Saturday, August 29, 2020

নজরুল-হৃদয়ে পলাশী https://ift.tt/eA8V8J

 

তাহা ইয়াসিন

কবি নজরুল, ব্রিটিশ ভারতের অগ্নিযুগের অগ্নিসন্তান। পরাধীনতার যে অন্তর্জালা তাঁর মাঝে অগ্নিদাহ সৃষ্টি করেছিল সমকালীন আর কোনো কবি-সাহিত্যিকের লেখায় তার স্বাক্ষর নেই। এ কারণে কবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৪৭ সালে নজরুল সম্পর্কে একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেনÍ ‘বাংলা কাব্যে নজরুল-এর অভ্যুদয়ের মুহূর্তে মুক্তকন্ঠ স্পষ্টতা চেয়েছিল,তিনি তা যৌবনোচিত উৎসবে উৎসাহে দিতে পেরেছিলেন। অনেকখানি সমাজোৎসারিত উৎসাহ, ভর্ৎসনা ও দেশপ্রেম-বহ্নি রয়ে গেছে তার কবিতায়।

বাংলার এ মাটির থেকে জেগে, এ মৃত্তিকাকে সত্যিই ভালোবেসে আমাদের ঊনিশ শতকের ইতিহাসপ্রান্তিক শেষ নিঃসংশয়তাবাদী কবি নজরুল ইসলাম। তাঁর জনপ্রেম দেশপ্রেম পূর্বোক্ত শতাব্দীর বৃহৎ ধারার সঙ্গে সত্যিই একাত্ম। পূর্ববর্তী কবিরা এ সৌভাগ্য থেকে অনেকটা বঞ্চিত বলে আজ পর্যন্ত নজরুলকেই সত্যিকারের দেশের ও দেশীয়দের বন্ধু কবি বলে জনসাধারণ চিনে নেবে। জনের ও জনতার বন্ধু ও দেশপ্রেমিক কবি নজরুল।’

নজরুলের আগে ফিরিঙ্গি রক্তোদ্ভুত হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-’৩১) ভারতবর্ষের পরাধীনতার তীব্র জ্বালা অনুভব করে লেখেন,

ঞযব ঐধৎঢ় ড়ভ ওহফরধ সহ আরো কিছু কবিতা। তাঁর এই কবিতার কয়েকটি লাইন এরকম,

‘ভারত বীণা

আমার ভারত বীণা!

আজ তুমি তছনছ বাগানে ছিন্ন পুষ্পের মতো পড়ে আছো

দারুণ অবহেলায়।

আজ ভগ্ন তুমি, ছিঁড়ে গেছে সব তার,

এখানেই কি বিলয় তোমার।’

ডিরোজিও কবিতাটি লিখেছিলেন ইংরেজিতে। ইংরেজির তীব্র বেগ অনুবাদে আসেনি, এজন্য আর দিচ্ছি না। সাহিত্যের অনুবাদ হয় না, আর কবিতার অনুবাদ তো কবিতার মৃত্যু, আবার যদি কবি না হয়। যাই হোক এটি কোন পত্রিকার অনুবাদ।

মূল ইংরেজি কবিতাটি এরকম,

The Harp Of India

Why hang’st thou lonely on yon withered bough?

Unstrung for ever, must thou there remain;

Thy music once was sweet – who hears it now?

Why doth the breeze sigh over thee in vain?

Silence hath bound thee with her fatal chain;

Neglected, mute, and desolate art thou,

Like ruined monument on desert plain:

O! many a hand more worthy far than mine

Once thy harmonious chords to sweetness gave,

And many a wreath for them did Fame entwine

Of flowers still blooming on the minstrel’s grave:

Those hands are cold – but if thy notes divine

May be by mortal wakened once again,

Harp of my country, let me strike the strain!

ডিরোজিও ভারতবর্ষের নবজাগরণের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। তাঁর সম্পর্কে এখানে বেশী বলার অবকাশ নেই। তাঁর পরে কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২৭-১৮৮৭) একই বেদনা থেকে ঘোষণা করেন,

স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে

কে বাঁচিতে চায়?

দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে

কে পরিবে পায়।

কোটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে

নরকের প্রায়

দিনেকের স্বাধীনতা, স্বর্গ-সুখ তায় হে

স্বর্গসুখ তায়।

এই একই যন্ত্রণাবিদ্ধ হৃদয় থেকে ইসমাইল হোসেন সিরাজী লেখেন ‘অনলপ্রবাহ’, নবীনচন্দ্র সেন লেখেন, পলাশীর যুদ্ধ। এছাড়া আরো অনেকের হৃদয় থেকে অনেক কবিতা, গান বিচ্ছুরিত হতে থাকে।

নজরুলের মধ্যে পরাধীনতার গ¬ানি যে অন্তর্জালা সৃষ্টি করে তিনি তা ছড়িয়ে দেন লাঞ্ছিত জনতার মাঝে। মানুষের মাঝে সাম্য, স্বাধীনতার বোধ জাগ্রত করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। জীবনের সমস্ত অধিকার হারিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে জীবন দিয়ে হলেও মানুষকে প্রকৃত মর্যাদার জীবনের জন্য লড়াই করা উচিত, যা তিনি প্রতিষ্ঠার জন্য আহবান জানান। সেকারণে পরাধীনতার বোধ তাঁর কবিতা, গান এমনকি প্রবন্ধেও প্রাণবন্তরূপে ফুটে উঠেছে।

বাংলার তথা ভারতবর্ষের  স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় পলাশীর প্রান্তরে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। নজরুলের অনেক কবিতায় গানে বেদনার মৌন স্তব্ধীকৃত রূপে পলাশীর সেই পরাজয়ের বেদনা ফুটে উঠেছে। ‘কা-ারী হুসিয়ার’ কবিতায়। যেমন তিনি লিখেছেন-

‘কা-ারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,

বাঙালির খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!

ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর।

উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।’

স্বাধীনতার সূর্য যেভাবে অস্তমিত হয়েছে সেভাবেই তা একদিন ফিরে আসবে বলে নজরুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই শক্তি প্রয়োগ না হলে ক্ষুদিরাম, সূর্যসেনসহ অগণিত বীরের ফাঁসী হতো না এবং স্বাধীনতাও ত্বরান্বিত হতো না। নজরুল বৈপ¬বিক সংগ্রামের পথেই স্বাধীনতার কামনা করেছিলেন। পলাশী নিয়ে তাঁর আরেকটি গানেও দেখা যায় একই রকম হৃদয়ের রক্তক্ষরণ।

হায় পলাশী!

এঁকে দিলি তুই জননীর বুকে কলঙ্ক-কালিমা রাশি,

পলাশী, হায় পলাশী।

আত্মঘাতী স্বজাতি মাখিয়া রুধির কুমকুম,

তোরই প্রান্তরে ফুটে ঝরে গেল পলাশ কুসুম।

তোরই গঙ্গার তীরে পলাশ-সঙ্কাশ সূর্য ওঠে যেন দিগন্ত উদ্ভাসি।

নজরুলের সাহিত্য-সাধনার মূলচেতনা ছিল সকল রকম পরাধীনতা থেকে মুক্তির প্রবল আকুতি। সেকারণে তিনি ‘আমি সৈনিক’ প্রবন্ধে লিখেছেন-

‘যে দেশকে ভালোবাসে শুধু চোখের জলই ফেলবে না, সে দরকার হলে আঘাতও করবে, প্রতিঘাতও বুক পেতে নেবে, বিদ্রোহ করবে।’

The post নজরুল-হৃদয়ে পলাশী appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2G0NS0i

No comments:

Post a Comment