Friday, August 21, 2020

এ নগরীর আমি কেউ নই https://ift.tt/eA8V8J

শাহান সাহাবুদ্দিন
মৃত্যুর সমান বয়সী হতেই আজ আমি এসেছি তোমাদের নগরীতে
একটা ট্রেন মৃত্যুকে তরজমা করে চলে গেছে বাহাদুরাবাদ ঘাটে
একটা অন্ধ ভিখেরি সাদা রুমাল হাতে দাঁড়িয়ে আছে যমুনার ওপারে;
আমি মৃত্যুর সমান বয়সী হতেই ভিখেরিকে ডাকি, আয় আয়—
ভিখেরি হাসে; তার পিছনে স্পষ্ট নারকেল গাছের
পাতা গলিয়ে ডুবে যেতে থাকে সূর্য।

মৃত্যুর সমান বয়সী হতেই আশৈশব হাঁটছি তোমাদের নগরীতে।
আশৈশব একটা বদ্ধ উন্মাদ হেমলকের বিষের পেয়ালা হাতে
কখনো দাঁড়ায় কখনো হাটে কখনো
লাল বাউলা মতো চুল উড়িয়ে দৌড়ায় নগরীর
এ গলি থেকে ও গলি, জনারণ্যেও-;
অদৃষ্ট আমাকে ইঙ্গিত করে ব’লে:
ওই দিকেই মৃত্যুর সমান বয়স; তাকে অনুসরণ করো।
আমি উন্মাদের পিছু হাঁটি। উন্মাদ খিস্তি আওড়ায়,
কখনোবা থুতু ফেলে লাল গালিচার ওপরে, কখনো বা মসনদে!
ভীত সন্ত্রস্ত আমি পালাতে চাই। পিছনের গলি খুঁজি।
লাল বাউলা চুলের উন্মাদ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
কেঁপে উঠে জলসা ঘর, হেরেমখানা, আস্তাবল,
সরাইখানা, বিচারালয় ও গির্জা!
আমি পালানোর পথ খুঁজি।
অদৃষ্ট ভেংচি কাটে। রক্ত চক্ষু দেখায়।
বেলা শেষে নগরীর শেষ ফটকটিও বন্ধ হয়ে যায়।
আমি চিৎকার করি। অদৃষ্ট হাসে।

মৃত্যুর সমান বয়সী হতেই যদি এখানে আসা
তবে কান্না কেনো? এ নগরীতে কান্না নিষিদ্ধ।

আমি পিপাসায় কাতরাই।
অদৃষ্ট ফের ইঙ্গিত করে লাল বাউলা চুলের উন্মাদের পেয়ালার দিকে।
বুকের ছাতি আমার ফেটে যেতে থাকে।
পেয়ালায় দেখতে পাই আমার ভয়ার্ত চোখ, বিষাদ গ্রস্ত মুখ।
‘না না’ চিৎকার করে আমি দৌড়াতে থাকি পিছনের দিকে।

দূরে পাহাড়ের ওপরে গির্জায় ঘণ্টাধ্বনি বাজতে থাকে।
পাশের গলিতে ভয়ঙ্কর চিৎকার করতে থাকে একটা পাগলা কুকুর।
আস্তাবল থেকে শেকল ছিঁড়ে বেড়িয়ে পরে একটা কালো ঘোড়া।
পুরনো এ নগরীর একমাত্র রেলস্টেশনে বেল বাজতে থাকে।
আমি পালানোর পথ খুঁজি।
পৃথিবীর সমান বয়সী স্টেশন থেকে বের হয়ে
আসে একজন খোঁড়া মতো লোক।
তিনিই স্টেশন মাস্টার, বলে যায় অদৃষ্ট।

আমি ফটক গলিয়ে সেদিকে যেতে পারি না।

অদৃষ্ট হাসে। ভেংচি কাটে।
এই না হলে মৃত্যুর সমান বয়সী হওয়া!

ভীত সন্ত্রস্ত আমি পালাতে চাই।
পিছনের গলি খুঁজি। লাল বাউলা চুলের উন্মাদ
আমার করুণ দশা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
কেঁপে ওঠে জলসা ঘর, হেরেমখানা, আস্তাবল,
সরাইখানা, বিচারালয় ও গির্জা!

আমি পালানোর পথ খুঁজি।

লাল বাউলা চুলের উন্মাদ আমার দুর্দশা
দেখে বাড়িয়ে দেয় তার হাতের পেয়ালা।
হেমলকের রসে আমার মুখ দেখে আমি আঁতকে উঠি।

স্পষ্ট দেখতে পাই কপালের ঠিক
মাঝামাঝি জায়গায় আদি বৃক্ষের ছায়া।

‘না না, এটা আমি নই’ ব’লে আমি পালানোর পথ খুঁজি।

আকস্মিক শেকল পায়ে জড়িয়ে নাচতে থাকে
লাল বাউলা চুলের উন্মাদ।
হাতে থাকা মাটির পাত্রের দিকে আমাকে
ইঙ্গিত করেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন তিনি।

তারপর একবার আকাশ পানে আরেকবার আমার
কপালের দিকে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে ওঠেন উন্মাদ।
শেকল ভাঙতে ভাঙতে বলতে থাকেন
‘নো দাইসেলফ! নো দাইসেলফ!’
ভীতসন্ত্রস্ত আমি পালানোর পথ খুঁজি!

The post এ নগরীর আমি কেউ নই appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3hjgO1v

No comments:

Post a Comment