Friday, January 29, 2021

সাতক্ষীরায় ফাগুন বরণের বার্তা নিয়ে গাছে গাছে আমের মুকুল https://ift.tt/eA8V8J

এসএম শহীদুল ইসলাম: আম নিয়ে গ্রাম বাংলায় রয়েছে নানা প্রবাদ। ‘পৌষে কুশী মাঘে বোল, ফালগুনে গুটি, চৈত্রে আঁটি, বৈশাখে কাটি-কুটি, জৈষ্ঠে চাটি-চুটি, আষাঢ়ে ফেলাই আঁটি, শ্রাবণে বাজাই বাঁশি।’ এর অর্থ হলো-পৌষ মাসে আম গাছে কুশী হয়, মাঘ মাসে বোল ধরে, ফাল্গুনে আমেতে গুটিতে পরিণত হয়। চৈত্রে মাসে আঁটি হয়। বৈশাখে কাঁচা আম আমরা কেটে-কুটে খাই। জ্যৈষ্ঠ মাসে আমরা পাকা আম চেটে চুটে খাই। আষাঢ় মাসে আমরা আমের আঁটি ফেলে দেই। শ্রাবণ মাসে আঁটিতে যখন গাছ গজায় তখন কিশোর-কিশোরীরা বাঁশি বাজায়।’ এই কথাগুলো গ্রাম বাংলায় প্রচলিত। শুধু আম নয়, আমের আঁটি নিয়েও আছে প্রবাদ। যেমন-‘আম দুধ এক সাথে হবে আঁটি আঁদাড়ে যাবে।’ অর্থাৎ ‘পক্ষ-বিপক্ষ এক হবে, মিমাংসাকারী বাদ যাবে’ অর্থে এ প্রবাদ প্রচলিত।

আ¤্রমুকুল নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ফাল্গুন কবিতায় এ পঙক্তি যেন চিরন্তন-‘ফাল্গুনে বিকশিত, কাঞ্চন ফুল/ডালে ডালে পুঞ্জিত, আ¤্রমুকুল/চঞ্চল মৌমাছি, গুঞ্জরি গায়/বেণুবনে মর্মরে, দক্ষিণবায়।’

বাংলার ষড়ঋতুর রঙ্গমঞ্চে এখনো বসন্ত আসেনি। চলছে ফাগুণ বরণের আয়োজন। মাঘের মাঝামাঝিতেই ফলের রাজা আমের মুকুল জানিয়ে দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পরাগের পাগল করা ঘ্রাণ।

গাছে গাছে মুকুলের সমারোহে আমবাগান হাতবদল হতে শুরু করেছে। আমের মুকুল বেশি হওয়ায় এবার বেশি দামে বাগান বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সাতক্ষীরার বাগানগুলো (শুধু ফলের জন্য) কিনতে শুরু করেছেন। সাতক্ষীরার আম চাহিদা বিদেশে রপ্তানী হওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার ব্যবসায়ীরা বেশি আসছেন।
স্থানীয় আমচাষিরা জানান, মুকুলের ওপর ভিত্তি করেই বাগান কেনাবেচা হয়ে থাকে। এজন্য আমগাছ পরিচর্যার সঙ্গে সঙ্গে মুকুল রক্ষায় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এবার আমের মুকুল বেশি হওয়ায় বাগানের দামও বেশি। মৌসুমের শুরুতেই দেখা গেছে, গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে যাচ্ছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তাসহ জেলার আমচাষিরা।

প্রসঙ্গত: সাতক্ষীরার ১০০ হেক্টর জমির ওপর অবস্থিত ৩৭৭টি বাগানের প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার গাছের আম ব্রিটেনে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আ¤্রপালি। কিন্তু সুপার সাইক্লোন আম্পান আর মহামারি করোনা কৃষকদের স্বপ্ন ধূলিষ্যাত করেছিল। এবার বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সাতক্ষীরায় এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।
সাতক্ষীরায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, আ¤্রপালি, মল্লিকা, সিঁদুররাঙা, ফজলি, কাঁচামিঠা, বোম্বাই, লতাবোম্বাই বেশি চাষ হয়।
ফলন ও কদর ভালো হওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন আমবাগান। ফলে দিনে দিনে এ অঞ্চলে আমচাষ বেড়েই চলেছে। শ্রমিক দিয়ে সারা বছর পরিচর্যা করা হয় আমবাগান। এতে বহু লোকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। বিনিয়োগ করা হচ্ছে বিপুল অংকের টাকা।

The post সাতক্ষীরায় ফাগুন বরণের বার্তা নিয়ে গাছে গাছে আমের মুকুল appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3t7yJyi

No comments:

Post a Comment