Thursday, February 18, 2021

শ্যামনগরে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে ভূয়া হেবানামা তৈরীর অভিযোগ https://ift.tt/eA8V8J

সামিউল মনির, শ্যামনগর: জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে ভিন্ন দুই নারী পুরুষকে আপন ভাই বোন সাজিয়ে ‘ভুয়া’ হেবানামা তৈরীর অভিযোগ উঠেছে। মূল্যবান বসতভিটা হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশলের অংশ হিসেবে চক্রটি অতি গোপনে এমন দুষ্কর্ম করেছে। চক্রের হোতা নিজেই আবার ওই ‘ভুয়া’ হেবানামার সনাক্তকারী হিসেবে রেজিস্ট্রি কোবলা দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে জাল কাগজপত্র তৈরী করে সরকারি জমি পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ভূমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমুহের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় অন্যের বসবাসের জমিও নিজ নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়ার নজির স্থাপন করেছে চক্রটি।
ঘটনাটি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সদরের বাদঘাটা গ্রামের। গত ২৯ মে ২০১৭ তারিখে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সম্পাদিত হয় ‘ভূয়া’ ওই হেবানামা। দীর্ঘদিন চাপা থাকলেও সম্প্রতি প্রকৃত মালিক জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতে যেয়ে জালিয়াত চক্রের বাঁধায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জালিয়াতির এ ঘটনা জানাজানি হতেই ‘হেবানামা’ প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা ‘সেরেস্তা’র তরফ থেকে জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে স্বাক্ষীভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। আর ধুরুন্ধর জালিয়াত চক্রের দাবি অনেক দিন আগে সম্পাদিত ওই ‘হেবানামা’র বিষয়ে তাদের কিছুই মনে নেই।
জানা গেছে, ২০০১ সালের ২ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রহমান তার ছেলে শাহারিয়া বিল্লাহ, মধ্যস্থতাকারী রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রীর নামে ৫৯৩২ নং দলিলমুলে ১১ শতক জমি ক্রয় করে। উপজেলা সদরের কেন্দ্রভাগের মুল্যবান ঐ জমি আত্মসাতের অপচেষ্টায় উক্ত রফিকুল ইসলাম গত ২০১৭ সালের ২৯ মে ২৩৪৭ নম্বরের একটি ‘জাল’ হেবানামা তৈরী করে। যেখানে গ্রহীতা হিসেবে রফিকুল ইসলাম তার নিজ মাতা মোছা. রাইছা বিবি আর দাতা হিসেবে আব্দুর রহমানের ছেলে শাহারিয়া বিল্লাহর নাম উল্লেখ করেন।
অনুসন্ধানে তথ্য মিলেছে দূরতম কোন আত্বীয়তার সম্পর্ক না থাকার পরও চক্রের হোতা রফিকুল ইসলাম দাতা শাহারিয়া বিল্লাহ এর জাতীয় পরিচয় পত্র ‘টেম্পারিং’ করেন। দাতা হিসেবে শাহাবিল্লাহর পিতার নাম মো. আব্দুর রহমান ঠিক রাখা হলেও মাতার নাম ফিরোজা আক্তারের পরিবর্তে মোছা. আমেনা বিবি উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য আমেনা বিবি জালিয়াত চক্রের হোতা রফিকুল ইসলামেরই নানী। ‘হেবানামা’ তৈরীর স্বার্থে আমেনা বিবির মেয়ে রাইছা বিবি ও ফিরোজা আক্তারের ছেলে শাহারিয়া বিল্লাহকে আপন ভাই ও বোন দেখানো হয়েছে দলিলে। আর দু’জনের জাতীয় পরিচয়পত্র সেভাবেই তৈরী করা হয়েছে। রাইছা বিবির এনআইডি নং ৮৭১৮৬৯৪৯৮৩১০০ এবং শাহারিয়া বিল্লাহ এর এনআইডি নং ৮৭১৮৬৯৪৯৮৪৬৯৮। আর দু’টি জাতীয় পরিচয় পত্র পর্যবেক্ষনে তাদের মায়ের নামের ভিন্নতা দেখা গেলেও সম্পাদিত দলিলে উভয়ের মায়ের নাম আমেনা বিবি দেখানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্রে চরম ঝালিয়াতীর আশ্রয় নিয়েছে রফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন।
