আব্দুস সবুর আল আমীন, কপিলমুনি (খুলনা): নাম তার সিদ্দিক মোড়ল, বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে তার জন্ম।
তিনি দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করায় লেখা পড়া করতে পারেননি। ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল গাছ লাগানো। তার আয়ের একমাত্র মাধ্যম বাজারে বাজারে শাক বিক্রি করা। শাক বিক্রি করে চলে স্বামী, স্ত্রী ও ২ সন্তানের সংসার। সংসার চালিয়ে কিছু টাকা থাকলে তা দিয়ে বীজ ক্রয় করেন। মাত্র ১০ শতক জমিতে বসত বাড়ী তার। ছোট্ট একটি আঙ্গিনার কোণে বকুলের বীজ ছড়িয়ে চারা তৈরী করে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থান, স্টেডিয়াম, অফিস আদালত পাড়ায় লাগান শ’ শ’ বকুল গাছ। এখনও থেমে নেই তার গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া। এটা যেন তার নেশা পরিণত হয়েছে। গত ৩০ বছর ধরে কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও গাড়ীতে চড়ে বাঁশের দু’মাথায় চারা ঝুলিয়ে তা বিভিন্ন অঞ্চলে লাগিয়ে বেড়ান সিদ্দিক।
সিদ্দিক সোজা ভাষায় কথা বলতে না পারলেও সব সময় বাঁধা-বাঁধা ভাষায় কথা বলেন। অনেক দরিদ্র তিনি, দরিদ্রতার নির্মমতা কি তা সারাটা জীবন তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। তার পরেও তার স্বপ্ন দেখা থেমে নেই। এবার তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে তালের চারা লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। চলতি বছর তিনি তাল গাছের মাথা তথা তাল কিনে গাছে পাকিয়ে তা থেকে যে বীজ পাবেন তা দিয়ে চারা বানিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক ও ওয়াপদার রাস্তায় লাগাবেন। যা পথচারী বা সাধারণ মানুষ খাবে ও বজ্রপাত থেকে মানুষ প্রাণে বাঁচবে বলে আশা করেন। কয়েক বছর আগে বিটিভি’র জনপ্রিয় ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে তার একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করা হয় এবং ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়।
গাছ পাগল সিদ্দিক এ প্রতিবেদক কে বলেন, ‘স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা বকুল ফুল দিয়ে মালা বানাবে, বকুল খাবে, বকুল তলায় বসে অবসর কাটাবে এতেই আমার আনন্দ। দক্ষিণাঞ্চলে আমার দেওয়া গাছ সব প্রতিষ্ঠানে আছে, আমার গাছগুলো আজ মাথা উঁচু করে প্রায় যেন আকাশ ছুঁইছে, কিন্তু দরিদ্রতা আমাকে ছোট্ট গোন্ডির মধ্যে বেঁধে ফেলেছে। পরিবেশের জন্য লক্ষ লক্ষ বকুল গাছ অনেক উপকার করলেও আমার খোঁজ কেউ নেয় না, সরকারও আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায় নি।’
The post কপিলমুনির সিদ্দিক স্বপ্ন বুনছেন তালগাছ নিয়ে appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3b8HP7w
No comments:
Post a Comment