পত্রদূত ডেস্ক: খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতে করছিলেন কয়েক শ মানুষ। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি ট্রলার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সাংসদ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। বাঁধে কাজ করা উত্তেজিত জনতা সাংসদকে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকেন ট্রলারের দিকে। বাধ্য হয়ে সেখান থেকে ট্রলার নিয়ে চলে যান সাংসদ। পরে অবশ্য ফিরেও এসেছেন।
তবে সাংসদ মো. আক্তারুজ্জামান দাবি করেছেন, তাঁকে বহনকারী ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারা হয়নি। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষ চান টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর ভাঙনে তাঁরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভাঙন এলাকায় কাজ করছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে গেলে তাঁকে (সাংসদ) দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁদের ওই দাবি যৌক্তিক। বারবার বাঁধ ভাঙে আর বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে তাঁদের কাজ করতে হয়। এ কারণে সাংসদের ওপর তাঁদের ক্ষোভও বেশি। পরে ওই এলাকায় নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধের কাজ করা হয়েছে।
বাঁধে কাজ করা কয়েকজন মানুষের কাছ থেকে জানা গেছে, ইয়াসের পর ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের লোনাপানিতে। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে গত বুধবার ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নিয়মিত জোয়ারভাটা আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার দীর্ঘ এক যুগ পর আবার এমন দুর্ভোগে পড়েছে। চার দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন এলাকার মানুষ।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংসদ একটি ট্রলারে করে ওই ভাঙা বাঁধের স্থানে যান। যখনই তাঁর ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তে যায়, তখনই কাঁদা ছুড়তে শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষগুলো। বারবার মাইকে ঘোষণা করেও তাঁদের নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাঁদা ছুড়ে মারার একপর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে নদীর অপর পাড়ে চলে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর কাজ করতে থাকা মানুষকে শান্ত করা হলে আবার সাংসদ সেই ভাঙা বাঁধের কাছে যান।
এ সময় সাংসদ মাইকে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু সেটিও পছন্দ হয়নি কাজ করতে থাকা সাধারণ মানুষের। সাংসদ কাজে নামার পর অধিকাংশ মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান।
সাংসদের ওপর ক্ষোভের কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন সাংসদ। তাঁর আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের ওই ঠিকাদারির কাজ দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধের কাজের মান ভালো হয় না। তাই জোয়ারের পানি সামান্য বাড়লেই ভেঙে যায় বাঁধ। আর দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।
সাংসদের ট্রলারে কাঁদা ছোড়ার ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাঁধের কাছে কেবল ট্রলার ভিড়েছে, এমন সময় সাংসদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো কাঁদা ছোড়া হচ্ছে। টিকতে না পেরে পিছু হটছে ট্রলার। মাইকে উত্তেজিত মানুষকে শান্ত হওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন একজন। সাংসদের ট্রলার ফিরে যেতে দেখে হাততালি দেওয়ার শব্দও শোনা যায় ভিডিওতে।
সকাল থেকে ভাঙা বাঁধের কাছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করছিলেন কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছোট ভাই জি এম আবদুল্লাহ আল মামুন, বর্তমান নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ আরও অনেকেই। ঘটনাটি তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন। মানুষের এমন আচরণে বিস্মৃত হয়েছেন তাঁরা।
এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গেই তাঁরা কাজ করছিলেন, এমন সময় সাংসদ এসেছেন শুনেই দেখতে পান সাধারণ মানুষ কাঁদা ছুড়ে মারছে। এতে সাংসদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাঁদা লাগে। চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা পর মানুষ একটু শান্ত হলে সাংসদ আবার বাঁধের কাছে এসে সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ করে বক্তব্য দিয়ে কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন। তবে এরপর বাঁধের কাজ আর হয়নি। এ কারণে আজ বাঁধ পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। তবে ওই ঘটনা না ঘটলে বাঁধ পুরোপুরি মেরামত হয়ে যেত।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ভুল-বোঝাবুঝির কারণে একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। সাংসদ বাঁধের কাছেই আছেন।
The post কয়রায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ বাধার কাজে নিয়োজিত জনগন কাঁদা ছুড়লেন এমপির ট্রলারে appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2RbqCmr
No comments:
Post a Comment