বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে থেকেই এ দেশের বন্দিরা ঈদের তিন দিন কারাগারে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। এরমধ্যে রয়েছে—বাড়ি থেকে পাঠানো পরিবারের তৈরি খাবার ও নতুন কাপড় গ্রহণ এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ। আইনি নিয়ম না হলেও কারা প্রথা হিসেবে চলে আসছে এটি। দেশের সব কারাগারের বন্দিরাই এই সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে এবারই ঘটলো দীর্ঘ ঐতিহ্যের ব্যতিক্রম। করোনা মহামারির কারণে ঈদের সেই বিশেষ সুবিধা মেলেনি কোনও বন্দির। কারা অধিদফতর জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে বন্দিদের সঙ্গে সব ধরনের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ। তাই পরিবারের তৈরি খাবার বন্দিদের সরবরাহ করা হয়নি। বন্দিরা কারাগারের তৈরি বিশেষ খাবার খেয়েছেন। এছাড়াও ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। এই কারাগারে বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার বন্দি রয়েছেন। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে বন্দিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে। তাই ঈদের খাবারও সরবরাহ করা হয়নি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘কারাগারে বন্দিদের করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কারা অধিদফতর বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো—বন্দিদের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ। এছাড়াও ঈদের দিন বিশেষ সুবিধা হিসেবে বন্দিরা পরিবারের কাছ থেকে যে খাবার পেতো, গত ঈদুল ফিতর থেকে আমরা বাইরের খাবার প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছি। তাই এবারের ঈদেও পরিবারের খাবার সরবরাহ করা হয়নি।’
তিনি জানান, বন্দিরা সবাই কারাগারে তৈরি বিশেষ খাবারই খেয়েছেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তৈরি খাবারের মধ্যে সকালের মেন্যুতে ছিল—পায়েস ও মুড়ি, দুপুরে ভাত, রুই মাছ ও আলুর দম এবং রাতে ছিল— পোলাও, মুরগি ও গরুর মাংস। এছাড়াও রাতে মিষ্টি ও পান দেওয়া হয়েছে।
জেলার মাহবুবুল বলেন, ‘আমরা বন্দিদের জন্য কারাগারের ভেতরে বিশেষ দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করানোর চেষ্টা করেছি। বন্দিরাও সহযোগিতা করেছেন। করোনাভাইরাসের মহামারিতে সবকিছুতেই প্রভাব পড়েছে। তাই কারাগারে থাকা বন্দিদের ওপরও তার প্রভাবে পড়েছে। তাদের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ হলেও মোবাইল ফোনে সপ্তাহে একজন বন্দি একবার কথা বলতে পারেন। পাঁচ মিনিট করে একজন বন্দি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৫টি মোবাইল ফোন দিয়ে বন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। প্রতিদিন অন্তত দুইশ’ বন্দি মোবাইল ফোনে কথা বলেন।
ঐতিহ্যগতভাবেই বিশেষ দিনগুলোতে পরিবার পরিজন বন্দিদের জন্য কারাগারে বিশেষ খাবার নিয়ে যেতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনাসহ জাতীয় নেতারা যখন দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি থাকতেন, তখন পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে দেখা করার বিশেষ সুবিধা পেতেন। বাসার তৈরি খাবারও জাতীয় নেতাদের জন্য নিয়ে যেতো পরিবারগুলো। বিভিন্ন বই পুস্তকে এই ঐতিহ্য বা প্রথার কথা জানা যায়। তবে সেই রীতি এবার ভেঙে দিয়েছে করোনাভাইরাস। নির্দিষ্ট করে কারা অধিদফতর এই ঐতিহ্যের বয়স কত বছর তা জানাতে পারেনি, তবে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে থেকেই এই প্রথা চলে আসছে বলে অনুমান করে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কারা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে কারা কর্মকর্তা, কর্মচারী, রক্ষী ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে আইসোলেশনে আছেন মোট ১০১ জন। এদের মধ্যে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন কারারক্ষী, কারা অধিদফতরের একজন অফিস সহায়ক, ফরিদপুর জেলা কারাগারে ৬ জন কারারক্ষী, তাদের পরিবারের সদস্য ৩ জন (কারারক্ষীর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে) ও কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের ২ জন কারারক্ষী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
কারা অধিদফতরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, প্রিজনস) মুহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, ‘আমরা বন্দিদের সর্বোচ্চ নিরাপদে রাখতে কাজ করছি। বন্দিদের নিরাপদে রাখতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বন্দিদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষাতের বিষয়টি বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এটা বন্ধ থাকবে।’
- তিনি বলেন, ‘ঈদে বাসায় তৈরি খাবার বন্দিদের সরবরাহ না করা হলেও কারাগার থেকে তাদের বিশেষ ও সুস্বাদু খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। বন্দিরা সেটাই খেয়েছেন।’ অনলাইন ডেস্ক
The post কারাগারের ঐতিহ্য ভেঙে দিয়েছে করোনা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2PhfzDB
No comments:
Post a Comment