল¬াহর সামনে দাঁড়াবার আগে কোনো প্রস্তুতি নিই না। কাজ করতে করতে হঠাৎ করে উঠে ওজু করে, কাজের চিন্তা করতে করতেই নামাযে দাঁড়িয়ে যাই, কোনো রকমে সুরা কেরাত পড়ে দ্রুত রুকু সেজদা কওে নামায শেষ করি। তাই নামাযে মনোযোগ না থাকার কারণে কখন যে নামায শেষ হয়ে গেল, সেটা আর মনে থাকেনা। আধা ঘণ্টা পর মনে হয়, যোহরের নামাযটা পড়েছিলামতো?

বস্তুত ওজু করা থেকেই নামাযের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। তাই সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে ভালোভাবে ওজু করুন। তাহলে দেখবেন আপনার মনের চাপ অনেকটা হালকা হয়েছে। নামাযে দাঁড়াবার আগে মনে মনে ভাবুন এখন আপনি সমগ্র বিশ্ব জগতের পরিচালক আপনার প্রভুর সামনে নামাযের মাধ্যমে কথা বলতে যাচ্ছেন। তারপর মনের গহীনে একান্তভাবে চিন্তা করুন, আমি কি আরও একবার নামায পড়ার সুযোগ পাব? তাহলে দেখবেন, আপনার মনটা অনেক শান্তহয়েছে এবং আশা করা যায় আপনি নামাযে অনেক মনোযোগী হতে পারবেন।

আমরা অনেকে মনে করি আরবিতে নামায পড়লেই হলো। নামাযে কী বলছি সেটা না বুঝলেও চলবে, আল্ল¬াহ তো বুঝবেই। কী বলছি, সেটার মানে কী, কেন বলতে হবে, বলে কী লাভ। আমাদের এত সব বোঝার দরকার নেই। তাছাড়া আশে পাশের সবাইতো দিব্যি আরবিতে কিছুই না বুঝে নামায পড়ে যাচ্ছে। তারা পারলে আমি কেন পারবো না? এ প্রসঙ্গে কোরআনের দুটি আয়াত উল্লেখ করা যেতে পারে। “আর তোমরা যা বোঝো না, তা অনুসরণ করবে না। নিশ্চয়ই শ্রবণ, দৃষ্টি এবং বুদ্ধিমত্তা, এই সবগুলোর ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।” সুরা আল-ইসরা আয়াত ৩৬। “আল¬াহ তাদের কে কলুষিত করে দেন যারা তাদের বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করেনা।” সুরা ইউনুস আয়াত ১০০। এই আয়াত দুটি নিয়ে চিন্তা করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, কিছুই না বুঝে নামায পড়ে, অথবা কিছুই না বুঝে আরবিতে দোয়া পড়ে আসলে কতখানি লাভ হয়। আপনি নিজেই উপলব্ধি করবেন কেন আমাদের দোয়াগুলো সহজে কবুল হয় না? কেন নামায পড়ে আমাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনা?

সঠিকভাবে নামায পড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কারণ একজন মুসলমান এবং কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায। তাই এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটিতে কোনো ধরণের হেলাফেলা করা আমাদের উচিৎ নয়। তাই নামাযে মনোযোগ আনার জন্য নামাযে দাঁড়িয়ে যে কথাগুলো বলি, যে সুরাগুলো তেলাওয়াত করি আর যে দোয়া-দরুদ পড়ি সেগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করি। আসুন আমরা নামাযে ওঠা, বসা, রুকু ও সেজদা ধীর স্থিরভাবে সম্পন্ন করি এবং ভালো করে বোঝার চেষ্টা করি নামাযে আমরা কী বলি। কেন আল্ল¬াহ আমাদেরকে দিনে পাঁচবার পড়া লেখা, কাজকর্ম, সংসার সবকিছুর মধ্যে মনোযোগের সাথে আল্ল¬াহকে নিয়ে ভাবতে বলেছেন, কেন তাঁর বাণীগুলো স্মরণ করতে বলেছেন, তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন, সেটা উপলব্ধি করি।
বিশুদ্ধ নামায মানুষকে অশ¬ীল কাজ এবং অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখবে, এই গ্যারান্টি আল্ল¬াহ আমাদেরকে দিয়েছেন। “পড়, যা তোমাকে এই কিতাবে প্রকাশ করা হয়েছে, নামায প্রতিষ্ঠা কর, নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অশ্লীল এবং অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখে”। সুরা আন কাবুত আয়াত ৪৫।

এখন নামায পড়ে আপনি যদি অশ্ল¬ীলতা থেকে দূরে থাকতে না পারেন, অন্যায় কাজ করা, মিথ্যা বলা, গীবত করা, হিংসা করা ও মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করা বন্ধ করতে না পারেন, তাহলে আপনি যা করছেন সেটা সত্যিই নামায, নাকি কার্ডিও-ভাস্কুলার এক্সারসাইজ, সেটা ঠা-া মাথায় ভেবে দেখুন। মনে রাখবেন নামায কোনো অনুষ্ঠান না যে, আপনি প্রতিদিন কয়েকবার কিছু গদবাঁধা কথা বলবেন, উঠ-বস করবেন, ডানে-বায়ে তাকাবেন, আর আপনার জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসবে।

নামায হচ্ছে আপনার প্রভুর সাথে কথা বলার একটি বিশেষ উপলক্ষ। নামাযের প্রত্যেক সিজদায় এবং শেষ বসায় আল্লাহর সাথে নিজের ভাষায় কথা বলুন। আপনার জীবনে যত আনন্দ, যত সুখ, যত কিছু আপনি পেয়েছেন, তার জন্য তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিন এবং আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তারপর আপনার যতদু:খ-কষ্ট, মনের মধ্যে চেপে রাখা যত অভিযোগ, যতক্ষোভ, সব আল¬াহকে বলে দিন। তিনি অবশ্যই তা শুনবেন এবং তাঁর মতো করে আপনাকে সমাধান দিবেন। মানুষের কাছে ঘ্যান ঘ্যান না করে, ফেইসবুকে দীর্ঘশ্বাস না ছেড়ে, শুধুই তাঁর কাছে সব সুখ-দু:খ, চাওয়া-পাওয়া শেয়ার করুন। একমাত্র তিনিই পারেন আপনার ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে।

The post আমাদের নামায পড়া appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/35MhgRm

No comments:

Post a Comment