মহামারি করোনা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। এ প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে একবার মুক্ত হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। চীনে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশের শরীরে নতুন করে করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই শতাধিক মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। খবর এসেছে জাপান ও ইরান থেকেও। এমনকি ভারতেও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে।
এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের কপালে যেমন চিন্তার ভাঁজ ও অস্বস্তি, তেমনি সাধারণ মানুষদের মধ্যেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। একাধিকবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও কেন আবার রোগে পড়া!
রোগ কেন ফিরছে?
ভারতের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী জানান, মূলত দুটি কারণে এটি হতে পারে- হয় রোগটা আবার হয়েছে, অর্থাৎ রোগের শিকড় শরীরেই ছিল। নয়তো ভাইরাস নিজেকে পাল্টে নতুনরূপে দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, চিকিৎসা চলাকালীন যখন ওষুধে জীবাণুতে লড়াই হয়, জীবাণুরা চেষ্টা করে নিজেদের মিউটেট করে ওষুধকে হারাতে। কিছু জীবাণু তা করেও ফেলে। ফলে রক্তে এরা বেঁচে থাকে। প্রথমবার রোগ সারার ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর আবার ফিরে আসে একটু বাড়াবাড়ি রূপে। কোভিডের কোনো ওষুধ নেই। ফলে ভাইরাস শরীরে ঢুকলে তার সঙ্গে লড়াই করে শরীরের অ্যান্টিবডি। প্রথম লড়াইয়ে ভাইরাস দমে গেলেও নিঃশেষ হয় না। তখন হয়তো ভাইরাস ও অ্যান্টিবডি থেকে যায় পাশাপাশি। যখন সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে, ফের মাথাচাড়া দেয় ভাইরাস। রোগ ফিরে আসে। আর যদি অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়তে লড়তে ভাইরাস মিউটেট হয়ে যায়, তাহলে যারা নিজেদের পাল্টাতে পারল না তারা মরে গিয়ে রোগ তখনকার মতো সারলেও পরিবর্তিত ভাইরাসগুলো আবার সময়ের সঙ্গে বংশবৃদ্ধি করে এবং রোগ হিসেবে ফিরে আসে। তখন কী কারণে রোগ ফিরে এল তা সঠিক ভাবে জানতে হলে রোগীর শরীর থেকে ভাইরাস নিয়ে তার জেনেটিক ম্যাপিং করতে হবে।
কাদের রোগ ফিরবে, কাদের নয়:
অমিতাভ নন্দীর মতে, নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। তবে যাদের সংক্রমণ হালকা হয় ও উপসর্গ দেখা দিতে কিছুটা সময় পার হয়ে যায় তাদের দ্বিতীয়বার রোগে পড়ার আশঙ্কা কম। কারণ ততদিনে ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে লড়তে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তারাই রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে এই সুবিধা সব সময় পাওয়া যায় না।
সুস্থ হওয়ার কত দিন পর স্বাভাবিক জীবন?
অমিতাভ নন্দী বলেন, রোগ ভালো হওয়ার দুটি রূপ। একটি উপসর্গ কমে রোগী সুস্থ হয়ে গেলেন। অপরটি ভাইরাস নির্মূল হল। শরীর যতক্ষণ না ভাইরাসমুক্ত হচ্ছে, আশঙ্কা থেকেই যায় যে আবার রোগে পড়তে পারেন বা রোগ ছড়াতে পারেন। তবে নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি। আসলে এই রোগের কোনো ওষুধ নেই বলেই সমস্যা হচ্ছে। অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়াইয়ে ভাইরাসের মাত্রা কমে, কিন্তু সব সময় নির্মূল হয় না।
কোন পরীক্ষায় জানা যাবে?
আরটিপিসিআর পরীক্ষা করলে শরীরে ভাইরাস আছে কিনা জানা যায়। তবে এই পরীক্ষা শেষ কথা বলবে সেটাও নয়। কাজেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসা মাত্র মেলামেশা করা ঠিক নয়। অন্তত দু’তিন মাস কড়া নজরদারিতে থাকতে হবে। ঘন ঘন টেস্ট করাতে হবে। তবে বলা যাবে তিনি স্বাভাবিক জীবনে কবে নাগাদ ফিরতে পারবেন। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
The post যাদের দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3fuNUKc
No comments:
Post a Comment