Monday, January 4, 2021

একজন সততার প্রতিক ইউএনও ইকবাল হোসেন https://ift.tt/eA8V8J

এসএম হাসান আলী বাচ্চু
‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’ কিংবদন্তি শিল্পী ভূপেন হাজারিকার গানের এই কথাগুলো যে কত সত্যি তার প্রমাণ দিয়েছেন একজন উপজেলা নির্বাহী। করেছেন অতি সাধারণ জীবন-যাপন। চলেছেন অতি সাদাসিধেভাবে। অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে সততার সাথে নিজের দায়িত্ব কর্তব্যের বাহিরের সীমা রেখা পেরিয়ে মিশেছিলেন সাধারণ মানুষের কাতারে।

‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে, সেবক হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে, পাহাড় শিখায় তাহার সমান হই যেন ভাই মৌন-মহান’ এমন সব উক্তি বা কবিতার লাইনের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও লেখকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিশ্বের অনেকে সাধারণ জনগণের কাছে মহান ব্যক্তির খেতাব অর্জন করেছেন। আর এ ধারা অব্যাহত আছে বলেই বিশ্বের অনেক মানুষ অন্যের স্বেচ্ছায় সহায়তা পেয়ে সুস্থ সুন্দর জীবন-যাপন করছেন।
দেশে মরণঘাতক অদৃশ্য করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের শুরু থেকে সংক্রমণ রোধে দিন-রাত নিরলসভাবে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। করোনা আক্রান্ত লকডাউন এলাকাগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে নিজেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা খাদ্যসামগ্রী সঠিকভাবে বিতরণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে দুস্থ অসহায় কর্মহীনদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
বলছিলাম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা ২০১১ সালে ২৯তম বিসিএস’র ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডার সার্ভিসে অন্তভুক্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেনের কথা। তিনি ইংরেজিতে অনার্স শেষ করে চাকুরী জীবনে তিনি ঝিনাইদহ পরে বরগুনা, পটুয়াখালির মির্জানগরেসহ দেবহাটায় পরে তালা উপজেলায় যোগদান করেন। সংসার জীবনে এক পুত্র ও এক কন্যার জনক।

সম্প্রতি একজন মাস্টার রোল কর্মচারী তারাপদ দাস যৌবনের ৩০ বছর পার করছেন সাতক্ষীরা তালা উপজেলা পরিষদে। নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছগাছালি। সরকারি পুকুরে ছেড়েছিলেন মাছ। কিন্তু তার ভাগ্যে জোটেনি সেই গাছের কোন ফল ও পুকুরের মাছ। সেই মালী তারা পদর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে নিজ হাতে লাগানো গাছের ফল ও পুকুরের মাছ নিয়ে স্বপরিবারে হাজির হন ইকবাল হোসেন।
তারাপদ ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চাকরি থেকে অবসরে চলে যান। সেই থেকে তার খোঁজ রাখেনি কেউ। অবশেষে নিজের লাগানো গাছের ফল ও পুকুরের মাছ ভাগ্যে জুটল তার। ইউএনও মো. ইকবাল হোসেনকে বাড়িতে পেয়েই কাঁদলেন তারাপদ দাস।
তারাপদ দাসের ছেলে সাগর দাস জানান, ইউএনও স্যার বাড়িতে এসে বাবার খোঁজখবর নিয়েছেন। সরকারি মাছ, শীতবস্ত্র, নারকেল ও নগদ টাকা সহায়তা করেছেন।ঘোষনা করে গেছেন এখন থেকে বাবাকে প্রতিমাসে সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। বাবা ৩০ বছর ইউএনও অফিসের মালী পদে চাকুরি করেছেন। বয়সও ৮০ বছর পার হয়েছে বাবার। এখন বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন।
নিজের হাতে লাগানো নারকেল গাছের ফল পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন তারাপদ দাস। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি চাকুনি ছেড়ে আসার পর থেকে কোন স্যার (ইউএনও) কেউ খোঁজ নেয়নি।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন জানান, একদিন খুব ভোরে তারপদ দাস আমার সরকারি বাসায় গিয়েছিলেন একটি কম্বলের জন্য। তখন আমি জানতাম না যে এই তারাপদ বাবুই ছিলেন উপজেলা পরিষদের মালী। তিনি ৩০ বছর সেখানে চাকুরি করেছেন। নিজে হাতে উপজেলা পরিষদের শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ লাগিয়েছেন। পুকুরে মাছ ছেড়েছেন। তবে সেটি তিনি কখনো ভোগ করতে পারেনিনি। ঘটনাটি জানার পরই সহমর্মিতা নিয়ে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, কিছু ফল, মাছ ও নগদ কিছু টাকা উপহার দিয়েছি। এছাড়া রেজুলেশান করে এখন থেকে উপজেলা পরিষদ থেকে প্রতিমাসে তার জন্য নগদ কিছু সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। যেটি তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন বাড়িতে বসে পাবেন। আমাদের সারাদেশের উপজেলা পরিষদে এমন অনেক মানবিক ও স্পর্শকাতর গল্প রয়েছে। যিনি করেন বা গড়েন তিনি ভোগ করতে পারেন না। তবে সেটি তার প্রাপ্য। আমি চাই সকল কর্মকর্তারা মানবিক হয়ে এসব মানুষদের খোঁজ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবেন।

এমন শতাধিক মানবিক করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন। তবে তার এই মানবিক কাজ করার জন্য হতে হয়েছে বিপদের সম্মুখীন। বেশ কিছু দিন আগে উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের মাদরা এলাকায় সরকারি খালের নেটপাটা অপসারণকালে হামলার স্বীকার হন ইউএনও ইকবাল হোসেন। সে সময় খালটি নিজেদের বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। পরবর্তীতে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে সরকারিকাজে বাঁধা প্রদানসহ ইউএনও ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলা করেন।
ঘটনার দিন ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন জানান, অভিযোগ ছিল খালটি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ইতোমধ্যে জেলার সব সরকারি খালের ইজারা বাতিল করে দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরের পর মাগুরা ইউনিয়নের মাদরা এলাকায় সরকারি খালের নেটপাটা অপসারণের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রথম দুটি খালের নেটপাটা ভালোভাবেই অপসারণ করা হয়। কিন্তু তৃতীয় খাল থেকে নেটপাটা অপসারণ করতে গেলে স্থানীয় নারী-পুরুষরা মিলে বাধা দেয়। খালটি ইজারা নেয়া ও তাদের অধিকার রয়েছে বলে দাবি করে তারা অপসারণ কাজে নিয়োজিত লোকজনকে বাধা দেয়।

শুধু এখানেই শেষ নয়, তার এমন কাজ কর্মের জন্য উপজেলা কিছু হাইব্রিড নেতাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। উদ্ভব হয় নানা ষড়যন্ত্র। তবে সেই সব যড়যন্ত্রের জালকে ছিন্ন করে কাজ করেছেন সততার সাথে। আমাদের সেই প্রিয় ইউএনও ইকবাল হোসেন পদোন্নতিজনিত কারণে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যোগদান করবেন গোপালগঞ্জ জেলার এডিসি হিসেবে। আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও কষ্ট অনুভব করছি না। কারণ তিনি যেখানে যাবেন সেখানেও এমন মানবতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করবেন প্রিয় স্যার ইকবাল হোসেন হোসেন। লেখক:সাংবাদিক ও সমাজ সেবক

The post একজন সততার প্রতিক ইউএনও ইকবাল হোসেন appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3oqADaR

No comments:

Post a Comment