Saturday, February 20, 2021

সম্পাদকীয়: অমর একুশে: আত্মজাগরণের দিন আজ https://ift.tt/eA8V8J

 

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। ভাষার জন্য আন্তর্জাতিক রক্তদানের এক গৌরবময় দিন আজ। আজকের এই দিনটি মূলত বাঙালি জাতির আত্ম জাগরণের উদ্বোধনের দিন। বায়ান্নর একুশেই বাঙালি জাতি প্রথম প্রমাণ করে ‘ভাষার জন্য রক্ত দেয়া যায়।’ এই রক্ত ভাষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে দেয় অদম্য শক্তি এবং অসীম প্রেরণা। বায়ান্ন পর্যন্ত একুশ ছিল আত্মত্যাগ পর্বের প্রস্তুতি পর্ব; আর বায়ান্নর পরের একুশ ছিল স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনে উদ্দীপ্ত হওয়ার পথে প্রেরণার উৎস।
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি পূরণ হলে একুশের আন্দোলন স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, আটষট্টির গণআন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ একুশের চেতনায় উদ্ভাসিত। এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও নবজাগরণের প্রতিটি মাইলফলকে ভাষা আন্দোলনের চেতনা আমাদের বারবার প্রেরণা, সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। ভাষা শহীদদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বরে চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হয়েছে। জন্ম নিয়েছে ভাষার নামে একটি দেশ, ‘বাংলাদেশ’। পৃথিবীতে জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি একমাত্র ব্যতিক্রম। বায়ান্নর একুশে মূলত সেই অর্থে বাঙালি জাতির আত্মজাগরণের উদ্বোধক। একুশ মানে স্বাধীনতার সোপান, জাতীয় মূল্যবোধ ও ভাবাদর্শের বাতিঘর। বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার চেতনা জগ্রত হওয়ার দিন আজ।
এবার মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এসেছে একেবারেই ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও আবহ নিয়ে। কোভিড-১৯ বা মহামারী করোনাভাইরাস গ্রাস করেছে প্রায় গোটা পৃথিবী। ভয়াবহ সংক্রামক ও হন্তারক এই ব্যাধির বিরুদ্ধে মানবসভ্যতাকে লড়াই করতে হচ্ছে সবার মুখে মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। বাংলাদেশসহ গুটিকয়েক দেশে সদ্য আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন সীমিত পরিসরে প্রয়োগ শুরু হলেও করোনা প্রতিরোধে উপরোক্ত নিয়মবিধি মেনেই চলতে হবে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে এবারে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। অনুষ্ঠিত হবে না প্রভাতফেরি। শহীদ মিনারসহ বাংলা একাডেমি চত্ত্বরে বৃহৎ জনসমাবেশ। তেমন আড়ম্বর-আয়োজনে পালিতও হবে না আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নানা অনুষ্ঠান। কিছু অনুষ্ঠানের অয়োজন হবে রেডিও-টেলিভিশনসহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে। মহান একুশের চিরকালের বেদনাবিধুর পরিবেশ হয়ত বিরাজ করবে, সমবেত কণ্ঠে গীতও হবে- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…। সমস্ত বাঙালির সম্মিলিত এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে স্বাধীনতার মাস মার্চে পালিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তখন অনুষ্ঠিত হবে বইমেলা ১৮ মার্চ থেকে। শোকের মাস ফেব্রুয়ারিতে এটুকুই যা সান্ত¡না ও আনন্দের।
একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ শিখিয়েছে অন্যায়, অবিচার ও অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, প্রতিরোধী হতে। বায়ান্নর সেই ঐতিহাসিক একুশে ফেব্রুয়ারি ৬৭ বছর পেরিয়ে ৬৮ বছরে পদার্পণ করেছে। অমর একুশের চেতনা আজও অমলিন। সেদিন মৃত্যুঞ্জয়ী বাংলার তরুণরা মাতৃভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাজাত্যবোধের যে মশাল প্রজ্বালিত করেছিলেন, সেই আলো দেশের সীমানা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক পরিম-লে। বর্তমানে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয় বিশ্বের সর্বত্র।
মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের এমন নজির বিশ্বে আর নেই। রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে একুশের প্রভাব এতটাই সর্বব্যাপী যে, ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। আত্মপরিচয় বিস্মৃত জাতিকে স্বরূপের সন্ধান দিয়েছে মহান একুশ। জাতি হিসেবে একতাবদ্ধ করেছে যেমন, তেমনি জুগিয়েছে অপরিমেয় শক্তি ও সাহস। অদম্য আত্মবিশ্বাসে করেছে বলীয়ান। বাঙালি এই দিনে আবার জেগে ওঠে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে। গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে সুসংহত করার সুদূর অঙ্গীকারে।

The post সম্পাদকীয়: অমর একুশে: আত্মজাগরণের দিন আজ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3bi5GQs

No comments:

Post a Comment