নানা অজুহাতে খুচরা বাজারগুলোতে এখন সবজির আকাশছোঁয়া দাম। বন্যা, বৃষ্টি, পরিবহনসংকট, উৎপাদন ঘাটতিসহ নানা অজুহাতে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে শিম, আলু, টমেটো, পটোল, লাউ, কাঁচা মরিচসহ প্রায় সব ধরনের শাকসবজি। অথচ বিভিন্ন অঞ্চলের তথ্য বলছে, দাম যতটা বেড়েছে, ভোক্তা ও কৃষক পর্যায়ে ততটা বাড়েনি। আর মূল্যবৃদ্ধির পরও কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দামের ব্যবধান দুই থেকে তিন গুণ। এ সংক্রক্রান্ত একটি খবর রবিবার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রথম পাতায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গ্রামের হাটে যে সবজি ১০ টাকা, শহরে তা ২০ টাকা। উৎপাদনকারী কৃষক সেই সবজির মূল্য পাচ্ছে ৬-৮ টাকা। মধ্যস্বত্ত্বভোগীর পকেটে ঢুকছে ১০-১২ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত ঠেকেছে কৃষকের।
কৃষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই খবরে আরও বলা হয়, গ্রামের হাটে বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০ টাকা। সেই বেগুন সাতক্ষীরায় বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। কৃষকদের ক্ষেত থেকে পাইকারী বিক্রেতারা কিনছেন ৬-৮ টাকা কেজি দরে। কৃষকদের ঠকাচ্ছে একটি চক্র। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। এ বছর বর্ষার কারণে জমিতে দু’বার বেগুনের চারা রোপন করতে হয়েছে। বেগুন চাষে ব্যাপক খরচ ও খাটা-খাটনি করতে হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তেমন কোন অর্থ পাওয়া যায় না। যারা অর্থ পাচ্ছে তারা তরকারীর চাষ করে না। ১০-১২ টাকায় পাইকারী দরে বেগুন বিক্রয় করে লেবার খরচের টাকা উঠছে না। কলারোয়ার খোরদো বাজারের তরকারী দোকানদার ও আড়ৎদারদের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, কাচা বাজারের দরদাম সব দিন এক রকম হয় না। এই হাটে পেঁয়াজ ৩০ টাকা, রসুন ৮৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ১৫টাকা বাঁধাকপি ৮ টাকা, পেঁয়াজেরকালি ৮ টাকা, মূলা ২টাকা, পালং ৭ টাকা, শিম ১৬ টাকা, ধনেপাতা ৫ টাকা আঁটি, পটল ৩৫টাকা, টমেটো ৩৫টাকা, ওলকপি ৭ টাকা, বেগুন ১০ থেকে ১২টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, গাজর ৩৫টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, কলা ১৫ টাকা, কাচাঝাল ৮০টাকা, কাগজি লেবু পিস ৫ টাকা, খিরাই ৩৫ টাকা, ডাটাশাক তাড়ি ৮টাকা, কচু ২০ টাকা, পুঁইশাক মটুরি ৩০ টাকা, আলু ৪০ টাকা ও ব্রুকলি ৩০ টাকা দরে পাইকারী বাজারে বিক্রয় হচ্ছে। অথচ এসব সবজির দাম শহরে দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ, খাজনা ও গাড়ী ভাড়ার টাকা দিয়ে যে টাকা থাকে সেই টাকা দিয়ে উৎপাদন খরচ উঠছে না। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তরিতরকারী চাষের জন্য সরকারি আর্থিক সহযোগিতা বা ভর্তুকি কৃষককে দেওয়া হয় না। কৃষি ব্যাংক থেকে ৪% সুদে কিছু ফসলের লোন দেওয়া হয়। তবে কাচা বাজারে যে মাল বিক্রয় হোক না কেন, আড়ৎদারীর কমিশন ঠিকমত দিতে হয়। তরকারী সস্তা হওয়ার এক পর্যায় লাভবান হচ্ছেন খাজনার হাট মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা খুশি হলেও খুশি নন চাষিরা।
আমরা মনে করি, কৃষক এসব সবজি বিক্রি করার পর ভোক্তার ব্যাগে ওঠার আগেই ব্যাপারী, আড়তদার, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ীসহ চার থেকে পাঁচ স্তরের মধ্যস্বত্বভোগীরাই এই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে ভোক্তা বেশি দামে কিনলেও মাঠের কৃষক পাচ্ছেন তিন ভাগের এক ভাগ। মাঠে ঠকছেন কৃষক আর বাজারে ঠকছেন ভোক্তা। ভ্যালু চেইন ও বাজার পর্যায়ে সঠিক মনিটরিং না থাকা, ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি এবং উৎপাদন-সরবরাহে সমন্বয় না থাকায় বাজারে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর হবেন এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এ প্রত্যাশা আমাদের।
The post সম্পাদকীয়: মধ্যস্বত্বভোগীদের রুখবে কে? appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/351FyXS
No comments:
Post a Comment