Wednesday, February 17, 2021

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জলাবদ্ধ কবলিত জনগোষ্ঠির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন https://ift.tt/eA8V8J

নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জলাবদ্ধ কবলিত জনগোষ্ঠির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ডিজিটাল কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে পানি কমিটির নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরীর কাছে ৪দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন। সংবাদ সম্মেলনে পানি ভুক্তভোগি জনগোষ্ঠীর পক্ষে পানি কমিটির নেতা অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা জেলার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী অববাহিকায় বিগত প্রায় ২৫ বছর যাবত জলাবদ্ধ সমস্যাটি অব্যাহত আছে। ক্রমশ: এ সমস্যার তীব্রতা ও বিস্তৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেতনা ও মরিচ্চাপ অববাহিকার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা হলো সাতক্ষীরা সদর উপজেলা। উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষ অধিবাসী এ সমস্যা দ্বারা সরাসরি আক্রান্ত। উপজেলার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন হলো লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙ্গা, পৌরসভা, সদর ইউনিয়ন, ধূলিহর, ব্রম্মরাজপুর ও ফিংড়ী ইউনিয়ন। প্রতি বছর বর্ধিত হারে পলি জমে জমে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী ভরাট হয়ে নদী দুটি মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে এবং এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতির তীব্রতার কারণে দরিদ্র মানুষদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এলাকায় ধান ও মাছ চাষে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা।
পানি কমিটির নেতা ময়নুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা শুরু হয়। প্রথমে বিল এলাকা জলমগ্ন হয়, পরে বিল খাল ছাপিয়ে নীচু বসতি এলাকায় জলাবদ্ধতার সম্প্রসারণ ঘটে। ঘরের মধ্যে, আঙিনায়, গাছ পালার বাগানে এবং নীচু চাষাবাদ জমিতে প্রায় ৩-৬ মাস পর্যন্ত পানি জমে থাকে। নীচু এসব বসতি এলাকায় বাস করে দরিদ্র ও অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষরা। তাদের ঘরবাড়ী নড়বড়ে, জলাবদ্ধতার আঘাতে সহজে তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মানুষ সব পানি বন্দী হয়ে পড়ে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি বা উঁচু রাস্তায় যেতে মানুষ ব্যবহার করে কলার ভেলা, তালের ডিঙি বা বাঁশের সাঁকো। সর্বদা আছে সর্প ভীতি, ঘর চাপা পড়ার আতংক এবং পানির মধ্যে শিশু ডুবে যাওয়ার আশংকা। টিউবওয়েল-ল্যাট্রিন সব একাকার হয়ে যাওয়া এবং জলাবদ্ধ দূষিত পানির কারণে দেখা দেয় ব্যাপকভাবে পানি বাহিত রোগ ব্যাধির প্রদুর্ভাব যার প্রভাব পড়ে নারীদের উপর সবথেকে বেশি।
সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা কাজেরত জাহিদ আমিন শাশ্বত জানান, এমতাবস্থায় ব্যাপক সংখ্যক মানুষ বাধ্য হয় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় খুঁজে নিতে। অনেক মানুষ ভিটে মাটি ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে যায় অন্য কোথাও। বিল এলাকায় ৬-৯ মাস এবং অনেক এলাকা সারা বছর জলমগ্ন থাকে। কেবলমাত্র শুকনো মৌসুমে বিলের উঁচু অংশে চাষাবাদ করা সম্ভব হয়। নি¤œ বা গভীর অংশ জলমগ্নতার কারণে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। জলাবদ্ধতা প্রতি বছরের ঘটনা। দীর্ঘকাল ধরে এ সমস্যা অব্যাহত থাকায় দরিদ্র মানুষদের বিক্রী করার মতো কোন সম্বল আর অবশিষ্ট নেই। এ জনগোষ্ঠিকে কেউ ধার-দেনাও দিতে চায় না। জলাবদ্ধ মৌসুমে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দেয়। অধিকাংশ পরিবারের পুরুষ মানুষরা কর্মের সন্ধানে অন্যত্র চলে যায়। তখন পরিবারের সমস্ত ভার এসে পড়ে নারীদের উপর। ধার-দেনা করে ও উদয়াস্ত পরিশ্রম করে জলমগ্ন ঘরবাড়িতে নারীদেরকে সবকিছু সামাল দিতে হয়। জলাবদ্ধতা দ্বারা আরও ভোগান্তির শিকার হয় শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসহায় দুস্থ মানুষরা। প্রায় সারা বছর ধরে এসব মানুষ অর্ধাহার অনাহার এবং রোগ ব্যাধিতে ভুগে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষরা বলেন, জলাবদ্ধতায় জন ভোগান্তির মূল বিষয় এলাকা বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়া এবং জীবিকা সংকট। এ অবস্থায় এলাকায় দারিদ্র্য ও বাস্তুচ্যুতির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনবান্ধব সরকারের কোন উন্নয়ন কর্মকান্ডই এ এলাকায় টেকসই ও ফলপ্রসূ করা সম্ভব নয়। জলাবদ্ধ সমস্যাটি দীর্ঘদিন যাবত চলমান থাকায় এ সমস্যাটি স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ সমস্যা দ্বারা এলাকার মানুষ ক্লান্ত, জর্জরিত এবং দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কিন্তু এলাকাকে এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না এবং বুভুক্ষু অনাহার ক্লিষ্ট মানুষদের জন্য বিশেষ কোন ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচী গ্রহণ করা হচ্ছে না। যতদিন না জলাবদ্ধ সমস্যার কোন কার্যকরী সমাধান হয় ততদিন পর্যন্ত দরিদ্র মানুষদের বাঁচাতে, বাস্তচ্যুত ঠেকাতে তারা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিকট দরিদ্র, নারী প্রধান পরিবার, দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধী পরিবারদের জন্য খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখা, ভেঙে যাওয়া বা বিধ্বস্ত ঘরবাড়ী পুননির্মাণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। বোরো মৌসুমে দরিদ্র ও প্রান্তিক চাষীকে কৃষি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এবং এলাকায় ব্যাপকভাবে কর্মসৃজনমূলক কাজের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

The post দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জলাবদ্ধ কবলিত জনগোষ্ঠির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3u8glGk

No comments:

Post a Comment