Tuesday, February 23, 2021

রাজনীতি, আধিপত্য ও অন্যায়ের রোষানালে হেরে যাচ্ছে সাংবাদিকতা https://ift.tt/eA8V8J

এসএম বাচ্চু
আমরা বলে থাকি, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে সংবাদিক। আর সেই সাংবাদিকতা আজ সব থেকে নির্যাতন, লাঞ্ছনার শিকার। এমনকি সত্য সংবাদ প্রকাশ করলে হত্যা পর্যন্ত করা হয়। এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় যে সেটি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। আর এসব নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার হয়না কোনদিন। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে আসতে লাগে বহুত সময়। কালক্ষেপন হয় বিচারিক প্রক্রিয়ায়।

‘গত দেড় দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিক নিহত হয়েছেন ৩৫ জন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ২২ বছরে বাংলাদেশে মাত্র আটটি হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হলেও পাঁচটির রায় ভুক্তভোগীর পরিবার প্রত্যাখ্যান করেছে বলে এক প্রবন্ধে উঠে এসছে। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে নিহতের সংখ্যা ১৪ জন, আহত হয়েছেন ৫৬১ জন সাংবাদিক। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে নয় বছরে খুন হন নয়জন সাংবাদিক।

আরএসএফ জানিয়েছে, ২০২০ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৩৮৭ সাংবাদিক আটক, জিম্মি বা নিখোঁজ হয়েছেন। এ বছর সিপিজের প্রকাশ করা ইমপুনিটি ইনডেক্স বা দায়মুক্তি সূচকে বারোটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। ‘একসময় সাংবাদিকদের কেউ ক্ষতি করে পার পেতো না, কারণ সাংবাদিকদের মধ্যে একতা ছিল। এখন আমরা বহু ভাগে বিভক্ত, তাই পার পেয়ে যায়। সব খুনের বিচার হয়, কিন্তু দেশে সাংবাদিক খুনের বিচার হয় না। নিজেদের মধ্যে এই বিভক্তির কারণে আমরা বিচার আদায় করতে পারছি না। ’আইনের বেড়াজালে আটকে আছে সাগর-রুনীর মতো শতশত সাংবাদিক হত্যার বিচারিক কার্যক্রম।

গত শুক্রবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির খবর সংগ্রহে ছিলেন বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির। নিজের মোবাইল ফোনে ধরা পড়ে এক পক্ষের গুলির দৃশ্য। তা দেখে গুলিবর্ষণকারী ও তার সহযোগীরা চড়াও হয় মোজাক্কিরের ওপর। তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে তার ওপর গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। গুলিবিদ্ধ মোজাক্কিরকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার তাকে ঢাকায় আনা হয়। ওই দিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে তার মৃত্যু হয়।

কোম্পানীগঞ্জের চরফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশীরহাট বাজারে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আব্দুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার তিনদিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এরইমধ্যে অস্ত্র হাতে একজনের ছবি ভাইরাল হয়েছে। তবে ওই অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মুজাক্কির একজন সাংবাদিক। তিনি তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঘটনার ছবি তুলবেন, রিপোর্ট লিখবেন এটা তাঁর দায়িত্ব। একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করা দুর্বৃত্তরা সহ্য করবেনা, এটাই স্বাভাবিক। কারণ এতে তাদের মুখোশ খসে পড়ে। তিনি এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমালেন। তাঁর পরিবার পরিজন ও সহকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জানিনা মা-বাবা আছেন কিনা। থাকলে তাঁর মায়ের কোল শূন্য হয়েছে। বাবার অবলম্বন বিলুপ্ত হয়েছে। তাঁর স্ত্রী-সন্তান আছে কিনা তাও জানা নেই। থাকলে তাঁরা শোকের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে এতক্ষণে নিশ্চয়ই নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের আশার তরণী ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বিবেকবান মানুষকে মুজাক্কিরের মৃত্যু ব্যথিত হয়েছে। কথায় আছে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে, উলুখাগড়া পুড়ে মরে। গ্রাম্য কথায় বলে, পাটায় পুতায় ঘষাঘষি মরিচের দফা শেষ। আধিপত্য বিস্তারের সংঘর্ষে প্রায়শই নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।

নিহত সাংবাদিক মুজাক্কিরের হত্যার দায় বিবদমান কোনো পক্ষই এড়াতে পারেননা। মুজাক্কিরের ওপর ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়াটাও জরুরি। একটা মৃত্যু মানে একটা পরিবারের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়া। রাজনীতি, আধিপত্য ও অন্যায়ের রোষানালে হেরে যাচ্ছে আমাদের মতো সাংবাদিকরা। সাংবাদিক

The post রাজনীতি, আধিপত্য ও অন্যায়ের রোষানালে হেরে যাচ্ছে সাংবাদিকতা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3pKflV9

No comments:

Post a Comment