Friday, August 28, 2020

এবার সুন্দরবনের মালিকানা দাবি করলো শরণখোলার ‘লড’ সামাদ! https://ift.tt/eA8V8J

ব্রিটিশ আমল অবধি থাকা জমিদারি প্রথা পাকি¯Íান সৃষ্টির পরপরই ১৯৫০ সালে রদ হয়ে যায়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের সব সম্পদের মালিকানা সরকারের। কিন্তু পিছিয়ে থাকা সুন্দরবনের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা এলাকার সরল মানুষদের ধোঁকা দিতে ওই এলাকায় নব্য জমিদারি প্রজাস্বত্ব দাবি করে বসেছেন এক ব্যক্তি।

এজন্য নিজের বাড়িতে সদর দপ্তর আর শরণখোলায় রীতিমত অফিস খুলে মাইকিং করে সবাইকে প্রজা বানিয়ে তার আনুগত্য স্বীকার, জমি বন্দোব¯Í নেওয়া এবং তাকে খাজনা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এভাবে প্রকাশ্যে রাষ্ট্রের বিরোধিতাকারী এই ব্যক্তির নাম আ. সামাদ হাওলাদার।

শুধু মৌখিকভাবে দাবি নয়, ‘সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব’ নামে সাইনবোর্ডও ঝুলিয়েছেন সামাদ। নিজেকে ঘোষণা করেছেন ওই এলাকার জমিদার হিসেবে। নিজস্ব বাহিনী তৈরি করে ও এজেন্ট লাগিয়ে ওই এলাকার স্থানীয় সহজ-সরল মানুষদের কাছে খাজনা দাবি করা, দুই তিন হাজার টাকার বিনিময়ে জমি বন্দোব¯Í

দেওয়ার মতো অপকর্ম চালাচ্ছিলেন কয়েক বছর ধরে। পরে শরণখোলায় অফিস খুলে সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করেন গত ২৪ আগস্ট থেকে। তবে সফল হতে পারেননি। স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়ে এই আব্দুস সামাদের শরণখোলা অফিসের সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। তবে তাকে আটক করা যায়নি।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, জমিদারি আমলের ধুয়া তুলে ‘সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব’ নামে একটি কল্পিত আইনের গল্প বাজারে ছাড়েন প্রতারক আব্দুস সামাদ। তার মনগড়া ১৯৫৬ সালের এই আইনের বলে তিনি হয়ে যান এই এস্টেটের জমিদার। তার বানানো গল্প অনুযায়ী সেসময় এই এস্টেটের অধীনে তৎকালীন বৃহত্তর খুলনা জেলার অধীন সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা জেলার সকল জমি ছিল।

তবে তিনি শরণখোলা আর মোরেলগঞ্জেই তার জমিদারি স্বত্ব দাবি করে বসেন।
১৯৫০ সালে পুরো ভারতবর্ষে জমিদারি প্রথার অবসান হলেও এই আব্দুস সামাদের মনগড়া ইতিহাস নিয়ে এতদিন কেউ তেমন আলোচনা করেনি। গোপনে সাধারণ মানুষের ওপরে তার লোক দিয়ে জমি বন্দোব¯েÍর নামে প্রতারণা চালালেও প্রকাশ্যে বিষয়টি তেমন একটা সামনে আসেনি।

তবে সম্প্রতি কিছু অভিযোগ পাওয়ার সূত্র ধরে এই কথিত নব্য জমিদারের কল্পিত এস্টেট বন্ধ করতে বুধবার অভিযানে নামেন শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মো¯Íফা শাহিন। এসময় এ প্রতারকের সাইনবোর্ড, ব্যানার অপসারণ করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এসময় শরণখোলায় খোলা এই প্রতারকের অফিস তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মাইকিং করে এ বিষয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পিসি বাড়ইখালীর বাসিন্দা আকবর আলী হাওলাদারের ছেলে আ. সামাদ হাওলাদার। বাবা ছিল জেলে। তবে বুদ্ধি খাটিয়ে প্রতারণার নতুন ধরণ বের করে আ. সামাদ বনে যান জমিদার। তিনি প্রাদেশিক সরকারের ১৯২৮ সালের ৮ বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী এস.এ (চলমান) ও বি.আর.এস (সংশোধনী) প্রাদেশিক সরকারের খাস রেকর্ড অনুযায়ী সুন্দরবন লর্ড চিরস্থায়ী প্রজাস্বত্ব এস্টেট কবলা সূত্রে নিজেকে মালিক ঘোষণা করেন।

ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে তিনি পিসি বাড়ইখালির নিজ বাড়িতে সদর দপ্তর এবং গত ২৪ আগস্ট শরণখোলা উপজেলার পাঁচ রা¯Íার মোড় এলাকায় একটি অফিস নিয়ে সাইনবোর্ড স্থাপন করে। বাড়িতে অফিস খুলে প্রতারণা করার বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে না এলেও শরণখোলায় অফিস খোলার পর থেকেই তার কর্মকান্ড আলোচনায় উঠে আসে। এই অফিস থেকেই এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জমি বন্দোব¯Í দেওয়ার নামে খতিয়ান খুলে জমির পর্চা ও দাখিলা নেওয়া নির্দেশ দেন এই নব্য জমিদার। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমীন হাওলাদার অভিযোগ করে জানান, শরণখোলায় সাইনবোর্ড টানানোর আগেই আ. সামাদ বেশ কিছু এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মুক্তা মুন্সি, মোজাম্মেল হোসেন, গোলাম রাব্বি, মাছের খাল পাড়ের লাইলী বেগম, উত্তর রাজাপুর গ্রামের আজিজ হাওলাদার, রহমান খান, লাকুড়তলার রেকসোনা বেগম, খাদা গ্রামের মাহামুদা বেগম এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন। উত্তর রাজাপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন খান জানান, ইতিমধ্যে তাদের এলাকার মতিয়ার হাওলাদার ও পান্না ঘরামীর জমি চাষে বাধা দিয়েছেন সামাদ হাওলাদারের এজেন্টরা।

খোন্তাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজু সরদার জানান, সামাদ তার এস্টেটের সদস্য হওয়ার জন্য দুই হাজার টাকা দাবি করেন এবং এরপর থেকে জমির খাজনা তার কাছে দিতে বলেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু জানান, সামাদের পিতা আগে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার পুত্র এখন নিজেকে জমিদার দাবি করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ বাণিজ্য শুরু করেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সামাদ হাওলাদার স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্প্রতি বলেন, জমিদারি আমলের কাগজপত্র ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এ অঞ্চলের জমির মালিক আমি। আমার কাছ থেকে সবার নতুন করে জমি বন্দোব¯Í নিতে হবে। তবে কোন আদালতের কী নির্দেশ সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মো¯Íফা শাহিন জানান, তথাকথিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের নামে সামাদ ও তার লোকেরা বাংলাদেশকে অস্বীকার করছে। বাংলাদেশে এখন আর কোনও জমিদারি প্রথা নেই, সকল জমির মালিক সরকার। তাই খবর পেয়ে তাদের অফিস বন্ধ করে সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। শরণখোলায় এধরনের বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়ে কেউ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পত্রদূত ডেস্ক:

The post এবার সুন্দরবনের মালিকানা দাবি করলো শরণখোলার ‘লড’ সামাদ! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3gD6ZKs

No comments:

Post a Comment