শুধুমাত্র ওই সম্পত্তি আত্মসাৎ করতেই রফিকুল ইসলাম এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তোভোগী শাহারিয়া বিল্লাহসহ তার পিতা মো. আব্দুর রহমানের। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি নিজ মালিকানাধীন জমিতে স্থাপনা তৈরী করতে গেলে রফিকুল বাঁধা দিয়ে ওই ভূয়া হেবানামা দেখায়। ইতোমধ্যে অন্য এক ব্যক্তির নিকট নিজ ভিটার উপর থেকে জমি বিক্রি করলেও তাকে ভুয়া হেবানামার মাধ্যমে দখলকৃত জমি থেকে দখল বুঝিয়ে দিয়ে তাদেরকে রফিকুল তাড়িয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন প্রবীণ ওই শিক্ষক।
ভূয়া হেবানামা সম্পাদনের মূল উপকারভোগী ও উক্ত জাল হেবানামা দলিলের সনাক্তকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, বহু আগের ঘটনা তাই ঠিক মনে করতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, অনেক আগে করা হয়েছে এটা, হয়ত ‘মিসটেক’ হতে পারে। ইতোমধ্যে ওই হেবানামার মাধ্যমে প্রাপ্ত জমি অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়ায় এখন সেসব নিয়ে কথা তোলা ঠিক হবে না। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি আব্দুর রহমানের সাথে মিটমাটের চেষ্টা করবেন বলেও জানান।
এদিকে দলিল সম্পাদনের দায়িত্বে থাকা সেরেস্তার পক্ষে মাহাবুবর রহমান বলেন, শাহারিয়া বিল্লাহ এবং গ্রহীতা রায়েসা বিবির মধ্যে দূরতম কোন সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে আপন ভাই বোন বানিয়ে উক্ত হেবানামা তৈরী হয়। ‘হেবানামা’ সম্পাদনের সময় রফিকুল ইসলাম তাদেরকে নিজের প্রস্তুতকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করায় তারা জালিয়াতির বিষয়ে আঁচ করতে পারেনি। ভুক্তোভোগী আব্দুর রহমান ও তার পরিবার আইনের আশ্রয় নিলে তারাও সাক্ষ্যভুক্ত হবেন বলেও তিনি জানান।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইমরুল হাসান বলেন, দলিল সম্পাদনের জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় পাওয়া যায়। যেকারনে কিছু দুষ্কৃতিকারী জালিয়াতির সুযোগ নেয়। তবে কোন মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা হলে ওই হেবানামা বাতিল হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সংক্ষুব্ধ পক্ষ ফৌজদারী এবং দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে ওই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে এধরনের প্রবনতা কমবে।
স্থানীয়সুত্রে জানা গেছে, ইতোপুর্বে বাদঘাটা এলাকায় সরকারিভাবে অধিগ্রহনকৃত দু’টি খতিয়ানের বেশকিছু জমি একই চক্রের সদস্যরা নিজ নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়ে তড়িঘড়ি নামপত্তন সম্পন্ন করেন। ১৯৯৪ সালে ঐ জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হলেও পরবর্তীতে রফিকুল ও তার লোকজন সেসব জমি ২০০৬ সালে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
যদিও বিষয়টি সামনে চলে আসায় ২০১৭ সালে উপজেলা সহকারী কশিনার (ভূমি) ওই নামপত্তন বাতিল করে নোট দেন। এছাড়া খগেন মন্ডল ও আমির আলীসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে এমন অনেক জমি চক্রটি সেটেলমেন্ট অফিসকে ম্যানেজ করে ‘দখলসুত্রে’ নিজ নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়ারও কৃতিত্ত্ব দেখিয়েছে।
ভুক্তোভোগীসহ স্থানীয়রা দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াত করে ভুয়া হেবানামা সম্পাদনসহ জালিয়াতিপূর্বক সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার অপতৎপরতায় লিপ্ত সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার দাবি করেছে।

The post শ্যামনগরে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে ভূয়া হেবানামা তৈরীর অভিযোগ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3k84Ny3

No comments:

Post a Comment