পুলিশি লাঞ্ছনা, গ্রেফতার, প্রতিবন্ধকতা, নিষেধাজ্ঞা, দিনভর ভোগান্তি। এমন একের পর এক প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত হাথরসের মাটিতে পা রাখলেন ভারতীয় কংগ্রেসের অন্যতম নেতা রাহুল গান্ধী এবং বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সঙ্গে তিন সদস্যের দলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে যখন নির্যাতিতার বাড়ির আঙিনায় তারা, গোটা হাথরসের গুমোট নিস্তব্ধতা ভাঙলো বর্বর সংঘবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ডে নিহত সেই কিশোরীর মায়ের বুকফাঁটা কান্নায়।
নানা মহলের চাপ আর বিশেষ করে যোগী নাথের পুলিশি ঘেরে অবরুদ্ধ হাথরসে যে ভয়াল নিরবতা বিরাজ করছিলো। ঠিক যেন তার বুক চিড়ে সেখানে পৌঁছান রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। অজানা আতঙ্কে মেয়ের মৃত্যুর যে যন্ত্রণা বুকে চেপে স্তব্ধ হয়েছিলেন মা। প্রিয়াঙ্কার বুকে মাথা ফেলে অবশেষে অঝোরে কাঁদলেন নিজের মেয়ের জন্যে। দাবি তুললেন, হাথরসের আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।
রাহুল-প্রিয়াঙ্কার উপস্থিতিতে এমনই মর্মবিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে হাথরসের গ্রামটিতে। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সেখানে সাক্ষাৎ করলেন কংগ্রেস নেতারা। যোগী সরকারের কাছ থেকে অনুমতি আদায় করে শনিবার রাতে হাথরসের বুল গড়হী গ্রামে নির্যাতিতার বাড়িতে পৌঁছন গান্ধী ভাই-বোন। সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের আরও তিন নেতা। সেখানে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তারা। মন দিয়ে তাদের অভিযোগ শোনেন। নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন প্রিয়ঙ্কাকে মেয়ের ছবিও দেখান। আনন্দবাজার
রাহুল-প্রিয়াঙ্কার প্রথম দফা হাথরস যাত্রা বিঘ্নিত হয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বাধায়।
সেখান থেকে বেরিয়ে এসে উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যে প্রিয়ঙ্কা বলেন, শেষ বারের মতো নিজেদের মেয়েকে দেখতেও পাননি তারা। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নিজের দায়িত্ব বোঝা উচিত। আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা পাঠাতে চাই, নির্যাতিতার পরিবারের ন্যায় প্রাপ্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। নির্যাতিতার পরিবার বিচারবিভাগীয় তদন্ত চান। অপসারণ চান জেলাশাসকের। ওদের নিরাপত্তাও দিতে হবে।
এদিকে ভাই রাহুল গান্ধী বলেন, এটা মর্মান্তিক। পৃথিবীর কোনও শক্তি নির্যাতিতার পরিবারকে চুপ করিয়ে রাখতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, হাথরসের এই নির্যাতিতা কিশোরীর পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন এই হাথরসেরই চাঞ্চল্যকর নির্ভয়া মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা। এই নারী আইনজীবীর সাহসিকতাই নির্ভয়ার পরিবারের ন্যায়প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছিল।
নির্যাতিতার লাশ পুড়িয়ে ফেলে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ – ফাইল ছবি
এর আগে হাথরস যাওয়া নিয়ে গত দু’দিন ধরে উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলছিল বিরোধীদের। রাহুল-প্রিয়াঙ্কার প্রথম দফা হাথরস যাত্রা বিঘ্নিত হয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বাধায়। যার এক পর্যায়ে লাঞ্ছিত হন রাহুল গান্ধী। এর পর তাদের দুই ভাইবোনকেই সাময়িকভাবে আটক করা হয়। অবশেষে শনিবার বিরোধীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে হয় যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে। রাজনৈতিক চাপে কোনঠাসা যোগীকে, সাম্প্রতিক হাথরসকাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা সাধারণ ভারতীয়রা শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের রক্তচক্ষু দেখিয়ে দিয়েছেন।
এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ শশী তারুর-সহ দলের ৩০ জন সাংসদকে নিয়ে হাথরসের উদ্দেশে রওনা দেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা। বহরের নেতৃত্বে রূপালি টয়োটা ইনোভার স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন খোদ প্রিয়ঙ্কা। আর বোনের পাশেই ছিলেন রাহুল। পিছনে একটি বাসে ছিলেন দলের সাংসদরা। কিন্তু দিল্লি-নয়ডা ফ্লাইওয়ে-তে ওঠার মুখে তাদের রাস্তা আটকাবার চেষ্টা চালায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
এদিনও দাবি ঐ একই, কংগ্রেস নেতারা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করছেন। কিন্তু এক পা-ও পেছাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আর সেখানেই গাড়ি থামিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতা শুরু করেন রাহুল। এর ঘণ্টাখানেক পরই তাদের হাথরসে যাওয়ার অনুমতি দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাহুলকে গন্তব্যের অনেক আগেই আটকে দেওয়া হয়েছিল। হাথরসের বুল গড়হী গ্রামে নির্যাতিতার বাড়ি। সেই গ্রামে ঢোকার মুখে ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। এমনকি সংবাদমাধ্যমকেও সেখানে আটকে দেয়া হয়।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় যন্তর মন্তরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ কংগ্রেসের যুব নেতারা। অন্য দিকে বাল্মীকি মন্দিরে নির্যাতিতার শোকসভায় যোগ দেন খোদ প্রিয়ঙ্কা। সেখানে তিনি বলেন, ন্যায্য বিচার আদায় করেই ছাড়ব। তা না হওয়া পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। নির্যাতিতার পরিবারকে কোনও সাহায্যই করেনি সরকার। অত্যন্ত অসহায় বোধ করছেন তারা। এমনকি, রীতি মেনে সৎকারটুকুও করতে দেয়া হয়নি।’’
The post প্রাণখুলে কাঁদলেন নির্যাতিতার মা: অবরুদ্ধ হাথরসের নিরবতা ভাঙলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3cYKJuE
No comments:
Post a Comment