Sunday, August 30, 2020

চেয়ারম্যান হচ্ছেন ‘পল্লি পরিষদ প্রধান’ পৌর মেয়র হবেন ‘পুরাধ্যক্ষ’ https://ift.tt/eA8V8J

বাংলা ভাষায় রূপান্তরের নামে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের পদের নাম পরিবর্তনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সংগঠন। নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করে তারা বলছে, প্রচলিত নাম পরিবর্তন করে যেসব নামের প্রস্তাব করা হয়েছে তা দুর্বোধ্য। তাছাড়া এটা করতে হলে মুল আইনগুলো সংশোধনের প্রয়োজনসহ নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। বহুল প্রচলিত ইংরেজি শব্দের পরিভাষা বাংলায় আত্তীকরণে এটি ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে। এটি জনগণ সুন্দরভাবে গ্রহণ করার পাশাপাশি এতে অভ্যস্ত হয়েছেন।

তবে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। আবার কেউ কেউ বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় নাম রাখার মত দিয়েছে। গত ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের সভার কার্যপত্র পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

ওই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ এর খসড়ার ওপর নির্বাচন কমিশনে ৫৫টি মতামত জমা পড়েছে। দেশের ১৭টি নিবন্ধিত ও ২৩ অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন ধরনের সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে ১৫ জন এ আইনের উপর মতামত দিয়েছে। ৫৫টির মধ্যে ১৮টি মতামত পড়েছে নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত। মতামত দেওয়া ৯টি দল ও সংগঠনের মধ্যে বিএনপিসহ ৫টিই নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে মত দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পক্ষে-বিপক্ষে সরাসরি মত না দিলেও নাম পরিবর্তনের কারণে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি আইনে সংশোধন আনার প্রয়োজন হবে বলে তাদের মতামতে উল্লেখ করেছে। আর ব্যক্তিগতভাবে মত দেওয়া ৯ জনের ৫ জনই নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ এর খসড়ায় ইউনিয়ন পরিষদের নাম পরিবর্তন করে ‘পল্লি পরিষদ‘, পৌরসভার নাম পরিবর্তন করে ‘নগর সভা’ আর সিটি করপোরেশনের পরিবর্তে ‘মহানগর সভা’ রাখা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাবও করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের স্থলে ‘পল্লি পরিষদ প্রধান’, পৌরসভার মেয়রের পদবি পরিবর্তন করে ‘পুরাধ্যক্ষ’ আর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদবি পরিবর্তন করে ‘মহানগর আধিকারিক’ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান যথাক্রমে ‘উপজেলা পরিষদ প্রধান ও উপপ্রধান’ উল্লেখ করা হয়েছে।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৬টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জানিয়েছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের মতামতে বলেছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন বা বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করলে স্থানীয় সরকারের কয়েকটি আইন পরিবর্তন করতে হবে।

বিএনপি বলছে, নির্বাচন কমিশনের নাম অক্ষুণœ রেখে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদবী পরিবর্তনের প্রস্তাব অনৈতিক ও অপ্রয়োজনীয়। গণফোরামের মতামতে বলা হয়, কিছু কিছু অন্য ভাষার শব্দ বাংলা ভাষায় আত্তীকরণ হলে বাংলা ভাষা দুর্বল হয় না, শক্তিশালী হয়।

অপরদিকে খেলাফত আন্দোলন শব্দগুলোর শ্রুতিমধুর ও গ্রহণযোগ্য বাংলা পরিভাষা প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করেছে। এক্ষেত্রে তেমনটি না পেলে পরিবর্তন না করার পরামর্শ দিয়েছে। দলটি মতামতে বলেছে, জনগণ যেসব পরিভাষা ও শব্দ উচ্চারণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, সেগুলোর পরিবর্তে সহজ বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলে অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

খেলাফত মজলিস বিদ্যমান নাম পরিবর্তন করে পৌর মেয়রের পদবি ‘নগরকর্তা’ ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদবি ‘মহানগরকর্তা’ রাখার প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ইসির প্রস্তাবের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত প্রকাশ করেছে।
এদিকে নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন পৌরসভা মেয়রদের সংগঠন মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ম্যাব। সংগঠনটি লিখিত মতামতে বলেছে, চারটি শব্দকে বাংলা পরিভাষার নামে অপরিচিত ও দুর্বোধ্য শব্দে রূপান্ত্ররিত করার প্রয়াস জটিলতা বাড়াবে, যা অহেতুক ও অগ্রহণযোগ্য। তারা বলেছে, এ শব্দগুলোর পরিবর্তন হলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী পৌরসভার জনপ্রতিনিধিগণ ব্যাপক পরিচয় সংকট এবং মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নের মুখে পড়বেন। যা পৌরসভার জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। তাছাড়া সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে সব আইন ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় প্রণয়ন করা। এই চিন্তা থেকে কমিশন বাংলায় আইনটি করছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ও পদবী ও বাংলায় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে জনগণের যাতে বুঝতে সহজ হয় যার কারণে বাংলার পাশাপাশি ব্র্যাকেটে ইংরেজি শব্দটিও আইনে দেওয়া থাকবে। এর ফলে নামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য আইনগুলোর সংশোধনীর প্রয়োজন পড়বে না।’
এদিকে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে মতামত দেওয়া ছাড়াও আরও কিছু মতামত এসেছে রাজনৈতিক দল ওইসব সংগঠন থেকে। অনিবন্ধিত দলগুলো তাদের মতামতে নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করার প্রস্তাব করেছে। তবে নিবন্ধিত দলগুলো এক্ষেত্র বড় ধরনের কোনও মতামত দেয়নি।

নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তাবিত নিবন্ধন আইনের খসড়ার বিষয়ে মতামত চাইলেও ক্ষমতাসীন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব সে বিষয়ে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ পরিবর্তন করে ইসি যে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন নামে নতুন খসড়া প্রণয়ন করেছে সে বিষয়ে মতামত দিয়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের প্রস্তাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় রূপান্তরের পক্ষে মত দিলেও আইনটির নাম পরিবর্তনে ঘোর বিরোধিতা করেছে।

এদিকে নিবন্ধনের বিষয়ে দলটি তাদের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি কেবল সরকারের হাতে না রেখে আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া তাদের খসড়া আইনে দলের নিবন্ধন বাতিলের শর্তে নতুন একটি বিধান যুক্ত করারও পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত ও পতাকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা তাতে মদত দিলে নিবন্ধন বাতিল করার শর্ত আরোপ করতে বলেছে ক্ষমতাসীন দলটি।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপিসহ আরো কয়েকটি দল কোনও মতামত দেয়নি। কোনও কোনও দল করোনা সংক্রমণ কালে এ ধরনের আইন উপনয়নের উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে।

পত্রদূত ডেস্ক:

The post চেয়ারম্যান হচ্ছেন ‘পল্লি পরিষদ প্রধান’ পৌর মেয়র হবেন ‘পুরাধ্যক্ষ’ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3bc1SQg

No comments:

Post a Comment