শ্যামনগর প্রতিনিধি: স্লিপ ফান্ডের টাকা আত্মসাতসহ অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় নানামুখী কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন ১৪৮নং হাবিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই।
গোপনে অপরাপর বিদ্যালয় এবং শিক্ষকদের থেকে বিভিন্ন প্রকারের উপকরণ সংগ্রহের পাশাপাশি তড়িঘড়ি পরিচালনা পর্ষদের সভা ডেকে যাবতীয় অপকর্ম জায়েয করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন তিনি। এমনকি রেজুলেশন খাতার সাদা পাতায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে সেখানে সিদ্ধান্তবলী লেখার চেষ্টা করেছেন বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, আলোচিত শিক্ষক আব্দুল হাই শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর ইউনিয়নের হাবিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ যাবতীয় সরকারি বরাদ্দ নয়ছয় এর মাধ্যমে বিদ্যালয়কে পুঁজি করে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। বিস্কুট আর বই বাণিজ্যের পাশাপাশি নামকাওয়াস্তে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনসহ চেক বইয়ের পাতা না থাকার অজুহাতে বিদ্যালয়ের অনুকূলে বরাদ্দের সমুদয় টাকা ব্যাংক হতে উত্তোলনপূর্বক এলাকায় মহাজনী ব্যবসা পরিচালনারও অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের জন্য দুই লাখ টাকা স্লিপ ফান্ডে বরাদ্দ দেয়া হয়। দুর্নীতির দায়ে সদ্য স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে আব্দুল হাই ভ্যাট এর টাকা পরিশোধপূর্বক ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এককালীন উত্তোলন করেন।
অভিযোগ উঠেছে উত্তোলনকৃত টাকা হতে শিক্ষা অফিসকে ২৯ হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার অজুহাতে তাৎক্ষনিকভাবে তিনি ঐ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া নিজ নিকটাত্বীয় এক রং মিস্ত্রিকে ডেকে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের দুই প্রভাবশালী সদস্যের সাথে আপোষরফার ভিত্তিতে তড়িঘড়ি করে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনে রং এর কাজ সম্পন্ন করেন। এসময় পরিচালনা পর্ষদ এর অপরাপর সদস্যসহ শিক্ষা অফিসের কর্তা ব্যক্তিদের পর্যন্ত অন্ধকারে রাখেন তিনি। এমনকি কাজের গুণগত মান পরীক্ষার বিষয়ে তিনি এলজিইডি অফিস সংশ্লিষ্টদের সাথে ন্যুনতম যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টাও তিনি করেননি।
অভিযোগ রয়েছে আব্দুল হাই আত্মসাতের লক্ষ্যে স্লিপ ফান্ডের টাকা উত্তোলন করেই কাজ শুরু করলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস বা এলজিইডি অফিস থেকে কাজের ধরণ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কিত কোন নিদেশনা সংগ্রহ করেননি। বরং ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ সংগ্রহ না করেই তড়িঘড়ি কাজ সম্পন্নের চেষ্টা করেন দুর্নীতিবাজ ঐ প্রধান শিক্ষক। লোক জানাজানি না করতেই কাজের ধরণ এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি এলজিইিড অফিস থেকে ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ গ্রহণ করেননি বলেও স্থানীয়দের দাবি।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, স্লিপ ফান্ডের পৌণে দুই লাখ টাকা দিয়ে নামকাওয়াস্তে ভবন রং এর কাজ বরানো নিয়ে সম্প্রতি দৈনিক পত্রদূতসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দুর্নীতিবাজ আব্দুল হাই এর ঘুম ভাঙে। এসময় তিনি নিজ আস্থাভাজন দুই ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করে তড়িঘড়ি করে গত ১৩ অক্টোবর সকাল নয়টায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভা আহবান করেন। অভিযোগ উঠেছে সভা আহবান করলেও সেখানে সুনির্দিষ্ট কোন এজেন্ডা উল্লেখ না করে কেবলমাত্র ‘জরুরী সভা’ আহবান করার কথা বলা হয় চিঠিতে।
সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান রেজুলেশন খাতায় কোন সিদ্ধান্তের কথা না লিইে উক্ত আব্দুল হাই সদস্যদের স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেন। এছাড়া কোন সভায় আহবান না করে একক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবন এর কাজ করা নিয়েও অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই তার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন বলেও এক সদস্য জানান।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে যেকোন সময়ে তদন্ত হওয়ার আশংকায় আব্দুল হাই ঐ সভা আহবানের পুর্বে নুরনগর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে একটি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নিয়ে আসেন। যদিও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বরাদ্দ থেকে উক্ত মেশিন ক্রয়ের জন্য তিনি স্লিপ ফান্ডে প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ সাপেক্ষে উত্তোলন করেছিলেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের নানা ধরনের উপকরণাদী ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলেও তিনি বিগত বছরের একই জিনিসপত্র বার বার দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন যাবত আব্দুল হাই পরিচালনা পর্ষদের কোন সভা না করলেও হঠাৎ তার দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ হলে তিনি তড়িঘড়ি সভা ডাকেন। এছাড়া পুরাতন তালা, চক ডাষ্টারসহ নানান প্রকাশের উপকরনাদী তিনি বিভন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করে নিজ প্রতিষ্ঠানে জড়ো করছেন। এমনকি তার অপকর্ম থেকে বাঁচার কৌশল বাতলে দিতে তিনি ‘আ’ আদ্যক্ষরের এক প্রধান শিক্ষকের কাছে পরামর্শ নেয়ার জন্য পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন।
এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন, চেক এর পাতা না থাকায় কয়েকটি ফান্ডের টাকা উত্তোলন করা হলেও আমার কাছে গচ্ছিত রয়েছে। বিদ্যালয়ের টাকা আপনি নিজ দায়িত্বে রাখতে পারন কিনা-প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভেবেছিলাম জিনিসপত্র কিনতে লাগবে তাই রেখেছিলাম। ভুলত্রুটি মানুষ করে- উল্লেখ করে তিনি তার বিষয় গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখারও অনুরোধ করেন। এক বছর পর হাজিরা মেশিন সগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন হাজিরা মেশিন এক বছর আগেই কেনা হয়েছিল। কিন্তু অন্যের বাড়িতে থাকার কারণে সম্প্রতি বিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছেন। মেশিন বাড়িতে রাখার জন্য কেনা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
এদিকে স্থানীয়রা আব্দুল হাইয়ের কর্মস্থল হাবিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গত তিন চার বছরের স্লিপ ফান্ডের টাকায় ক্রয়কৃত জিনিসপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদী নিয়ে উন্থাপিত অভিযোগ তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা জেলা ও শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
The post দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি সভা করলেন প্রধান শিক্ষক appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2HBEnWD
No comments:
Post a Comment