Tuesday, October 27, 2020

সাতক্ষীরা আদালতে বিচারক ও কর্মচারি সঙ্কট ছাড়াও করোনার কারণে মামলার জট https://ift.tt/eA8V8J

পত্রদূত রিপোর্ট: বিচারক সঙ্কট, কর্মচারি সঙ্কট ও চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সাত মাস আদালতের স্বাভাাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাতক্ষীরার জজ আদালত ও বিচারিক আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে দীর্ঘ সূত্রিতায় বিচারপ্রার্থীরা প্রতিদিনই হয়রানির শিকার হচ্ছে।

শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের এক নারী বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে অন্ত:স্বত্বা থাকা অবস্থায় একই গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিক তার দু’বন্ধু সুকুমার ও গোলাম মোস্তফার সহায়তায় খুলনায় ডেকে নিয়ে আটক রেখে গর্ভপাত করতে রাজী না হওয়ায় তাকে পাঁচদিন ধরে ধর্ষণ করে। পরে তাকে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটিয়ে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

 

এ ঘটনায় ২০১৮ সালে তিনি সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে (নারী শিশু-৪৯/১৮) চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক না থাকায় রায় পাননি। এমনকি রায় দেরীতে হওয়ার কারণে আসামীরা তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছে। ছোট ভাইয়ের নামে একটি অপহরণ, একটি ধর্ষণসহ তিনটি মামলা দেওয়া হয়েছে। যদিও মামলা তিনটিতে তার ভাইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

শহরের রসুলপুর মেহেদীবাগের রিপা বেগম বলেন, স্বামী নূর ইসলাম যৌতুকের দাবিতে তাকে নির্যাতন করতো। একপর্যায়ে তাকে তালাক দিলে তিনি সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে তিনি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যৌতুকের দাবিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্রুনালে ৬৫/২০ নং মামলা করেন। ১০ মাস বিচারক না থাকায় তিনি আদালতে আসেন, আইনজীবী ও তার সহকারিকে টাকা দেন। বিনিময়ে দিন নিয়ে চলে যান।

সদর উপজেলার গাংনিয়া গ্রামের লিয়াকত আলীর স্ত্রী রিজিয়া খাতুন বলেন, ছেলের শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে বৌমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে তাকেসহ ছেলে ও পরিবারের চার সদস্যের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা (৩৩২/১৭) করা হয়েছে। চলতি বছরে একদিনও আদালতের কাঠগোড়ায় উঠতে হয়নি। তিনি জানেন না কবে বিচারক যোগদান করবেন। তবে সোমবার আদালতে এসে শুনেছেন যে বিচারক সম্প্রতি দায়িত্বভার জেলা ও দায়রা জজ সাহেবকে বুঝিয়ে দিয়ে সচিবালয়ে বদলী হয়ে গেছেন। যতদিন পর্যন্ত নতুন বিচারক যোগদান করবেন, তততিন শুধু কোর্টে এসে উকিল মুহুরীর ফি গুনতে হবে। নিতে হবে দিন। তাতে দিন লম্বা করতে হলে পেশকারকে দিতে হচ্ছে টাকা।

সাতক্ষীরা ল্যা- সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রার্থী কালিগঞ্জের জয়পত্রকাটি গ্রামের নুরুল হক। তিনি জানান, গত ২১ মার্চ বিচারক তপন রায় পদোন্নতি পেয়ে বদলী হয়ে যাওয়ার পর নতুন বিচারক আসেননি। বাধ্য হয়ে আইনজীবী ও সহকারিকে নগদ নারায়ন দিয়েই দিন নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।

মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ বলেন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ২য় আদালতের বিচারক সালমা আক্তার এক বছর তিন মাস আগে লিগ্যাল এইড এ বদলী হওয়ায় তার পদটি শূন্য হয়ে যায়। এখনো ওই পদে কেউ যোগদান না করায় দৈনিক সত্যপাঠ পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও স্থানীয় প্রতিনিধি আবু সাঈদের নামে দায়েরকৃত মামলাটির সাফাই সাক্ষীর দিনটি এত সময় ধরে ঘুরে ফিরে পরিবর্তন হচ্ছে। একই অবস্থা সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের। অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীর মুখ্য বিচারিক হাকিম হিসেবে দায়িত্বভার প্রহণের পর গত জানুয়ারি মাস থেকে ওই আদালতের বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
তবে সাতক্ষীরা আদালতের বিচারপ্রার্থী কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুরের সমীর ম-ল, মুকুন্দপুরের আবু তালেব সরদার, তালার কাশীপুরের হিরন্ময় ম-লসহ কয়েকজন জানান, শুধুমাত্র বিচারক বা কর্মচারি সংকটের জন্য মামলার জট তৈরি হচ্ছে না। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত অনেক কর্মকর্তা কর্মচারি ও রাষ্ট্রপক্ষের কতিপয় আইনজীবী ঘুষ দুর্নীতির কারণেও বিচার ব্যবস্থা বিলম্বিত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্ট ও জুডিশিয়াল কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত, যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত, যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত, ল্যা- সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, সদর সহকারি জজ, সহকারি অতিরিক্ত জজ, তালা সহকারি জজ, কলারোয়া সহকারি জজ, দেবহাটা সহকারি জজ, কালিগঞ্জ সহকারি জজ, শ্যামনগর সহকারি জজ ও আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে ৩১ হাজার ৮৬০টি বিচারাধীন মামলা রয়েছে। এছাড়া জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম ও দ্বিতীয় আদালত, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম ও দ্বিতীয় আদালতে দায়রা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ মামলা, ফৌজদারি আপিল, ফৌজদারি রিভিশন, ফৌজদারি মিস, এসিড অপরাধ, জননিরাপত্তা, সন্ত্রাসসহ বিচারাধীন ১২ হাজার ১৭০টি মামলা রয়েছে। এ নিয়ে জজ কোর্টে মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৪ হাজার ৩০টি। তবে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইউনুছ আলী কর্মকর্তা ও কর্মচারির পদ শূন্য রয়েছে বলে স্বীকার করলেও সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেননি।
এদিকে সাতক্ষীরার মুখ্যবিচারিক হাকিম আদালত, অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালত, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আদালত ছাড়াও আমলী আদালত, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ আদালতে বিচারাধীন ১৩ হাজার ৫৯১টি মামলা রয়েছে। অর্থাৎ সাতক্ষীরা আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা মোট ৫৭ হাজার ৬২১টি।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, বর্তমানে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ল্যা- সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম ও জ্যেষ্ঠ বিচারিক হকিম ২য় আদালতের বিচারক পদগুলো শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই সব পদে বিচারক না থাকায় ও সাত মাস ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিচার কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকায় প্রতিটি আদালতে মামলার জট তৈরি হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কর্মচারি ও কর্মকর্তা সঙ্কট। সব মিলিয়ে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি হতে হচ্ছে। অনতিবিলম্বে বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়োগ না দেওয়া হলে শীতের মৌসুমে করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলার জট আরও বেড়ে যাবে। ফলে মামলার ফাইল ভারি হয়ে যাবে। তবে তিনি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ রাষ্ট্রপক্ষের কতিপয় আইনজীবীর অনিয়ম দুর্নীতি সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। সমস্যা সমাধানে তিনি আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

The post সাতক্ষীরা আদালতে বিচারক ও কর্মচারি সঙ্কট ছাড়াও করোনার কারণে মামলার জট appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3ozDwGL

No comments:

Post a Comment